নেইমার
গড়ন হাল্কা-পাতলা, ছিপছিপে। ময়দানি লড়াইয়ে প্রায়শই দেখা যায় প্রতিপক্ষের গুঁতো খেয়ে মাঠে লুটিয়ে পড়ছেন। এরপরও অদম্য দম, ক্যারিশমা, কৌশল আর সহজতার প্রতিভায় প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নেইমার। ব্রাজিলে যুগে যুগে এসেছে পেলে, গ্যারিঞ্চা, মারিও জাগালো, ভাঁভা, জোয়ারজিনহো, কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা, জিকো, রোমারিও, বেবেতো, রোনাল্ডো, রিভাল্ডোর মতো বিশ্বখ্যাত তারকারা। সেই ধারাবাহিকতায় মাঠ মাতিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই সুপারস্টার।
২০১৩ সালের মধ্যেই বিশ্বকাপ বাদে বিশ্বের সব গৌরবময় ট্রফি জিতে নেন নেইমার। পরের বছর ২০১৪ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জিততে পারলেই ইতিহাসের সেরাদের একজন হতে পারতেন। এ লক্ষ্যে কক্ষপথেই ছিলেন। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার জুনিগার মারাত্মক আঘাতে পিঠের ইনজুরিতে পড়েন নেইমার। ফলস্বরূপ সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে হেক্সা জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় সেলেসাওদের। সেই ধকল এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন নেইমার। তিনি আর পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। যে কারণে ব্রাজিলেরও আর বিশ্বকাপ জেতা হয়নি।
নেইমার এখনো সেই ইনজুরির ভয়াবহত বয়ে বেড়াচ্ছেন। পূর্ণ ফিটনেস ফিরে পাননি। যে কারণে প্রায়শই মাঠের বাইরে থাকতে হয়। এখনো আছেন। আর তাই ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচেও খেলতে পারছেন না। বাম হাঁটুর গুরুতর ইনজুরিতে প্রায় এক বছর মাঠের বাইরে। প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন মাঠে ফিরতে। এর মাঝে ভক্তদের কিছুটা আশ্বস্ত করেছেন। সৌদি আরব ক্লাব আল হিলালের দলীয় অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন নেইমার।
২০২৩ সালের আগস্টে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন থেকে আল হিলালে এসেছেন। ওই বছরের অক্টোবরে ব্রাজিলের হয়ে খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে চলে যান। অস্ত্রোপচারের পর গত জুলাই থেকে ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন করেন। এবার যোগ দিয়েছেন সতীর্থদের সঙ্গে। ঘাম ঝরিয়েছেন, বলেও কিক নিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নেইমার তার অনুশীলনের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমি ফিরেছি। দলে ফিরতে পেরে আমি খুশি। এখন শুধুই আনন্দ।’ নেইমারের ফিটনেসের উন্নতির আভাস পেলেও তাকে ছাড়াই অক্টোবরের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দল ঘোষণা করেছেন ব্রাজিল কোচ ডরিভাল জুনিয়র। এমন অবস্থায় অনুশীলনে ফিরলেও নেইমার কবে নাগাদ খেলায় ফিরতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই। আর ফিরলেও আবার যে ইনজুরিতে পড়বেন না সেই নিশ্চয়তাও নেই। যে কারণে ফুটবলবিশ্বে এখন একটা বিষয় চাউর হয়ে গেছে, তাহলে কি ‘নেই’ হয়ে যাচ্ছেন নেইমার!
নেইমারকে ছাড়া ব্রাজিল ঠিক কতখানি ছন্নছাড়া, সেটা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ থেকেই বোঝা যাচ্ছে। দেশটির কোচ ডরিভাল জুনিয়র দায়িত্ব নেয়ার পর জানান, নেইমারকে ছাড়াই মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে তার দলকে। মূলত ইনজুরিতে আক্রান্ত খেলোয়াড়ের প্রতি বাড়তি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতেই এমন মন্তব্য নতুন কোচের। ব্রাজিল কোচ বলেন, আমি এই গ্রহের সবচেয়ে সফল দলের প্রতিনিধিত্ব করছি। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল খুবই শক্তিশালী।
আমরা জয়ের পথ দেখা শিখেছি ব্রাজিলিয়ান ফুটবল থেকেই। সেসব মুহূর্ত ফিরিয়ে আনা দরকার। এর আগে ফিলিপ, তিতি ও দিনিজের দল বাছাই নিয়ে কথা হয়েছে। আমার ক্ষেত্রে তেমনটা হবে না। এটা ডরিভালের দল না। এটা ব্রাজিলের মানুষের দল। ব্রাজিলের কথা উঠলে নেইমার প্রসঙ্গ আসবেই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু নেইমার এখন ইনজুরিতে আছে, তাকে ছাড়াই আমাদের খেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তবে সে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন। তার কাছ থেকে আমাদের সেরাটা নিতে হবে। অবশ্য নেইমারের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কের ইতিহাসও আছে ডরিভালের।
২০১০ সালে নেইমার সান্টোসে খেলাকালীন কোচ ছিলেন ডরিভাল। সে সময়ে ঘরোয়া লিগের এক ম্যাচে পেনাল্টি নেয়া নিয়ে দু’জন বিবাদে জড়িয়েছিলেন। পরের ম্যাচে নেইমারকে বাদ দেন ডরিভাল। দু’জনের দ্বন্দ্ব মেটাতে না পারায় ক্লাব বাধ্য হয়ে ডরিভালকে বরখাস্ত করে। অবশ্য ডরিভালের দাবি, পুরাতন সেসব ইস্যুতে কোনো সমস্যাই নেই দুজনের মধ্যে।
এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, যতদিন নেইমার সুস্থ ও মনোযোগী থাকবে ততদিনে তাকে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমার সঙ্গে তার কখনো কোনো সমস্যা ছিল না। বরং আমাদের সম্পর্ক সবসময় ইতিবাচক ছিল।