চেন্নাইয়ে অনুশীলনে অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ, ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট সামনে রেখে কথা বলেন চন্দিকা হাতুরুসিংহে
চেন্নাইয়ে পৌঁছার পর এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে ২ দিন অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে দলের সঙ্গে যোগই দেননি বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ইংল্যান্ডে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সারের হয়ে একটি ৪ দিনের ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তবে মঙ্গলবার রাতে কিংবা আজ সকালেই দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে অনুশীলন করার কথা সাকিবের।
বৃহস্পতিবার এই ভেন্যুতেই স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সাকিব গত বছর মাত্র ১ টেস্ট খেলেছেন, তবে চলতি বছর ৩ টেস্ট খেলা হয়ে গেছে তার। এখন আর বাংলাদেশ দল সাকিবের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নয়। বরং বিকল্পও এখন আছে। অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজকেই তার বিকল্প ভাবা হচ্ছে। প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে নিজেই এমনটা দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার চেন্নাইয়ে অনুশীলনের পর এমন কথা বলেন তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে। এ সময় তিনি জানান, বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে পারলে তা বড় চাপ হয়ে আসে। কিন্তু চাপটা দলের অগ্রগতির জন্য সুবিধাজনক। ভারতের বিপক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু হাতুরু এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কথা ভেবে রোমাঞ্চিত।
২০১৯ সালে সর্বশেষ ভারত সফরে বাংলাদেশ দলের দুই টেস্টের কথা বারবারই আলোচনা হচ্ছে। কারণ দুই টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। কোনো ম্যাচই ৫ দিন পর্যন্ত গড়ায়নি। ইন্দোর টেস্ট চতুর্থ দিন পর্যন্ত গেলেও কলকাতায় দিবারাত্রির টেস্ট তৃতীয় দিনের শুরুতেই শেষ হয়েছে। এবার চেন্নাইয়ের উইকেট নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
লাল মাটির পিচে আসলে স্পিন নাকি পেস সহায়তা থাকবে তা নিয়ে জল্পনার ইয়ত্তা নেই। উইকেটের রহস্য, অচেনা পরিবেশ এবং বিশে^র এক নম্বর টেস্ট দলের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে লড়াই। সবমিলিয়ে বেশ চাপেই আছে বাংলাদেশ দল। এ বিষয়ে হাতুরু বলেছেন, ‘এই চাপকে সুবিধা হিসেবে দেখছি। আমার মনে হয় এটা আমাদের অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ করে এবং আরও বেশি সামনে তাকানোর সুযোগ করে দেয়।
তখন আমরা নিজেদের শক্তি ও সীমাবদ্ধতা ও অবস্থান সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারি।’ বিশ^ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ৩টি দল ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। সব ফরম্যাটেই দাপট এ তিন দলের। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল খেলার সুযোগ অনেক কম পায়। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এ নিয়ে ভারতে মাত্র তৃতীয়বার এবং অস্ট্রেলিয়ায় ২০০৩ সালে একবার ছাড়া টেস্ট খেলতে যায়নি বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডে সর্বশেষ ২০১০ সালে সফর করেছে। বড় দলকে তাদেরই মাটিতে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে হাতুরু বলেছেন, ‘বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে খেলতে পারলে আমরা আরও উৎসাহিত হই। যেমন ভারতে এসে ভারতের বিপক্ষে খেলা। এখনকার দিনে ক্রিকেটে এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সেরাদের বিপক্ষে খেলা সব সময় আপনাকে এই অনুভূতি দেয় যে, আপনি একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন।
আমরা এখন সেই চ্যালেঞ্জের দিকেই তাকিয়ে।’ চেন্নাইয়ে দুই দলই অলরাউন্ডারদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। ভারতে রবিচন্দ্রন অশি^ন ও রবীন্দ্র জাদেজা যেমন আছেন, তেমনি বাংলাদেশে সাকিব ও মিরাজ আছেন। অশি^ন ডানহাতি অফস্পিনার, জাদেজা বাঁহাতি এবং একইভাবে সাকিব বাঁহাতি স্পিনার ও মিরাজ ডানহাতি অফস্পিনার। তাই লড়াইটা হবে এ দুই জুটির মধ্যে। ভিন্ন মাত্রার হলেও ভূমিকা একই।
সাকিব বিশ^সেরা ছিলেন একসময়, মিরাজ তার মতোই এখন অবদান রাখছেন ব্যাটে-বলে। তাই অন্য অনেকের মতোই ভবিষ্যতে সাকিবের বিকল্প হিসেবে মিরাজকে ভাবছেন হাতুরু। তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে সে গত পাঁচ বা ছয় বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নতি করা ক্রিকেটার। সত্যিকার অর্থেই সে (ভবিষ্যতে) সাকিবের ভূমিকা নেওয়ার জন্য তৈরি। সে তার ব্যাটিং তো বটেই, নিশ্চিত করেই যেটা তার বড় শক্তির জায়গা, সেই বোলিংয়েরও উন্নতি ঘটিয়েছে।
এখন সে নিজের ব্যাটিংয়ের উন্নতি ঘটিয়েছে। সে অসাধারণ এককজন ফিল্ডারও।’ এ সময় সাকিবের ভূয়সী প্রশংসা করেন হাতুরু। তিনি বলেন, ‘যখনই সে দলে থাকে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বড় ভূমিকা রাখে। যেভাবে আমরা দলে ভারসাম্য আনতে চাই, সে থাকলে সেই কাজটা অবশ্যই সহজ হয়ে যায়। আমরা যে একজন বাড়তি বোলার বা একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলাতে চাই, সেটা তার অলরাউন্ড সামর্থ্যরে জন্যই পারি। সে শুধু ওই সমন্বয়টাই সহজ করে না, নিজের বিশাল অভিজ্ঞতাটাও যোগ করে।