লিওনেল মেসি
১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্ব জয়ের স্বাদ উপহার দিয়েছিলেন মারিও কেম্পেস। এরপর ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার নৈপুণ্যে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের নজির গড়ে আলবিসেলেস্তেরা। তারপর কেটে যায় তিন দশকেরও বেশি সময়। কিন্তু বিশ্বমঞ্চে শ্রেষ্ঠত্বের সেই মুকুট যেন অধরাই থেকে যায় আর্জেন্টিনার জন্য। এই সময়ে শিরোপার খুব কাছাকাছি পৌঁছালেও হৃদয় ভাঙার গল্প নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় কেম্পেস ম্যারাডোনার উত্তরসূরিদের। অবশেষে ২০২২ সালে জাদুকর লিওনেল মেসির হাত ধরে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের আক্ষেপ ঘুচে আর্জেন্টিনার। বিশ্বকাপের পর চোটের কারণে জাতীয় দলের জার্সিতে কিছুটা অনিয়মিত দলটির প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি।
সর্বশেষ কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করেন এলএম টেন। ১৫ জুলাই কলম্বিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন বার্সেলোনার সাবেক এই তারকা ফরোয়ার্ড। যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া কোপা আমেরিকায় ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের পর থেকেই আর কোনো ম্যাচ খেলেননি লিওনেল মেসি। তবে সেই চোট কাটিয়ে ইন্টার মিয়ামির জার্সিতে ঠিকই ফিরেছেন বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা এই তারকা। মেজর সকার লিগটির জার্সিতে ফিরেই দারুণ সময় কাটাচ্ছেন লিওনেল মেসি।
কোপা আমেরিকার সেই ফাইনাল জয়ের পর দীর্ঘ ২ মাস ২ দিন মাঠের বাইরে ছিলেন ২০২২ বিশ্বকাপ জয়ের এই মহানায়ক। এরপর ইন্টার মিয়ামির জার্সিতে ফিরেই নিজের জাত চেনান এলএম টেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর জোড়া গোল করে ফেরাটাকেও স্মরণীয় করে রাখেন তিনি। তার জোড়া গোলের সৌজন্যেই মেজর লিগ সকারে নিজেদের মাঠে ইন্টার মিয়ামি ৩-১ ব্যবধানে পরাজিত করে ফিলাডেলফিয়াকে।
শুধু তাই নয়? গত বৃহস্পতিবার ‘সাপোর্টারস শিল্ড’ টুর্নামেন্টের ফাইনালেও দুই গোল করেন লিওনেল মেসি। আর তাতেই লোয়ার ডটকম ফিল্ডে মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কলম্বাস ক্রুকে ৩-২ গোলে হারিয়ে নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘সাপোর্টারস শিল্ড’ জয়ের নজির গড়ে ইন্টার মিয়ামি। ৩২ ম্যাচে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে ‘সাপোর্টারস শিল্ড’ ট্রফি জিতে মেসির দল। ২০২০ সালে এমএলএসে পা রাখার পর এই টুর্নামেন্টে এটিই তাদের প্রথম ট্রফি।
১৬টি ভিন্ন দল এখন পর্যন্ত এই ট্রফি জয়ের রেকর্ড গড়ে। সবচেয়ে বেশি চারবার করে জিতেছে এলএ গ্যালাক্সি আর ডিসি ইউনাইটেড। এমএলসে ‘সাপোর্টারস শিল্ড’ দুটি মূল ট্রফির একটি। অন্যটি হলো এমএলএস কাপ। মৌসুমের ৩৪ ম্যাচজুড়ে সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফর্ম করা দল পায় ‘সাপোর্টারস শিল্ড।’
ইন্টার মিয়ামির এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ফলে লিওনেল মেসি তার ক্যারিয়ারের ৪৬তম ট্রফি জয়ের রেকর্ড গড়েন। এর আগে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে সর্বোচ্চ ট্রফি জয়ের স্বাদ পাওয়া মেসি এখন কেবলই নিজেকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। মেসির পর সবচেয়ে ৪৩ শিরোপার মালিক তারই সাবেক ক্লাব সতীর্থ বার্সেলোনার ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাক দানি আলভেজ। তবে মেসির সামনে আরও এক শিরোপা জয়ের হাতছানি।
এ প্রসঙ্গে মেসি বলেন, ‘পয়েন্ট রেকর্ড আমার কাছে সেকন্ডারি, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্লে-অফে ভালো করা। প্রথমে আমাদের তিনটি ম্যাচ পেরোতে হবে, কিন্তু এরপর এলিমিনেশন কিংবা যেকোনো কিছুই হতে পারে। আমাদের এই মুহূর্তে বড় সুবিধা হচ্ছে (আসন্ন ম্যাচ) আমরা ঘরের মাঠে খেলতে পারব। যেখানে আমরা অনেক শক্তিশালী, তবে এখনও আমরা যে জিততে পারি, সেটা এবারও প্রমাণ করতে হবে।’
চলতি মৌসুমে মিয়ামির ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের মূল কারণ মেসি-সুয়ারেজ জুটি। লিগে মিয়ামির মোট ৭২ গোলের ৩৫টিই এসেছে এই দুই তারকার কাছ থেকে। চোটের কারণে মিয়ামির হয়ে অনেক ম্যাচ মিস করলেও লিগে মেসির গোল এখন ১৭টি। গোলে সহায়তা করেন আরও ১৫টিতে। সুয়ারেজের গোল ১৮টি। ‘সাপোর্টারস শিল্ড’ জেতা মেসির চোখ এখন এমএলএস কাপে। ইস্টার্ন কনফারেন্সের শীর্ষ দল হওয়ায় মিয়ামি প্লে-অফে ঘরের মাঠে খেলবে। যে ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সময় ২৬ অক্টোবর, শনিবার।
কিন্তু লিওনেল মেসির মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) প্লে-অফে অভিষেকের ম্যাচটির সঙ্গে যেন মিয়ামি-ফ্লোরিডার অন্য ক্রীড়া সূচির জট না লাগে, তাই সেটি একদিন এগিয়ে নিউইয়র্কের সময় ২৫ অক্টোবর আয়োজন করা হচ্ছে। শুধু সূচি পরিবর্তন করেই অবশ্য থেমে থাকেনি এমএলএস। মেসির অভিষেক যেন সাধারণ মানুষ যেন বেশি সম্ভব মানুষ দেখতে পারেন, সেজন্য নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে ২৫ হাজার বর্গফুটের বিশাল পর্দায় দেখানো হবে ইন্টার মিয়ামির সেই প্লে-অফ ম্যাচ।
মিয়ামিতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মেসি এবার জাতীয় দলের জার্সিতেও ফিরছেন। চলতি মাসে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুটি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা। আগামী ১১ অক্টোবর ভেনেজুয়েলা এবং ১৬ অক্টোবর বলিভিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেন লিওনেল স্কালোনি। সেই দলে মেসিকে রেখেছেন তিনি। এদিকে, আগামী ২৯ নভেম্বর ১২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে মেসির সাবেক ক্লাব বার্সেলোনা। এটি উদ্যাপন করতে ইতোমধেই বড় ধরনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে স্প্যানিশ ক্লাবটি।
সে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মেসি। বার্সার আইকনদের কথা ভাবলেই সবার আগে আসে এলএম টেনের নাম। অনুষ্ঠানে তার যোগদানকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছে বার্সা কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে তার বিদায় ঘিরে যে নাটকীয় পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে, তাকে বাড়তি সম্মান জানাতে চায় স্প্যানিশ ক্লাবটি।