ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১

দেশের মাটিতে শেষ করতে চান সাকিব

মোঃ মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:২৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশের মাটিতে শেষ করতে চান সাকিব

লাল-সবুজের জার্সি গায়ে অনেক স্মরণীয় কীর্তির সাক্ষী সাকিব আল হাসান

৩৭ বছর পেরিয়ে ৩৮ ছুঁই ছুঁই বয়স- ১৮ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিচরণ করেছেন। ক্যারিয়ারজুড়ে অসংখ্য রেকর্ড গড়েছেন এক সময় টানা তিন ফরম্যাটে বিশে^র এক নম্বর অলরাউন্ডার হিসেবে অবস্থান করে। সেই সাকিব আল হাসান অবশেষে থেমে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ক্রিকেট বিশ^কে চমকে দিয়েছেন। জানিয়েছেন তিন ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সময়।

ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবার কানপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ বাঁহাতি অলরাউন্ডার জানিয়ে দেন, সর্বশেষ টি২০ বিশ^কাপেই তিনি বাংলাদেশের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন এই ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটে। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে যেহেতু খেলা চালিয়ে যাবেন তাই পথ খোলা রেখেছেন আবার ফিরে আসার। কিন্তু নিশ্চিত করেছেন আগামী মাসে ঘরের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজ খেলেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন তিনি। আর পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ওয়ানডে থেকেও সরে যাবেন। 

১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ২০০৬ সালের আগস্টে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করেন তিনি। পরবর্তী বছরের মধ্যেই তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন। ৩ বছরের মধ্যেই বিশে^র সেরা অলরাউন্ডার হয়েছেন এবং ২০০৯ সালের শেষদিকেই হয়ে গেছেন বাংলাদেশ দলের সব ফরম্যাটের অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর ৫/৬ বছর পর্যন্ত বেশ নির্ঝঞ্ঝাট কেটেছে সাকিবের। তবে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ^কাপ থেকেই তার আচরণ নিয়ে নানা বিতর্ক শুরু হয়। তখন থেকেই শুরু বহুমাত্রিক বিতর্ক আর সমালোচনায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাওয়া।

শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের অক্টোবরে আইসিসির কাছে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন ১ বছরের জন্য। সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েও নিজেকে বিতর্ক থেকে দূরে রাখতে পারেননি। ক্রিকেটের বাইরেও নানাবিধ ঝামেলা এমনকি শেয়ারবাজার কারসাজি ও হত্যা মামলায় পর্যন্ত নাম উঠেছে সাকিবের। সবমিলিয়ে বিতর্কের শিরোমণি তিনি। তবে বাংলাদেশে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার এতে কোনো সন্দেহ নেই। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে অন্যতম বিবেচিত তিনি।

সবমিলিয়ে ৭০ টেস্ট খেলে ৪৬০০ রান ও ২৪২ উইকেট, ১২৯ টি২০ খেলে ২৫৫১ রান ও ১৪৯ উইকেট এবং ২৪৭ ওয়ানডে খেলে ৭৫৭০ রান ও ৩১৭ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। অধিনায়ক হিসেবে ৬২ ওয়ানডেতে ২৭ জয় ও ৩৪ হার, ১৯ টেস্টে ৪ জয় ও ১৫ হার এবং ৩৯ টি২০-তে ১৬ জয়, ২৩ হার দেখেছেন তিনি। 
সাকিব গত বছর সমর্থকদের কাছেও দুয়োধ্বনি শুনেছেন। বয়সের সাথে সাথে ভালো পারফর্ম করতে পারছিলেন না এবং নানা ইনজুরি সমস্যার কারণে নিয়মিত খেলতেও পারেননি। এখন রাজনৈতিক সমস্যায় পড়েছেন, হত্যা মামলা হয়েছে বলে দেশেও ফিরতে পারছেন না। তাই কানপুরে বৃহস্পতিবার বলেছেন,‘আমার মনে হয় টি২০-তে আমি আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি, মিরপুর টেস্টে (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) খেলতে পারলে সেটি হবে আমার  শেষ টেস্ট।’ রাজনৈতিক সমস্যায় দেশে ফিরতে পারবেন কি না সেটি নিয়ে আছে সংশয়।

তাই কানপুর টেস্টও তার ক্যারিয়ারের শেষ হতে পারে। সাকিব বলেছেন,‘আমার কাছে দেশের সমর্থকদের সামনে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করাটা উপযুক্ত হবে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে এবং এই ফরম্যাটের শেষটা আমি ঘরের মাঠেই করতে চাই। আমি বিসিবির কাছে নিজের শেষ টেস্টটি মিরপুরে খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। যদি তা না হয়, তাহলে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিই আমার শেষ টেস্ট হবে। 
আমি  যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি।’ গত বছর ভারতে ওয়ানডে বিশ^কাপের আগেই সাকিব জানিয়েছিলেন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে অবসরে যাবেন। ওয়ানডে ফরম্যাটের ক্ষেত্রে সেটাই হবে। সবমিলিয়ে তাই হয়তো দেশের হয়ে ৫০ ওভারের ম্যাচ সর্বোচ্চ ৮/৯টি খেলার সুযোগ পাবেন। আর টি২০-তে অবসর কার্যকর হয়ে গেছে টানা ৯ বিশ^কাপ খেলার পর।

কিন্তু ফেরার পথও খোলা রেখেছেন। তিনি বলেছেন,‘সামনের সিরিজগুলো আমার খেলার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। এটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মশাল প্রেরণ করার সময়। বিশ^কাপে আমার সর্বশেষ টি২০ খেলে ফেলেছি। একই সময় আমি যদি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে  খেলার সুযোগ পাই, ওখানে ভালো করতে থাকি ৬ মাস এক বছর পর যদি কখনো মনে করে বিসিবি যে, না টি২০-তে আমার অবদান রাখার একটা সুযোগ আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’

×