মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
অবশেষে অবসরের ঘোষণাই দিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজ শুরুর দুইদিন আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আভাস দিয়েছিলেন এই সিরিজের পরই টি২০ ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন তিনি। অবশেষে সেটিই হয়েছে। মঙ্গলবার দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলনে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদুল্লাহ জানিয়েছেন, হায়দরাবাদে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ খেলে এই ফরম্যাট থেকে বিদায় নেবেন তিনি।
২০০৭ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোয় ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে যাত্রা শুরু করেন মাহমুদুল্লাহ। একই বছর সেপ্টেম্বরে কেনিয়ার বিপক্ষে তার যাত্রা শুরু আন্তর্জাতিক টি২০-তে। এর প্রায় দুই বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটাউনে টেস্ট অভিষেক হয় তার। তবে সবার আগে ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে টেস্ট থেকেই অবসরে গেছেন তিনি।
২০২২ সালের মাঝামাঝি টি২০ ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব ছাড়তে বাধ্য হন একটানা ব্যর্থতার কারণে। এরপর দল থেকেই বাদ পড়েন এবং ২০২২ সালের টি২০ বিশ্বকাপে দলে জায়গা হয়নি তার। সে সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে তাকে অবসর নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও সেটি তিনি প্রত্যাখ্যান করেন এবং পারফর্ম করে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অনুপস্থিতিতে বেশ কয়েকজনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও তারা ভালো করতে পারেননি। ওয়ানডে দল থেকেই বাদ পড়েন তিনি। সেই ফরম্যাটেও তার পজিশনে একাধিক তরুন ক্রিকেটার সুযোগ পেয়ে ভালো করতে ব্যর্থ হন। দেশের ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকরা তখন মাহমুদুল্লাহকে ফেরাতে মানববন্ধন, সমাবেশ ও মিছিলও করে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ভালো করছিলেন। শেষ পর্যন্ত দলে ফেলেন মাহমুদুল্লাহ।
দলে ফেরার পর বেশ ভালো পারফর্ম করছিলেন মাহমুদুল্লাহ। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের চরম ব্যর্থতার মধ্যেও উজ্জ্বল ছিলেন এবং একটি সেঞ্চুরিও করেন। কিন্তু টি২০ ফরম্যাটে কিছু ম্যাচ ভালো করলেও চলতি বছর একেবারে ভালো যায়নি তার।
বিশেষ করে এ বছর জুনে অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপে চরমভাবে ব্যর্থ ছিলেন মাহমুদুল্লহ রিয়াদ। দলও আহামরি কিছু করতে পারেনি। সে কারণে চারদিকে আলোচনা শুরু হয় দুই অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ হয়তো অবসর নেবেন বিশ্বকাপ শেষে। তবে সেটি তারা করেননি।
এ বছর ১৭ টি২০ খেলে মাত্র ২ হাফ সেঞ্চুরি পেলেও বাকি ম্যাচগুলোয় তেমন কিছু করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। সর্বশেষ ৯ ইনিংসে মাত্র ৯৯ রান করতে পেরেছেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফিল্ডিংয়েও শিথিলতা এসেছে তার। সবমিলিয়ে তার টি২০ ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে তৈরি হয় সমালোচনা।
সেই আলোচনার পালে হাওয়া দেয় সাকিব আল হাসানের অবসর ঘোষণা। এবার ভারত সফরে ২ টেস্টের সিরিজ খেলেছেন সাকিব। কানপুরে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগের দিন তিনি জানিয়ে দেন, আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে অবসর নিয়েছেন। সর্বশেষ বিশ্বকাপেই খেলেছেন বাংলাদেশের জার্সিতে শেষ টি২০। একইসঙ্গে টেস্ট থেকেও অবসর নেওয়ার সময় জানিয়ে দেন তিনি।
সাকিবের অবসর নেওয়াতে মাহমুদুল্লাহও সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পেরেছেন। টি২০ সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক শান্ত জানান ইতোমধ্যেই বিসিবির সঙ্গে অবসর বিষয়ে আলোচনা করে রেখেছেন মাহমুদুল্লাহ। ভারতের বিপক্ষে তেমন ভালো করতে না পারলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন তিনি সেই আভাস দেন শান্ত।
গোয়ালিয়রে সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে মাত্র ১ রানে বিদায় নেন মাহমুদুল্লাহ। এরপর দিল্লিতে বুধবার সিরিজের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচের আগেই ঘোষণা দিলেন এই ফরম্যাট থেকে অবসরের।
ওয়ানডে থেকেও অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার ইচ্ছা আছে তার। তবে তার আগে দুটি সিরিজে (আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ) কেমন করবেন সেটার ওপর নির্ভর করছে এই ফরম্যাট থেকে কবে বিদায় নেবেন সে বিষয়টি।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ১৩৯ টি২০ খেলেছেন মাহমুদুল্লাহ। ২৩.৪৮ গড় ও ১১৭.৭৪ স্ট্রাইকরেটে ২৩৯৫ রান করেছেন ৮ ফিফটি হাঁকিয়ে। উইকেট নিয়েছেন ৪০টি। দেশকে সর্বাধিক ৪৩ টি২০-তে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বে ১৬ জয় পাওয়ার পাশাপাশি ২৬ পরাজয় দেখেছে বাংলাদেশ।
ওয়ানডেতে ২৩২ ম্যাচ খেলে ৪ সেঞ্চুরি ও ২৮ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৫৩৮৬ রান। উইকেট আছে ৮২টি। এই ফরম্যাটে নেতৃত্ব না দিলেও ৬ টেস্টে অধিনায়কত্ব করেছেন এবং ১ জয়ের পাশাপাশি ৪টি হার ও ১টি ড্র দেখেছেন। ৫০ টেস্টে মাহমুদুল্লাহ ৩৩.৪৯ গড়ে ৫ সেঞ্চুরি, ১৬ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ২৯১৪ রান। বল হাতে নিয়েছেন ৪৩ উইকেট।
মামুন/শহিদ