সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বোলিং অনুশীলনে মেহেদী হাসান মিরাজ
পাকিস্তানে ঐতিহাসিক সাফল্যের রেশ না ফুরোতেই এবার ভারত সফরের কঠিন চ্যালেঞ্জ। পরাশক্তিদের সঙ্গে তাদেরই মাঠে টেস্টে চ্যালেঞ্জটা যে কত বড়, ক্রিকেটাররাও সেটা বুঝতে পারছেন। চেন্নাইয়ের এম চিদম্বরম স্টেডিয়ামে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু প্রথম টেস্ট। কানপুরের গ্রিন পার্কে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ২৭ তারিখ থেকে।
এরপর তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ। যে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ন্যূনতম জয় ছিল না, সেই তাদেরই মাটিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে বিশ্বক্রিকেটকেই নাড়িয়ে দিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, তাসকিন আহমেদরা ভাসছেন প্রশংসার জোয়ারে। অবিস্মরণীয় এ সাফল্যের আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে টাইগাররা কি পারবে ভারতে দারুণ কিছু করে দেখাতে? বাস্তবতা মেনেই মেহেদি হাসান মিরাজ বলছেন, ‘ফাইট’ করবেন তারা। ১৫ তারিখ দেশ ছাড়ার আগে মাত্র কয়েক দিনের অনুশীলন। মিরপুরে ঘাম ঝরাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। সোমবার অনুশীলন শেষে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ইনফর্ম এ অফস্পিনিং-অলরাউন্ডার।
‘চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই থাকবে। ভারতের মাটিতে আমরা এর আগেও টেস্ট খেলেছি। আমাদের আগের পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। আমরা এবার একটা প্রত্যাশা নিয়ে যাচ্ছি।’ বলেন মিরাজ। এরপরই তিনি যোগ করেন, ‘যখন আমরা ওদের সঙ্গে ফাইট করতে পারব, তখন আমাদের ভালো করার সুযোগ থাকবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন ওদের সঙ্গে ফাইট করতে পারি।’
ভারত সফরের চ্যালেঞ্জ নিয়ে মিরাজের কথা, ‘দেখুন, টেস্ট ক্রিকেটে সব সময়ই চ্যালেঞ্জ থাকে। প্রত্যেকটা সেশন, প্রত্যেক বল, সবটাই চ্যালেঞ্জ। ব্যাটসম্যান, বোলার- সবার জন্য। ভারত অবশ্যই ভালো দল। ওদের বোলাররা অনেক ভালো। ব্যাটসম্যানরাও অনেক ভালো। ওদের যে উইকেটটা থাকে... সেখানে আমরা আগে খেলেছি। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে উইকেটের আচরণ সম্পর্কে। আমার মনে হয় সেখানে উইকেট অনেক ভালো থাকবে। আমরা যেভাবে খেলছি, সেভাবে যদি থাকি, ফলাফল চিন্তা না করে যদি পারফর্ম করার চেষ্টা করি, তাহলে ভালো ফল আসবে।’ ভারত সফরের আগে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে প্রত্যাশা বেড়ে যাওয়ার কারণ অবশ্যই পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের পারফরম্যান্স। শান মাসুদের দলকে তাদেরই মাটিতে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে টেবিলের চারে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ দলের ওপর প্রত্যাশার চাপ বাড়ছে। মিরাজরাও সে উত্তাপ টের পাচ্ছেন, ‘আমরা যখন ভালো খেলি, তখন সবারই প্রত্যাশা বাড়ে। আমাদের ভালো খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। যদি তা করতে পারি, আমরা নিজেদেরও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব।’ ভারত চ্যালেঞ্জিং প্রতিপক্ষ হলেও পাকিস্তান সফরের সাফল্যকেই প্রেরণা হিসেবে দেখছেন মিরাজ, ‘আমরা যেহেতু পাকিস্তান সিরিজটা ভালো করেছি, এই সিরিজের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য নেই। পারফর্ম করছি, সবাই ভালো ফর্মে আছে।
সবাই যদি ভারতেও ভালো ফর্মে থাকে, তাহলে অবশ্যই ভালো কিছু আশা করা যাবে।’ রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের পর দ্বিতীয় টেস্টে ৬ উইকেটের বড় জয় পায় শান্তর দল। এই ম্যাচে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটের সবকটিই তুলে নেন পেসাররা। হাসান মাহমুদ ৫, নাহিদ রানা ৪ ও তাসকিন আহমেদ ১। যদিও ইনজুরির কারণে খেলা হয়নি শরিফুল ইসলামের। সুস্থ হয়ে ওঠা বাঁহাতি এ পেসার ভারত সফরে অন্য একটা চ্যালেঞ্জও দেখছেন। দেশে কিংবা পাকিস্তানের মাটিতে সর্বশেষ কোকাবুরা বলে খেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতে খেলতে হবে এসজি বলে। স্বাভাবিকভাবে কোকাবুরার চেয়ে এসজি কিছুটা ভারি হওয়ায় আলাদা করে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।
বিসিবি মিডিয়ায় আপলোড করা এক ভিডিওতে প্রস্তুতি নিয়ে শরিফুল যেমন বলছিলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে, আরও ভালোমতো নেব। বল যেহেতু একটা ফ্যাক্ট। আমরা খেলছি কোকাবুরাতে, এখন খেলব এসজিতে- এটার সঙ্গে আমরা যত মানিয়ে নিতে পারব, ততই আমাদের জন্য ভালো।’ বাংলাদেশ এর আগে সর্বশেষ ভারত সফর করেছিল ২০১৯ সালে। সেবার ব্যাটে-বলে কোনোভাবেই লড়তে পারেনি। এবার প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। টাইগাররা নিজেদের শেষ ৮ টেস্টে ৫টিতে জয় পেয়েছে। পাকিস্তানসহ হারিয়েছে নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে।