ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১

রেকর্ড গড়া জয়ে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করল শ্রীলঙ্কা 

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রেকর্ড গড়া জয়ে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করল শ্রীলঙ্কা 

গলে স্মরনীয় জয়ের আনন্দ শ্রীলঙ্কার

শ্রীলঙ্কান বোলাররা যেভাবে মুড়ি-মুড়কির মতো উইকেট নিচ্ছিলেন, তাতে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস পরাজয় ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। গলে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে রানের চাপায় পিষ্ট কিউইরা হেরে গেল চার দিনেই। ইনিংস ও ১৫৪ রানে জিতে শ্রীলঙ্কা ২-০ ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল। 

নিউজিল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে শ্রীলঙ্কা গড়েছে আরও এক রেকর্ড। ২০০০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত গলে ২৬ টেস্ট জিতেছে লঙ্কানরা। যা গত ২৪ বছরের হিসাবে নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সর্বোচ্চ টেস্ট জয়। শ্রীলঙ্কা এই সময়ে (গত ২৪ বছরে) গলে খেলেছে ৪৪ টেস্ট।  দুইয়ে থাকা ইংল্যান্ড সবশেষ ২৪ বছরে লর্ডসে জিতেছে ২৫ টেস্ট। এই ভেন্যুতে এই সময়ে ইংলিশরা খেলেছে ৪৩ টেস্ট।

রেকর্ডের এখানেই শেষ নয়, টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় জয়। ১৯৯৮ সালে এই গলেই স্বাগতিকরা জিতেছিল ইনিংস ও ১৬ রানে। অন্যদিকে প্রায় ৬ বছর পর টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জায় পড়ল কিউইরা। এই অভিজ্ঞতা তাদের সর্বশেষ হয়েছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে, দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংস ও ১৬ রানে হেরেছিল। এ নিয়ে টানা তিনটি টেস্ট জিতল শ্রীলঙ্কা। ইংল্যান্ড সফরের শেষ টেস্ট জেতা দলটি গলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ জিতেছিল ৬৩ রানে। এর আগে কিউইদের একবারই হোয়াইটওয়াশ করতে পেরেছিল লঙ্কানরা, ২০০৯ সালে ঘরের মাঠে দুই টেস্টের সিরিজে। 

দারুণ এই সাফল্যের পর অন্তবর্তী প্রধান কোচ গ্রেট সনাথ জয়সুরিয়ার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে লঙ্কান বোর্ড (এসএলসি)। যেটা ওয়ার, তাই হয়েছে। শুক্রবার তৃতীয় দিন শেষে ম্যাচটি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, গলে এই টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস ব্যবধানে হারা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট ১৯৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে নিউজিল্যান্ড। ইনিংস হার এড়াতে তখনো কিউইদের করতে হতো ৩১৫ রান।  

দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৯ রানে আজ চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে নিউজিল্যান্ড। ইনিংস পরাজয় এড়াতে তখনো ৩১৫ রান দূরে কিউইরা। রানের পাহাড়ে পিষ্ট নিউজিল্যান্ড চতুর্থ দিনের খেলা শুরুর অল্প সময় পরই হারায় ষষ্ঠ উইকেট। ৪৫তম ওভারের তৃতীয় বলে টম ব্লান্ডেলকে এলবিডব্লিউ করেন নিশান পেইরিস। যেখানে পেইরিস এই টেস্ট দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন। 

৬৪ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬০ রান করে ব্লান্ডেল যখন আউট হয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের স্কোর হয়েছে ৪৪.৩ ওভারে ৬ উইকেটে ২১৬ রান।  যেখানে ষষ্ঠ উইকেটে ব্লান্ডেল ও গ্লেন ফিলিপস  গড়েন ৯৫ রানের জুটি। এই জুটিতে তাঁরা খেলেছেন ১০৫ বল। ব্লান্ডেল আউট হলেও ফিলিপস খেলতে থাকেন ওয়ানডে মেজাজে। ৬৬ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি তুলে নেন ফিলিপস। নিউজিল্যান্ডের এই ব্যাটারকে ফিরিয়ে অভিষেক টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন পেইরিস।

ফিলিপস ৯৯ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৮ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের এই মিডল অর্ডার ব্যাটারের পর টিম সাউদিও দ্রুত ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন। ৬৫তম ওভারের তৃতীয় বলে কিউই অধিনায়ক সাউদিকে বোল্ড করেন প্রবাথ জয়াসুরিয়া। ফিলিপস, সাউদি দুই ব্যাটারকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের স্কোর হয়ে যায় ৬৪.৩ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯১ রান। 

শ্রীলঙ্কার জয় যখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখন সেটাকে আরও বেশি দীর্ঘায়িত করেন মিচেল স্যান্টনার। ৯৭ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছেন স্যান্টনার। নিউজিল্যান্ডের এই বাঁহাতি ব্যাটারকে ফিরিয়েই সফরকারীদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছেন পেইরিস। ৮১.৪ ওভারে কিউইরা অলআউট হয়েছে ৩৬০ রানে। ১১৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৭ রান করেন স্যান্টনার। দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন ফিলিপস। 

ম্যাচসেরা হয়েছেন কামিন্দু মেন্ডিস। প্রথম ইনিংসে ২৫০ বলে ১৮২ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন কামিন্দু। ১৬ চার ও ৪ ছক্কা মেরেছেন লঙ্কান এই বাঁহাতি ব্যাটার। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সিরিজসেরা হয়েছেন জয়াসুরিয়া। সিরিজে সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট নিয়েছেন লঙ্কান এই বাঁহাতি স্পিনার।

গলে দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ৫ উইকেটে ৬০২ রানে প্রথম ইনিংসের খেলা ঘোষণা করে লঙ্কানরা। কামিন্দু মেন্ডিসের পাশাপাশি কুশল মেন্ডিসও পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ৮৮ রানে। তখন জয়াসুরিয়া ও পেইরিস নেন ৬ ও ৩ উইকেট।

ভারতের মাটিতে আসন্ন সিরিজের বড় চ্যালেঞ্জের আগে পরপর দুই পরাজয়ে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে বড় ধাক্কা খেল নিউজিল্যান্ড। তিন নম্বরে থেকে সিরিজ শুরু করা কিউইরা ৩৭.৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে নেমে গেছে। প্রথম ম্যাচ জিতে তিন নম্বরে ওঠা শ্রীলঙ্কা এখন ৫৫.৫৬ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করেছে।

 

মিরাজ

×