ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১

সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব, কে জিতলো কে হারলো?

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব, কে জিতলো কে হারলো?

তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসান

টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকে সাকিব আল হাসানের অবসর ঘোষণার দিনক্ষণ জানানোর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি তামিম ইকবাল। কানপুরে সাকিব আজ মাঠে নেমেছেন। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলতে না পারলে সম্ভবত এটাই হতে যাচ্ছে তার শেষ টেস্ট। এই ম্যাচে তামিম আছেন ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায়। জাতীয় দলের সতীর্থ হলেও দুজনের সম্পর্ক অনেকদিন ধরেই আদায়-কাঁচকলায়।

গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই তামিম ইকবাল বেশ চাপে ছিলেন। ইনজুরি তো ছিলই, তার ওপর সাবেক বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের বক্তব্যের জের ধরে তিনি অবসর নিয়েছিলেন। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশি তিনি অবসর ভাঙেন। সুস্থ হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে মাঠেও ফিরেছিলেন। কিন্তু বিস্ময়করভাবে ভারতে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে তার খেলা হয়নি!

দলের ভারত যাত্রার আগমুহূর্তে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাকিব আল হাসানের সাক্ষাৎকার দেশজুড়ে তোলপাড় ফেলে দেয়। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি তামিমের সমালোচনা করেন। তার মনোভাবকে ‘শিশুসুলভ’ বলেন। তামিম চোট নিয়ে ক্রিকেট খেলে দেশের সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলেও বুঝিয়ে দেন। তারপর তামিমও এর পাল্টা একটি ভিডিওবার্তা দেন। সাজানো গোছানো একটা দল বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে হঠাৎ এলোমেলো হয়ে যায়। সেই আসরেই সাকিব চোখের সমস্যায় আক্রান্ত হন। সেই সমস্যা তার এখনও আছে।

তামিম বিহীন বিশ্বকাপে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশ। তৎকালীন অধিনায়ক সাকিব স্বয়ং স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ ছিল সেটি। তিনি আরও স্বীকার করেছিলেন যে, সেই সাক্ষাৎকারের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল দলের বাকিদের মাঝে। যে ইনজুরির কারণে তামিমকে তিনি প্রতারক বলতে চেয়েছিলেন, সেই অসুস্থতাই সাকিবকে গত ১২ মাস ধরে ভোগাচ্ছে। চোখের সমস্যা নিয়েই তাকে বিশ্বকাপ এবং পরবর্তী সময়ে খেলতে হয়েছে। ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স ছিল জঘন্য। সম্প্রতি চোখের সমস্যার সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে আঙুলের চোট।

দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তামিম ইকবাল এখন লাইমলাইটে, আর সাকিব আল হাসান আছেন চরম বিপদে। দেশে তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়েছে। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে হয়েছে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা। দেশে ফিরতে পারছেন না নিরাপত্তার অভাবে।

অনেকটা বাধ্য হয়ে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন সাকিব। অন্যদিকে তামিম ইকবাল এখনো মাঠে ফেরেননি। বিসিবির বর্তমান হর্তাকর্তারা তার পাশে থাকলেও তামিম আর কোনোদিন বাইশ গজে ফিরবেন কিনা- সেটাও অনিশ্চিত। তাকে বিসিবি কর্মকর্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে বলেও গুঞ্জন আছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুই সুপারস্টারের ক্যারিয়ার এখানেই শেষ কিনা- তা বলা যাচ্ছে না। তবে সাকিবের ক্যারিয়ার কানপুর টেস্টেই শেষ হওয়ার একটা শঙ্কা আছে। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা বিপক্ষে তার বিদায়ী টেস্ট খেলা অনিশ্চিত। আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে তাকে রাখা হবে কিনা- সেটাও এত আগে বলা যায় না। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা তামিমকে ইদানিং ধারাভাষ্যে মনোযোগ দিতে দেখা যাচ্ছে। এক বছরের বেশি সময় পর তিনি আদৌ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরবেন কিনা- সেটা একটা প্রশ্ন।

তৎকালীন বোর্ড সভাপতির বেঁফাস মন্তব্যই সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছিল। তারপর থেকে অনেক জল গড়িয়েছে পদ্মা-মেঘনায়। দুজনকেই বারবার এই বিষয়ে কথা বলতে হয়েছে। কিন্তু যেটা তাদের মূল কাজ- সেই ক্রিকেট খেলা থেকে দুজনেই ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছেন। এই বয়সে হয়তো তারা আরও কিছুদিন খেলতে পারতেন, হয়তো পারতেন না। তবে অনেক ক্রিকেটবোদ্ধাই মনে করেন, দুই মহাতারকার দ্বন্দ্বে আসলে ক্ষতিটা হয়েছে দেশের ক্রিকেটেরই।
 

বারাত

×