চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩২ রান করেন সাকিব আল হাসান
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল বেশ উন্নতি করেছে। সেই উন্নতির পেছনে বড় ভূমিকা বাংলাদেশী পেসারদের। ধারাবাহিকভাবেই এখন বাংলাদেশের পেসাররা ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়ে যাচ্ছেন। তবে ধারাবাহিকতার বড় ঘাটতি বাংলাদেশী ব্যাটারদের। চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চলমান প্রথম টেস্টে তা আরেকবার প্রমাণ হয়ে গেছে। প্রথম দিন সকালে দুরন্ত বাংলাদেশী পেসাররা দ্বিতীয় দিন সকালেও ছিলেন দুর্বার। কিন্তু চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে সেই দলই মাত্র দুদিন পরই এই টেস্টে পরাজয়ের শঙ্কায়। ৩০৮ রানের লিড পেয়ে গেছে ভারত।
দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৩৭৬ রানে প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ভারতের। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের দাপটের সামনে অসহায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন প্রথম ইনিংস ধসে পড়ে ১৪৯ রানে। ফলোঅনে পড়লেও ভারত আবার ব্যাটিংয়ে নেমে দিনশেষে ৩ উইকেটে ৮১ রান করেছে ভারত।
প্রথম দিন হাসানের সুইংয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে ভারতের টপঅর্ডার। তখনই বোঝা গেছে চেন্নাইয়ের এই উইকেটে ব্যাটারদের জন্য কঠিন পরীক্ষা রয়েছে এবং ভারতীয় পেসাররাও দাপট দেখাবেন। যদিও প্রথম দিনের শেষার্ধে ব্যাটিং করা কিছুটা সহজতর হয়েছে। তাই রবিচন্দ্রন অশি^ন ও রবীন্দ্র জাদেজা সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। তারা ১৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ভারতকে বড় সংগ্রহের পথে নিয়ে যান। অশি^ন ১০২ ও জাদেজা ৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন।
তবে ৮০ ওভার হয়ে যাওয়ার কারণে দ্বিতীয় দিন সকাল থেকেই নতুন বল পেয়েছে বাংলাদেশ। আর সেই সুযোগে আবার পেসাররা জ¦লে উঠেছেন। এদিন প্রথম থেকেই তাসকিন জ¦লে ওঠেন। ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান নিয়ে শুরু করা ভারত শুরুতেই উইকেট হারায় জাদেজার। আর কোনো রানই যোগ করতে পারেননি তিনি, ৮৬ রানেই কট বিহাইন্ড হয়েছেন। ফলে ১৯৯ রানের সপ্তম উইকেট জুটি ভেঙে যায়। অষ্টম উইকেটে অশি^ন আর আকাশ দীপ অবশ্য ২৪ রান যোগ করেছেন। অশি^ন দেখেশুনে বেশ ভালোই খেলছিলেন। আকাশ দীপ ৩০ বলে ১৭ রান করতেই তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার হন। আগের দিন তাসকিন অগোছালো থাকলেও এদিন দারুণ লাইন-লেংন্থে বোলিং করেছেন।
পরে তিনি অশ্বিনকেও স্লোয়ার ডেলিভারিতে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত করেছেন। অশ্বিন ১৩৩ বলে ১১ চার, ২ ছক্কায় ১১৩ রানে বিদায় নেন। জাসপ্রিত বুমরাহকে শিকার করে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান হাসান।
হাসান ৫টি ও তাসকিন ৩টি উইকেট শিকার করলে আগের দিনের সঙ্গে আর মাত্র ৩৭ রান যোগ করতেই বাকি ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। ৩৭৬ রানের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরুর পর জাসপ্রিত বুমরাহ, আকাশ দীপের পেসে চ্যালেঞ্জে পড়েছে। প্রথম ওভারেই সাদমান ইসলাম অনিক অফস্টাম্পের ওপরে করা বুমরাহর বল ছাড়তে গিয়ে বোল্ড হন ২ রানে।
এরপর দীর্ঘ সময় জাকির হাসান ও শান্ত দেখেশুনে ঠেকিয়ে রেখেছেন। তবে আকাশের পেসে নবম ওভারের প্রথম দুই বলে জাকির (৩) ও মুমিনুল হক (০) বোল্ড হয়ে যান। হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েছেন আকাশ, তবে সেটি ঠেকিয়ে দেন মুশফিকুর রহিম। ২২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। লাঞ্চ বিরতির পর শান্ত ৩০ বলে ৩ চারে ২০ রান করে মোহাম্মদ সিরাজের পেসে সাজঘরে ফেরেন। কিছুক্ষণ পর মুশফিকও (৮) বুমরাহর শিকার হলে ৪০ রানে ৫ উইকেট খুঁইয়ে বিপর্যস্ত হয় বাংলাদেশ। তবে সাকিব আল হাসান বেশ ভালো ব্যাটিং করছিলেন। তার সঙ্গে লিটন কুমার দাসও সাবলীল ব্যাটিংয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন। তখন মনে হয়েছে বিপদ কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তবে চা বিরতির আগের ৪০ মিনিট বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে সফরকারীদের জন্য।
সাকিব-লিটন দু’জন দলকে আবার বিপদে ফেলেছেন। জাদেজার বাঁহাতি স্পিনে সাজঘরে ফিরেছেন তারা। সুইপ করতে গিয়ে মিসটাইমিংয়ে ক্যাচ তুলে দেন লিটন।
তিনি ৪২ বলে ৩ চারে ২২ রানে আউট হন। জাদেজা তার পরবর্তী ওভারে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ৬৪ বলে ৫ চারে ৩২ রানে বিদায় নেন সাকিবও। দুজনই নিজেদের দারুণ ইনিংসের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন আত্মাহুতির মাধ্যমে। ৯২ রানে টপঅর্ডার ৭ ব্যাটার বিদায় নেওয়ার পর মেহেদি হাসান মিরাজও আর লড়াই চালিয়ে যেতে পারেননি। হাসান ২২ বলে ৯, তাসকিন ২১ বলে ১১ রানে বুমরাহর শিকার হন। নাহিদ রানা ১১ বলে ২ চারে ১১ রানে মোহাম্মদ সিরাজের শিকার হন। ১৪৯ রানেই থামে বাংলাদেশ।
মিরাজ ৫২ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন। বুমরাহ ৪টি উইকেট নেন। ২২৭ রানে এগিয়ে থেকেও আবার ব্যাটিংয়ে নেমে তাসকিন-নাহিদের সাফল্যে ২৮ রানের মধ্যেই রোহিত শর্মা (৫) ও যশস্বী জয়সওয়ালের (১০) উইকেট পেয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে ৮১ রান করেছে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় ব্যাকফুটে চলে গেছে বাংলাদেশ।