ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১

টেস্ট ও টি-২০ থেকে সাকিবের অবসর ঘোষণা

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

টেস্ট ও টি-২০ থেকে সাকিবের অবসর ঘোষণা

বৃহস্পতিবার কানপুরে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব

মানুষের জীবন অনেকটা নাটকের মতো। ক্ষণে ক্ষণে ঘটে পটপরিবর্তন। কখনো সাফল্য, কখনো ব্যর্থতা, কখনো বা আলো আবার কখনো বা অন্ধকার। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অহংকার, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রেও এমন বলা যায় অবলীলায়। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়কের সঙ্গী হয়েছে সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা সবই।

মাঠের পারফরমেন্স দিয়ে যেমন ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করেছেন তেমনি বারংবার বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য সমালোচিতও কম হননি। সবমিলিয়ে বর্ণময় চরিত্রের অধিকারী সাকিব তার ঢংয়েই আরেকটি চমক দিয়েছেন। ৩৭ বছর বয়সী এই মহাতারকা বৃহস্পতিবার অনেকটা চমক দিয়েই টেস্ট ও টি২০ ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। 
স্বাগতিক ভারতের বিরুদ্ধে কানপুর টেস্টে মাঠে নামার আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে দুই ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। সাকিব ক্যারিয়ার শেষের ইঙ্গিতটা দিয়ে রেখেছিলেন বেশ আগেই। গত বছরের নভেম্বরে ভারতের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগেই সাকিব বলেছিলেন, খুব শিগগিরই ক্যারিয়ার শেষ করতে চান। এবার কানপুর টেস্টের আগে দিলেন সেই বিদায়ের ঘোষণা। আজ কানপুরে ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মিশন শুরু করেছে টিম টাইগার্স।

এর আগের দিন বাংলাদেশ দলের হয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আসেন সাকিব। সেখানে তিনি জানান, ইতোমধ্যে স্বল্প ঘরানার টি২০ ক্রিকেটে নিজের শেষ ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন। আর টেস্ট ক্রিকেটের বিদায়টা নিতে চান ঘরের মাঠ থেকে। আসছে অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে শেষবার বাংলাদেশের হয়ে সাদা পোশাকে দেখা যাবে সাকিবকে। তখনই শেষ হয়ে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গৌরবময় এক অধ্যায়ের।

অবসরের কথা জানিয়ে সাকিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার মনে হয় টি২০তে আমি আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি। মিরপুর টেস্টে (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) খেলতে পারলে সেটি হবে আমার শেষ টেস্ট। তবে এখনই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন না সাকিব। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবেন তিনি। দেশের মাঠ থেকে বিদায় নিতে চাইলেও সেটা নিয়ে কিছুটা জটিলতা আছে অবশ্য। দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর সাকিবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।

মামলাটি হওয়ার সময় সাকিব ছিলেন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে। ওই সফরের পর তিনি আর দেশে ফেরেনি। পাকিস্তান থেকে ইংল্যান্ডে যান তিনি কাউন্টি ক্রিকেটে খেলতে। সেখান থেকেই সরাসরি গেছেন ভারত সফরে।  হত্যা মামলা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরা ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে ফেরা নিয়ে সাকিবের নিজেরও কিছুটা শঙ্কা আছে। 
এ বিষয়ে সাকিব বলেন, দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে আমার কি পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি। তিনি আরও বলেন, ফারুক ভাইয়ের (বিসিভি সভাপতি) সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।

যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন কিভাবে সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়। সাকিব বলেন, আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তারা দেখছেন। তারা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবে, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।
২০০৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে টেস্টে অভিষেক হয় সাকিবের। আজকের ম্যাচসহ এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে খেলছেন ৭১ টেস্ট। সাকিবের টি২০ অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে। ব্যাট হাতে ২৬ রান আর বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন সাকিব। ১৯ টেস্ট ও ৩৯ টি২০ ম্যাচে সাকিব নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশকে। 
বর্ণময় ক্যারিয়ারে সাকিব বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নিজের কাজে পারিপার্শ্বিক কোনোকিছুই প্রতিবন্ধক হতে পারেনি। যে কারণে নিজেকে নিয়ে যান সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। পৌঁছে যান আকাশছোঁয়া উচ্চতায়। মাঠের ধারাবাহিক পারফরমেন্স দিয়েই তিনি হয়েছেন বাংলাদেশের অহংকার, গৌরব। তারকা এই অলরাউন্ডারের অতিমানবীয় কীর্তিতে বাংলাদেশের নাম জ্বলজ্বল করে জ্বলেছে ক্রিকেটবিশ্বে। কারও কাছ থেকে দুঃখ বা কষ্ট পেলে অনেকেই মুষড়ে পড়েন।

প্রভাব পড়ে তার ব্যক্তিজীবন বা কর্মজীবনে। কিন্তু সাকিব আল হাসান এসবে ধার ধারেন না। কোনো কিছুই তাকে বিচলিত করতে পারে না। কষ্টের যাতনা আছে তার মধ্যেও, দুঃখ পেলে মন খারাপ হয়। কিন্তু অদম্য মানসিকতার সাকিব এসবকে পাত্তা দেন না। নিজের কাজটা করে যান নিষ্ঠার সঙ্গে। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ক্রিকেট মাঠে এমনই করেছেন বছরের বছর পর।  ক্রিকেট সাকিবের কাছে ইবাদতের মতো।

মাঠ তীর্থস্থানের মতো। দেশের পতাকা সমুজ্জ্বল রাখতে যেকোনো মূল্যে তিনি আপোসহীন। অনেক সমালোচনা, দুঃখ, কষ্ট পেয়েছেন কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি মাগুড়ার ছেলে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই সাকিবকে এবার সত্যি সত্যিই থামতে হচ্ছে।

×