ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

ফেডারেশনের সংস্কার চেয়ে ১৯ দফা দাবি পেশ ভলিবল খেলোয়াড়দের

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৯ আগস্ট ২০২৪

ফেডারেশনের সংস্কার চেয়ে ১৯ দফা দাবি পেশ ভলিবল খেলোয়াড়দের

ভলিবল ফেডারেশনের সংস্কার চেয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছেন খেলোয়াড়রা

বাংলাদেশের ভলিবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনার জন্ম ২০১৬ সালে। সেবার এশিয়ান সিনিয়র পুরুষ সেন্ট্রাল জোন আন্তর্জাতিক ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়ে বাংলাদেশ। সাঈদ আল জাবীর, হরষিত বিশ্বাস, সোহেল রানা, ইমরান হায়দার কাঞ্চন, মাসুদ মিলন, কায়সার হামিদ, আতিক, নারায়ণ, রাশেদ, আব্দুল মুমিন সাদ্দামদের হাত ধরে ইতিহাস রচনা করেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। জাতীয় পুরুষ দলের পাশাপাশি ২০২২ সালে বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-২৩ দলও একই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়ে। তানভীর, রাকেশ, রেদোয়ান, রিসালাতদের হাত ধরে আসা সেই শিরোপা। 

এই দুই শিরোপা জয়ের নায়করা ভলিবল কোর্ট ছেড়ে আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) রাস্তায় নেমে এসেছেন। ঘুণে ধরা ভলিবল ফেডারেশনকে বাঁচাতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছে জানিয়েছেন আকুল আবেদন। 

ফেডারেশন সংস্কারের লক্ষ্যে ১৯ দফা দাবি নিয়ে আজ পল্টনস্থ শহীদ নূর হোসেন জাতীয় ভলিবল স্টেডিয়ামের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন খেলোয়াড়রা। এই মানববন্ধনে জাতীয় দলের বর্তমান খেলোয়াড় হরষিত বিশ্বাস, তানভীররা যেমন ছিলেন, তেমনি সাবেক খেলোয়াড় সোহেল, সাদ্দাম, কাঞ্চন, আমিরুল ইসলাম আপনসহ সকল স্তরের খেলোয়াড়রা অংশ নেন। বহুল আলোচিত, দেশবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত কোটা আন্দোলনে অংশ নেয়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলিবল খেলোয়াড় যেমন এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে ছিলেন; তেমনি কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত খেলোয়াড়রাও সংস্কারের দাবিতে জড়ো হন ভলিবল ফেডারেশন প্রাঙ্গনে। 

বর্তমান কমিটির নানান দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন ফেডারেশন পাড়া বলে পরিচতি গুলিস্তান-পল্টনের রাজপথ। 
মানববন্ধন কর্মসূচিতেই থেমে থাকেননি ভলিবল খেলোয়াড়রা। বর্তমান কমিটির পদত্যাগ চেয়ে এবং অতিসত্বর অ্যাডহক কমিটি গঠন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে চিঠিও দিয়েছেন। বেঁধে দিয়েছেন ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম। 

১৯ দফা দাবি পূরণ না হলে আরো বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন এই আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সোহেল, সাদ্দামরা। ৩০ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশন। এত বড় কমিটিতে একজনও জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় নেই। এই ৩০ জনের আবার ২০ জনের নেই ভলিবল সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান। তাই ভলিবল খেলোয়াড়রা সংস্কারের এক নম্বরে স্থানে বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে সেখানে যাতে শতকরা ৩০ ভাগ সাবেক জাতীয় খেলোয়াড়দের অন্তর্ভূক্তির দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ভলিবল ফেডারেশন সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক জাতীয় দলের সাবেক তারকা মিডল ব্লকার সোহেল রানা বলেন, `আমরা ১৯ দফা দাবি নিয়ে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি। যেখানে আমাদের প্রথম এবং প্রধানতম দাবিই হচ্ছে বর্তমান কমিটির অর্থব সদস্যদের পদত্যাগ। আমরা চাই অতিসত্বর অ্যাডহক কমিটি গঠিত হোক। সাবেক খেলোয়াড়দের ৩০ ভাগ সেই কমিটিতে রেখে। আশাকরি মাননীয় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাদের যৌক্তিক ১৯ দফা দাবিগুলো দেখবেন এবং অতিসত্বর ব্যবস্থা নেবেন। কারণ দীর্ঘ যুগ-কাল ধরে আমরা খেলোয়াড়রা নানান সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত, নিপীড়িত, নিষ্পেশিত, বঞ্চিত। 

সোহেল রানার সুরে সুর মিলিয়ে জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় এবং সহ-সমন্বয়ক আব্দুল মুমিন সাদ্দাম জানান,  আজ সারা দেশ থেকে আমাদের এই আন্দোলনে খেলোয়াড়রা সামিল হয়েছেন। বিভিন্ন বাহিনীতে থাকা খেলোয়াড়রা সশরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও, স্যোসাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে তারা বিভিন্ন ভিডিও বার্তা দিয়ে আামাদের দাবির পক্ষে তাদের  সমর্থন জানিয়েছেন। 

দীর্ঘদিন জাতীয় দলের জার্সিতে খেলেছেন আমিরুল ইসলাম আপন। সিনিয়র এ খেলোয়াড়ও আজ মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। ফেডারেশন দ্বারা নানান সময়ে বঞ্ছনার যে শিকার হয়েছেন খেলোয়াড়রা, চিকিৎসার অভাবে অনেকে যে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন- সেসব কথা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেছেন আপন। বর্তমান কমিটির পদত্যাগের পাশাপাশি আরো কিছু দাবির ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন সোহেল-সাদ্দামরা। যেমন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড়দের নিয়ে অডিট কমিটি করা (নিরপেক্ষ অডিট ফার্মের মাধ্যমে সেটা পরিচালিত হতে হবে), কোচিং এবং সিলেকশন কমিটিতে দক্ষ লোক বিশেষ করে জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় বাধ্যতামূলক রাখা (লেভেল ২ কোচিং কোর্সের জ্ঞান থাকাতে হবে), দেশের নামি-দামি কর্পোরেট ক্লাবের পাশাপাশি সমর্থকপুষ্ট জনপ্রিয় ক্লাবগুলোকে লিগে অন্তর্ভূক্ত করা, প্রতি বছর লিগ আয়োজন (নারী  ও পুরুষ), আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল প্রতিযোগিতা আয়োজনসহ জাতীয় দলের কমপক্ষে ১৪/১৫ জন খেলোয়াড়কে বেতন কাঠামোতে যুক্ত করা।

 

 

রুমেল// শহিদ

×