শান্তদের সামনে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের চলতি ভারত সফরে পিচ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। চেন্নাইয়ে লালমাটির পিচে প্রথম টেস্টে একদমই পাত্তা পায়নি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। যেখানে প্রথম ইনিংসে স্বাগতিক পেসাররা দাপট দেখালেও দ্বিতীয় ইনিংসে আলো ছড়িয়েছেন দুই স্পিনার রবিচন্দ্রন আশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। বাংলাদেশের পেসাররা শুরুটা দারুণ করলেও শেষ পর্যন্ত ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি। প্রশ্ন কেমন হবে কানপুরের পিচ? গ্রিন পার্কের চিরায়ত কালো মাটির স্পিনিং-ট্র্যাকেই খেলা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম। সিরিজ ফয়সালার দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে আজ দুপুরে কানপুরে পৌঁছেছে শান্ত ও রোহিত শর্মার দল। শুক্রবার খেলা শুরুর আগে দুই দিন অনুশীলনের সুযোগ পাবেন তারা।
২৩ টেস্টে মাত্র তিন হার। জয় ৭ ম্যাচে। আর ড্র হয়েছে ১৩ ম্যাচ। কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে ভারতের রেকর্ড। ঠিক এমনই। ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য ভারত কানপুরে যেন আরও বেশি শক্তিশালী। আর সেখানেই রোহিত শর্মাদের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ভারতের উত্তর প্রদেশের এক স্থানীয় গণমাধ্যমের ভাষ্য, কানপুরে বাংলাদেশ টেস্টের কথা মাথায় রেখে ৩টি উইকেট প্রস্তুত করা হচ্ছে। সম্ভাবনা আছে খেলা হবে ৫ নম্বর উইকেটে। ক্রিকইনফো জানিয়েছে এই ম্যাচে পিচের ক্ষেত্রেও আসছে ভিন্নতা। চেন্নাইয়ের মতো লাল মাটির পিচে খেলা হচ্ছে না এবারে। বাংলাদেশকে ভারত আটকাতে চায় নিজেদের চিরচেনা কালো মাটিতেই। যেখানে পেসারদের তুলনায় স্পিনাররাই ব্যাটারদের ওপর রাজত্ব করবেন। গ্রিন পার্কের এই পিচটিতে চেন্নাইয়ের লাল মাটির বদলে কালো মাটি থাকবে। বাউন্স বেশি হবে না এবং বল বেশি ক্যারি করবে না। এটা প্রত্যাশিত যে গ্রীন পার্কের পিচ চেন্নাইয়ের পৃষ্ঠের তুলনায় কিছুটা ফ্ল্যাট হবে এবং টেস্টে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাউন্সও কমে আসবে।
কানপুরের উইকেট বেশি ফ্ল্যাট হওয়ায় দুই দলের কৌশলেও পরিবর্তন আসতে পারে। বাংলাদেশের একাদশে পরিবর্তন আসতে পারে। সাকিবকে নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত হয়তো তিনি খেলতে পারেন। তবে গতি তারকা নাহিদ রানাকে বসিয়ে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট একাদশে যুক্ত করতে পারেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে। অন্যদিকে চেন্নাই টেস্টে না খেলা কুলদীপ যাদব কিংবা অক্ষর প্যাটেলের একজনকে ভারত বেছে নিতে পারে বলে হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে। যদি বাড়তি একজন স্পিনার নিয়ে খেলে ভারত, সে ক্ষেত্রে বিশ্রামে পেতে পারেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে শেষবার ভারত কানপুরে টেস্ট খেলেছে। সেবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে পাঁচটি উইকেট নিয়েছিলেন অক্ষর প্যাটেল। অক্ষরকে দলে নেওয়ার অর্থ হচ্ছে তাঁর ব্যাটিংয়ের সুবিধা পাওয়া। ভারত যদি আক্রমণাত্মক মেজাজে নামতে চায় সেক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন কুলদীপ।
ভারত ২০২১ সালে শেষবার কানপুরে টেস্ট আয়োজন করে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই টেস্টে ভারতীয় দল অশ্বিন, জাদেজা এবং অক্ষরের স্পিন ত্রয়ী নিয়ে মাঠে নেমেছিল। ২০১৬ সালে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টিম ইন্ডিয়া সহজ জয় পেলেও ২০২১ সালে, নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ ড্র করেছিল। সবমিলিয়ে ভারত এই মাঠে টেস্ট হারেনি ১৯৮৩ সালের পর থেকে। ৮৩ সালে ভারত সফরে এসে স্বাগতিকদের কানপুরে হারিয়েছিল সেসময়ের ক্রিকেট পরাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০২১ সালের আগের তিন টেস্টেই আবার ভারত জয় পেয়েছিল এই মাঠে।
সেই হিসেবে বাংলাদেশের সামনেও সুযোগ থাকছে কানপুরে নতুন কিছু করে দেখানোর। কালো পিচের উইকেটে খেলেই মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারত কঠিন প্রতিপক্ষ হলেও তাদেরকে হারানোর মতো প্রত্যয় নিয়েই মাঠে নামবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বিশেষ করে টাইগাররা নিজেরাই স্পিন নির্ভর দল হওয়াতে পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে থাকার আশা করা যেতেই পারে।
মিরাজ/ শহিদ
