ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১

ব্যাটিং ব্যর্থতাতেই বড় হার

মোঃ মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৩২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ব্যাটিং ব্যর্থতাতেই বড় হার

ব্যাট হাতে যা একটু লড়াই করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত

পাকিস্তানের বিপক্ষে গত টেস্ট সিরিজে দুর্দান্ত খেলে উজ্জীবিত ছিল বাংলাদেশ দল। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফর্ম করেন ক্রিকেটাররা। তাই ভারতের বিপক্ষে এবার টেস্ট সিরিজে অতীতের চেয়েও ভালো কিছু করার আশা করেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু চেন্নাই টেস্টে সেই ছাপ দেখা যায়নি।

বোলাররা বেশ ভালো করলেও দুই ইনিংসে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাটাররা। আর তাতেই সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন সকালেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। সেই হারটি ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে। ২৮০ রানের বিশাল হারের পেছনে ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৯ রান করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসেও সুবিধা করতে পারেনি।

৫১৫ রানের টার্গেটে নেমে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ২৩৪ রানের মধ্যে। এই হারে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ২৭ সেপ্টেম্বর কানপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট মাঠে গড়াবে। প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে প্রথম টেস্ট জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য স্কোয়াড অপরিবর্তিত রেখেছে বাংলাদেশ দল।
৫১৫ রানের লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশ তৃতীয় দিনশেষে ৪ উইকেটে ১৫৮ রান তোলে। অধিনায়ক শান্ত স্বচ্ছন্দে খেলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন। আর সাকিব আল হাসান ৫ রানে ক্রিজে ছিলেন। তবে ব্যাটারদের জন্য দারুণ সহায়ক হয়ে উঠেছিল চেন্নাইয়ের উইকেট। অভিজ্ঞতম দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হক উইকেটে এসে তাড়াহুড়া করেছেন।

উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন তারা। সেটার প্রভাব কাটিয়ে চতুর্থ দিন শান্ত ও সাকিব বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। উইকেটও তেমন কঠিন মনে হয়নি। তারা প্রথম এক ঘণ্টা পার করেন নির্বিঘেœ। পঞ্চম উইকেট জুটি বেড়ে হয়েছে ৪৮। তবে তখনই সতর্ক সাকিব ভুল করেছেন। রবিচন্দ্রন অশি^নের ঘূর্ণিতে ২৫ রানে ক্যাচ দিয়েছেন ফরোয়ার্ড শর্টলেগে দাঁড়ানো যশস্বী জয়সওয়ালকে।

এরপর আর বেশিক্ষণ টেকেনি বাংলাদেশের প্রতিরোধ। লিটন কুমার দাসেরও যেন খুব তাড়াহুড়া ছিল। তিনি ১০ বলে ১ রানে এবং মেহেদি হাসান মিরাজ ১০ বলে ৮ রান করে বিদায় নেন। এতে আর লড়াই করার মতো কোনো রসদ থাকেনি বাংলাদেশের। শান্ত টেলএন্ডারদের নিয়ে রান দ্রুত করার দিকে মনোযোগী হয়েছেন।

এতে তিনি নিজেই সাজঘরে ফিরেছেন। ১২৭ বলে ৮ চার, ৩ ছক্কায় রবীন্দ্র জাদেজাকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। এই টেস্টে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে অর্ধশতক করতে পেরেছেন তিনি।
শান্ত বিদায় নেওয়ার পর দ্রুতই বাকিরা উইকেট বিলিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। অশি^ন-জাদেজা স্পিনেই সর্বনাশ হয়েছে বাংলাদেশ দলের। লোকাল বয় অশি^ন সবসময়ই চেন্নাইয়ের পিচে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলেছেন। তিনিই যে বাংলাদেশকে বড় ঝামেলায় ফেলবেন তা বোঝাই যাচ্ছিল। সেই অশি^ন তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে ধস নামিয়েছেন।

শেষ ৬টি উইকেট বাংলাদেশ হারিয়েছে মাত্র ৪০ রানের মধ্যে। অশি^ন ২১ ওভারে ৮৮ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেন। এছাড়া জাদেজা নেন ১৫.১ ওভারে ২ মেডেনে ৫৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট। উইকেট খুব বেশি ভয়ঙ্কর না হলেও অফস্পিনার অশি^নের স্পিনে এমন নাজেহাল হওয়ার পেছনে অনেকে টপঅর্ডারে ৪ বাঁহাতি ব্যাটার থাকাকে দায়ী করছেন।

কিন্তু বাঁহাতি শান্তই এই টেস্টের উভয় ইনিংসে সেরা পারফর্মার হিসেবে ৮২ রান করেছেন। কিন্তু দল বাকিদের ব্যর্থতায় ২৩৪ রানে গুটিয়ে গেছে দ্বিতীয় ইনিংসে। ভারতের বিপক্ষে এর আগে সবচেয়ে বড় হার ছিল ২০৮ রানে। এবার নতুন রেকর্ড হিসেবে ২৮০ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে। শান্ত বলেছেন,‘প্রথম ইনিংসে আমরা ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি।

ম্যাচের ওই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। টপ অর্ডারে যদি অন্তত একটা জুটি করতে পারতাম তাহলে আমরা আরও ভালো অবস্থায় থাকতে পারতাম। এই ম্যাচ থেকে যদি শেখার কথা বলেন তাহলে আমার মনে হয় টপ অর্ডারদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে আরও বেশি সাবধানী  হওয়া উচিত ছিল। আমাদের আরও বেশি রান করা প্রয়োজন ছিল। সব ব্যাটাররা মনে করে তারা কামব্যাক করতে পারবে।’

ব্যাটারদের মধ্যে অনেক তাড়াহুড়া দেখা গেছে এই টেস্টে। সে কারণে অনেকেই আত্মাহুতি দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে দলের ওপর। এ বিষয়ে শান্ত বলেছেন, ‘উইকেটে সময় কাটানোটা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমরা যতটা কাটিয়েছিলাম সেটা যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু এখনও দ্বিতীয় টেস্টে এটা সহায়তা করবে। ৬২ রানের জুটি গড়াটা ওপেনারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা এমন একটা জিনিস যা সামনের টেস্টে নজর রাখতে পারে।’

×