ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

সেমিতে খেলার স্বপ্ন বাংলাদেশের মেয়েদের

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০১:১১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সেমিতে খেলার স্বপ্ন বাংলাদেশের মেয়েদের

আইসিসি নারী টি২০ বিশ্বকাপ সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন। মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে

দেশের মাটিতে নারী টি২০ বিশ^কাপ খেলার সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশ নারী দলের। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের জেরে নিরাপত্তা শঙ্কায় বাংলাদেশ থেকে এই আয়োজনটাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আরব আমিরাতে। এবার সেই লড়াইয়ে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ নারী দল আরব আমিরাতেই দুবাইয়ে যাওয়ার জন্য বিমানে উঠবে। 
এই উপলক্ষে মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অফিসিয়াল ফটোসেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে নারী দলের যেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ ছিলেন। এরপর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি দলের লক্ষ্য নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু সাম্প্রতিক বিশ^কাপ আসরগুলোয় ম্যাচও জিততে পারছে না দল তাই মূল লক্ষ্য ম্যাচ জেতা এবং সেই ধারাবাহিকতায় তার স্বপ্ন সেমিফাইনাল খেলার।

বিশ^কাপ মাঠে গড়াবে ৩ অক্টোবর। সেদিনই বাংলাদেশ খেলবে স্কটল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচ। ২০১৪ সালে প্রথমবার ঘরের মাটিতে বিশ^কাপ খেলে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সেবার গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি জয় পায়, তবে সবার নিচেই থাকে পয়েন্ট টেবিলের। এরপর নবম স্থান দখলের লড়াইয়ে আয়ারল্যান্ড নারী দলকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশের মেয়েরা।

টি২০ বিশ^কাপে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাফল্য বলতে এটুকুই। ২০১৬, ২০১৮, ২০২০ ও ২০২৩ সালের আসরের প্রতিটি প্রতিযোগিতায় ৪টি করে ম্যাচ খেলে কোনো জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশের মেয়েরা। সবমিলিয়ে টি২০ বিশ^কাপে ২১ ম্যাচ খেলে মাত্র দুই জয় ও ১৯ হার দেখেছে বাংলাদেশ। গত চার আসরে জয় না পাওয়ায় এবার জ্যোতি বলেছেন, ‘প্রথমত ম্যাচ জিততে চেষ্টা করব। ২০১৪ ছাড়া একটা বিশ্বকাপেও আমরা একটি ম্যাচও জিততে পারিনি। ভালো ক্রিকেট খেলেছি।

তবে ভালো ক্রিকেট খেলার কোনো মানে নাই, যদি আপনি ম্যাচ জিততে না পারেন। প্রথমত চাই ম্যাচ জিততে। দ্বিতীয়ত যখন আমরা ফ্লো পাব, আমার কাছে মনে হয় আমাদের যে দল, অবশ্যই... সেমিফাইনাল কে না খেলতে চায়।’ সেমির স্বপ্নটাও দেখেছেন তিনি। এবার ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড ব্যতীত বাকি ৩ দলই কঠিন। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলতে হবে। তাই চ্যালেঞ্জটা আরও বড়ই থাকছে। 
প্রস্তুতি হিসেবে এবার বিশ^কাপ স্কোয়াডে থাকা মেয়েরা কিছুদিন আগেই শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন ‘এ’ দলের হয়ে। তবে সেখানে ব্যাটিং ব্যর্থতা বড় ধরনের চিন্তা সৃষ্টি করেছে। টি২০ ফরম্যাটে ভালো করতে হলে ব্যাটিংয়ে উন্নতির বিকল্প নেই। দেশে মেয়েদের ক্রিকেট এগিয়ে নিতে হলে বিশ^কাপের মতো বড় মঞ্চে ভালো কিছু করতে হবে। দলের উন্নতি নিয়ে জ্যোতি বলেছেন, ‘আমরা জানি যে আমাদের ক্রিকেটটা যদি এক ধাপ এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে বিশ্বকাপের চেয়ে বড় মঞ্চ আর হতে পারে না।

ওখানে ভালো পারফর্ম্যান্স করলে শুধু আমরা না, যারা বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলে, বাকি যে মেয়েরা যারা বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলতে চায় তাদের জন্য আমরা ভালো কিছু করতে চাই।’ শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ফিরে ফিটনেস নিয়ে কাজ করছেন মেয়েরা এবং অনুশীলনও করছেন। ফ্লাড লাইটের আলোতেও হয়েছে অনুশীলন। এ ছাড়া বিশ^কাপ শুরুর আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবেন তারা। ব্যক্তিগতভাবেও একটি অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে জ্যোতি।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটি জ্যোতির টি২০ ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচ হবে। যা বাড়তি আনন্দ তার কাছে, ‘প্রথম ম্যাচ বিশেষ কিছু... তো প্রথম ম্যাচ জিততে চাই। আমার জন্য এটা সব থেকে বিশেষ ব্যাপার হবে। আমার জন্য এবং আমার দলের জন্য এটা অনেক বড় একটা অর্জন হবে। অবশ্যই একজন প্লেয়ার হিসেবে একশতম ম্যাচ, আমি এখনো জানি না খেলতে পারব কি না। যদি আল্লাহপাক সুস্থ রাখেন তাহলে তো অবশ্যই খেলব। যদি খেলি, প্রথম লক্ষ্য এটাই থাকবে যেন জিততে পারি।’

দেশের ইতিহাসে জ্যোতি সর্বাধিক ৯৯ টি২০ খেলেছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সালমা খাতুন ৯৫ এবং বর্তমানে সহঅধিনায়ক নাহিদা আক্তার ও অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ ৮৭টি করে ম্যাচ খেলেছেন এই ফরম্যাটে। এবার প্রথম ম্যাচ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। স্কটিশ মেয়েদের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৪ বার মুখোমুখি হয়ে প্রতিবারই ভালোভাবে জিতেছে। তাই এবারও জয়ের আশাই করছেন জ্যোতিরা। বাকি ৩ ম্যাচে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।

×