ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

‘টাইগার রবি’ কি সত্যিই মারধরের শিকার?

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘টাইগার রবি’ কি সত্যিই মারধরের শিকার?

টাইগার রবি

কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে ভারতীয় দর্শকদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় আহত হন বলে জানিয়েছিলেন টাইগার রবি। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে কানপুর পুলিশ। পরে রবি নিজেও এক ভিডিওতেও বলেছেন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। যা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর মাঝেই হাতাহাতির ঘটনাটিকে সত্য দাবি করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন এই ক্রিকেটভক্ত।

যেখানে তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিক এবং মিডিয়ার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মূলত, মিডিয়া তার কথাগুলোকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রবি। এ ছাড়াও ক্রিকেট মাঠে টাইগার রবিকে আর দেখা যাবে না বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে রবি লিখেছেন, আমার আল্লাহর কাছে সবকিছু ছেড়ে দিলাম। বিচারটাও আমার রবের হাতে ছেড়ে দিলাম। আমার আল্লাহ নিশ্চয়ই ওপর থেকে দেখেছেন, আমার সাথে কি ঘটেছিল।

তিনি লিখেছেন, আমি যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাচ্ছি, আমি আমার অসুস্থ মায়ের কসম কেটে বলছি, আমি বিন্দু পরিমাণও মিথ্যার আশ্রয় নিইনি। আমাকে আঘাত করা হয়েছে, এটাই সত্য। এটাই ঘটেছিল। দুনিয়া উল্টে গেলেও এই সত্যটাকে আমি অস্বীকার করতে পারবো না। কারণ, আমি আমার মায়ের কসম কেটে আপনাদের থেকে যাওয়ার আগে সত্যটা বুক ফুলিয়ে বলে গেলাম। 

রবি জানিয়েছে, ভারতীয় প্রশাসন তাদের দেশের সম্মান বাঁচাতে আমাকে তাদের মতো করে উপস্থাপন করেছে। পোস্টে লিখেছেন, ভারতের প্রশাসন ও আমার দেশের সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমি হেরে গেছি। ভারতীয় প্রশাসন তাদের দেশের সম্মান বাঁচাতে ঠিক যেভাবে আমাকে উপস্থাপন করেছে, আমার দেশের সাংবাদিক ভাইরাও আমার কথা না শুনে, সত্যটা না খুঁজেই আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।

‘আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ প্রিয় গণমাধ্যমকর্মী ভাইয়েরা। আপনারাই আমাকে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করেছিলেন, আর আপনারাই মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার সব কেড়ে নিলেন। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপনাদের প্রতি। কোন একদিন হয়তোবা সত্যটা নিজেরাই উপলব্ধি করবেন! সেদিন হয়তো সামান্য হলেও খারাপ লাগবে এই নগণ্য রবির জন্য।’

ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে রবি লিখেছেন, আমি চলে যাচ্ছি। আর হয়তো কখনও টাইগার রবিকে বাঘের বেশে দেখবেন না। আমার সাথে যা হয়েছে এমনটা আমার শত্রুর সাথেও জীবনে না ঘটুক।

এ ছাড়াও এই পোস্টে রবি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও কথা বলেছেন। তার ভাষ্য, হ্যাঁ, এটা সত্য। আমি অশিক্ষিত, আমার শিক্ষার অভাব ছিল। আমি শিক্ষিত মানুষদের মতো গুছিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলতে পারতাম না। আমার কথায় অনেক সময় অনেকে কষ্ট পেয়ে যেতেন। আর তাই অধিকাংশ মানুষের কাছে আমি খারাপ এবং অসভ্য ছিলাম।

‘হ্যাঁ ভাই, আমি হয়তো শিক্ষার অভাব থাকায় আপনাদের মতো সভ্য ছিলাম না। তাই, এই পুরো ঘটনাটা আপনারা আমার ‘অতীত দিয়ে বিচার করে’ আমাকে ভুল বুঝলেন! আর দেশের মানুষের কাছে আপনাদের মিডিয়ার ক্ষমতা দিয়ে এক নিমিষেই আমাকে ভিতর থেকে ধ্বংস করে দিলেন। ধন্যবাদ আপনাদের।’

আমি হয়তো ব্যক্তি হিসেবে আপনাদের কাছে খারাপ! কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ও আমার দেশের পতাকা এবং দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা আর আবেগে একবিন্দুও কমতি ছিল না। আমি আমার মাকে যেমন ভালোবাসি, বাংলাদেশ ক্রিকেট আর মিরপুর স্টেডিয়ামটাও আমার দুনিয়া ছিল।

তিনি লিখেছেন, আমাকে পুরো দেশের মানুষের কাছে মিথ্যাবাদী বানিয়ে দিয়েছেন। যদি সত্যিই আমি মিথ্যাবাদী হতাম তাহলে এতক্ষণে আমার ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার জন্য হলেও সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার ক্রিকেটেই ফিরে আসতাম। কিন্তু, আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমি মাইর খেয়েছি, আমি ব্যথাও পেয়েছি। এখনও পর্যন্ত যা যা বলেছি সব সত্য। আমার আল্লাহ সাক্ষী, উনি তো সব দেখেছেন, বিচারটাও তিনিই করবেন। কিন্তু, আমার দেশের মানুষ আমার এই আঘাতের চেয়ে তীব্র আঘাত দিয়েছে, আমাকে ভুল বুঝে ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ সবাইকে। আমাকে আর সহ্য করতে হবে না আপনাদের।

বাংলাদেশ ক্রিকেটকে শুভকামনা জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের জন্য দোয়া ও শুভকামনা। টাইগার বেশে আর হয়তো কখনও দেখা হবে না। ভালোবাসার ক্রিকেট থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। যদি কখনও নিজের মনকে আটকে রাখতে না পারি, তাহলে সাধারণ একজন দর্শক হয়ে কোনো এক গ্যালারিতে এসে বসে পড়বো রবি হয়েই।

এর আগে গতকাল শুক্রবার হাসপাতালে নেওয়ার সময় রবি জানিয়েছিলেন, সকাল থেকেই তাকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করছিলেন কয়েকজন ভারতীয় সমর্থক। মধ্যাহ্ন বিরতির পরে বাংলাদেশ দলের নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকের নাম ধরে চিৎকার করছিলেন তিনি।

‘এরপরেই রবিকে ১৪-১৫ জনের ভারতীয় সমর্থকদের একটি গ্রুপ ঘিরে ধরে এবং শারীরিকভাবে হেনস্তা করতে শুরু করে। একপর্যায়ে রবির টাইগার প্রতীক ও বাংলাদেশের পতাকাও ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করে তারা। রবি বাধা দিলে তাকে মারধর করে ভারতের ওই সমর্থকরা।’

রবি এমন দাবি করলেও বাংলাদেশ থেকে সেখানে টেস্ট ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া কয়েকজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, টাইগার রবিকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে কানপুরের কল্যাণপুর এলাকার এসিপি অভিষেক পান্ডে বলেন, পানিশূন্যতার কারণে রবি পড়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে এখন রবি ভালো আছেন। তিনি আরও জানান, মারামারির অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

শহিদ

×