ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

সুন্দর শেষের আশায় টাইগাররা

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৪৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সুন্দর শেষের আশায় টাইগাররা

চেন্নাই টেস্টে প্রত্যাশা পূরণ না হলেও টাইগার পেসার হাসান মাহমুদ ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল

‘এখন আর কথা নয়, করে দেখানোর সময়।’Ñ দেশ ছাড়ার আগে বলছিরেন লিটন দাস। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠে ছিল আতœবিশ্বাস। অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজের বক্তব্যের সারমর্ম, ‘ভারত শক্ত প্রতিপক্ষ, কিন্তু সামর্থ্যরে সর্বোচ্চটা দিতে পারলে আমাদেরও সুযোগ থাকবে।’ আত্মবিশ্বাসের রসদ এসেছিল রাওয়ালপিন্ডি থেকে।

যেখানে দুই টেস্টেই পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ। দুই দশকে যে দলটার বিপক্ষে ন্যূনতম সাফল্য ছিল না, সেখানে কার্যত ইতিহাস গড়ে শান্ত-বাহিনী। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানদের গর্তে ঢুকিয়ে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছিলেন তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানারা।

ভারতের বর্তমান ও সাবেক অনেক তারকা ক্রিকেটার টাইগারদের প্রশংসা করে স্বাগতিকদের সতর্ক করেও দিয়েছিলেন। তবে শক্তিমত্তা ও বাস্তবতার বিচারে সে সব যে ফাঁপা হাইপ ছিল, মাঠের লড়াইয়ে শুরুতেই সেটি স্পষ্ট! চেন্নাইয়ে ২৮০ রানের বিশাল হারের পথে ব্যাটে-বলে কোনো বিভাগেই এতটুকু ফাইট দিতে পারেনি বাংলাদেশ। সাফল্য বলতে প্রথম ইনিংসে হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রানের দারুণ এক ইনিংসে শান্তর ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত।
পেস আক্রমনে হাসান মাহমুদ-নাহিদ রানাদের শুরুটাও ছিল দুর্দান্ত। ৩৪ রানে তৃতীয় ও ৯৬ রানে তুলে নিয়েছিলেন ভারতের চতুর্থ উইকেট। অধিনায়ক রোহিত শর্মা, বড় তারকা বিরাট কোহলি ও সেনসেশনাল গিলকে ফেরালেও শেষদিকে জাদেজা (৮৬) ও সেঞ্চুরিয়ান রবিচন্দ্রন আশ্বিনের (১১৩) টিকিটি নাড়াতে পারেননি তারা! ‘ইতিবাচক দিক হলো আমাদের পেসার তাসকিন, হাসানদের প্রথম দুই-তিন ঘণ্টার বোলিং।

কিন্তু ভারত সত্যিই খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। আমরাও নতুন বলে ভালো বোলিং করেছি, কিন্তু সেটা ধরে রাখা উচিত ছিল।’ বলেন শান্ত। ম্যাচের প্রথম দিনই ৪ উইকেট নিয়েছিলেন হাসান। দ্বিতীয় দিনে আরও একটি। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ভারতের মাটিতে টেস্টে ৫ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েন হাসান মাহমুদ। চার টেস্টের ক্যারিয়ারে হাসানের যা দ্বিতীয় ৫ উইকেট। দুটিই দেশের বাইরে।

রাওয়ালপিন্ডিতে ঠিক আগের ম্যাচেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট নেন তিনি। বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে দেশের বাইরে একাধিক ৫ উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় বোলার হাসান। ২০১৩ সালে জিম্বাবুইয়েতে দুইবার ৫ উইকেট নিয়েছিলেন রবিউল ইসলাম। চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন হাসান।

ভারতের প্রথম তিন উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি; তিনজনই ফিরেছেন হাসানের বলে। দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের পর ঋষভ পন্থের উইকেটও পান হাসান। ভারতের শেষ উইকেট বুমরাহকে ফিরিয়ে সব মিলিয়ে এই ইনিংসে ফাইফার পূর্ণ করেন ২৪ বছর বয়সি ডানহাতি মিডিয়াম পেসার।

চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স প্রত্যাশার ধারেকাছেও যায়নি। ২৮০ রানের এই হার টেস্টে ভারতের কাছে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের লজ্জার রেকর্ড। চেন্নাইয়ের উইকেটের চরিত্র বিবেচনায় দুই দলই ৩ পেসার এবং ২ স্পিনার নিয়ে মাঠে নেমেছিল। পেসাররা প্রথম ইনিংসে কিছুটা সফল হয়েও ৯ উইকেট তুলে নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের স্পিন জুটি রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা পুরো বাংলাদেশ দলকে একাই গুঁড়িয়ে দেন।

বাংলাদেশ শেষপর্যন্ত ৯টি উইকেটই হারায় তাদের স্পিনের কাছে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার ও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার মনে করছেন, বাংলাদেশের একাদশে পেসার কমিয়ে একজন অতিরিক্ত স্পিনার রাখা উচিত কানপুর টেস্টের জন্য। তিনি তৃতীয় স্পিনার হিসেবে তাইজুল ইসলামের কথা উল্লেখ করেছেন।

মাঞ্জরেকারের মতে, কানপুরের টার্নিং পিচে তাইজুল রোহিতদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারেন।  ‘ভারতের পিচের চরিত্র অনুযায়ী, তাইজুল ইসলাম এমন একজন বোলার যিনি ভারতীয় ব্যাটারদের বিপদে ফেলতে পারেন। টার্নিং উইকেটে তিনি বিপজ্জনক হতে পারেন। ভারতীয় কন্ডিশনে খেললে আপনি সবসময় ৩ পেসার নিয়ে মাঠে নামতে চাইবেন না। গ্রিন টপ পিচেও তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে পিচ টার্ন করবে।

তাই দুই পেসারই যথেষ্ট হবে।’ আর ব্যাটিং এবং সাকিব, মুশফিকু এবং লিটনের উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এখন তাদের আরও মানসিকভাবে দৃঢ় হতে হবে। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে সিনিয়রদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দলের পেস ইউনিটে ভালো সম্ভাবনা আছে এবং ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্যও কম নয়, কিন্তু মানসিকতার জায়গায় উন্নতি প্রয়োজন।’  

কানপুরে বাংলাদেশ দলের জন্য মাঞ্জরেকারের পরামর্শ, টিম ম্যানেজমেন্টকে উইকেটের চরিত্র ও প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা বিবেচনায় নিয়ে সঠিক কৌশল সাজাতে হবে। বিশেষ করে, অতিরিক্ত স্পিনার নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ দলের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে।’ 
সাকিবকে নিয়ে অবশ্য নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। চেন্নাই টেস্ট চলাকালেই সাকিবের সঙ্গে আলাপ করে মুরালি কার্তিক বলেছিলেন,‘অপারেশনের পর ওর আঙুলের ওপরের জায়গাটা ফুলে গেছে, এমন চোট নিয়ে খেলা কতটা কঠিন, একজন স্পিনার হিসেবে আমি সেটা বুঝি।’ পরে ধারাভাষ্য কক্ষে সাবেক ভারতীয় স্পিনারের এ কথা শুনে কিছুটা অবাক সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবালের মন্তব্য, ‘কার্তিকের কথা যদি সত্যি হয়, তবে এ টেস্টে বাংলাদেশ চারজন বোলার নিয়ে খেলছে।

বিষয়টা ম্যানেজমেন্টের আগেই পরিষ্কার করা উচিত ছিল।’ কোচিং স্টাফের একাধিক সদস্য অবশ্য বলেছিলেন, তারা কিছু জানেন না! এবার নতুন তথ্য দিলেন নির্বাচক হান্নান সরকার। জানালেন চেন্নাইয়ে খেলা চলাকালেই চোট পেয়েছেন সাকিব। শুক্রবার কানপুরে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টে তিনি খেলতে পারবেন কি না, পর্যবেক্ষনের পর সিদ্ধান্ত হবে।  ‘আপনি সরাসরি চোট বলতে পারবেন না।

কিছু ছোট ছোট ব্যাপার থাকে, যে আঙুলটায় অসুবিধা হয়েছিল, সেটা ম্যাচের আগে সে ফিল করতে পারেনি। বোলিং করা শুরু করার পর ফিল করেছে। সেই আঙুলে আবার বল লেগেছে। সেদিক থেকে কিছুটা তো ব্যাথা রয়েছে। যেহেতু সেকেন্ড টেস্টের আগে সময় আছে, আমাদেরও দেখার সুযোগ রয়েছে। সাকিব এমন একজন প্লেয়ার, সে যদি খেলতে না পারে, যদি মনে করে বোলিং করতে পারবে না, তাহলে কিন্তু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে পারে। আর সে যদি মনে করে বোলিং-ব্যাটিং কিছুই করতে পারবে না, তাহলে দৃশ্যপট ভিন্ন। সে ফিজিওর তত্ত্বাবধানে আছে।

সময় যেহেতু আছে, সবকিছু দেখে দেখেশুনে আমরা একটা সিদ্ধান্তে যাব।’ বলছিলেন হান্নান। ‘অনেকেই অনেকভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা ম্যাচের আগে ফিজিওর ১০০ ভাগ ক্লিয়ারেন্স নিয়েই তাঁকে দলে রেখেছি। তখন ১০০ ভাগ ফিটই ছিল। পরের ম্যাচের আগে সময় আছে, আমরা চিন্তা করব।

×