ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১

এ সময়েও থেমে নেই রাগবির কার্যক্রম ...

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ১২ আগস্ট ২০২৪

এ সময়েও থেমে নেই রাগবির কার্যক্রম ...

নতুন ২০ রাগবি খেলোয়াড়কে হাতেখড়ি দিচ্ছেন মৌসুম আলী

কদিন আগেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হয়েছে আওয়ামী লিগ সরকারের। তারপরও দেশে চলছে নানা সহিংসতা-অস্থিরতা। এর প্রভাব পড়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও। ফলে নিরাপত্তার কারণেই দেশে বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের খেলাধুলা। 
তারপরও শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ব্যতিক্রম বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশন ইউনিয়ন। থেমে নেই তাদের কার্যক্রম।

এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে রাগবি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মৌসুম আলী। তিনি ঢাকার গুলশান নিকেতনে রাগবি অনুশীলন করিয়েছেন নিজ উদ্যোগে।
এই কর্মসূচিতে নতুন ২০ রাগবি খেলোয়াড় অংশ নেয়। তারা রাগবি খেলতে আগ্রহী খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শেষে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশে ক্রীড়া ফেডারেশন ও ক্রীড়া এসোসিয়েশনের সংখ্যা অর্ধশতরও বেশি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ও ব্যস্ত ফেডারেশন/এসোসিয়েশনের নাম বললে প্রথম সারিতেই আসবে বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশনের নাম। 
সারা বছর ধরেই রাগবির বিভিন্ন কার্যক্রম থাকে। করোনার সময়ও থেমে থাকেনি রাগবি ফেডারেশনের কার্যক্রম। এ সবেরই পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশ এই ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মৌসুম আলী। এশিয়া রাগবি কর্তৃক ২০২৩ সালের নভেম্বরে ২০২২ সালের সেরা সংগঠকের পুরস্কার পান তিনি। এশিয়ার ৩২টি রাগবি খেলুড়ে দেশের মধ্যে থেকে মৌসুমকে সেরা সংগঠক হিসেবে বেছে নেয়া হয়। বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশনের অভূতপূর্ব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্যে তাকে এশিয়া রাগবি কর্তৃক ২০২২ সালের 'সেরা সংগঠক' (ক্যারেক্টার অ্যাওয়ার্ড) হিসেবে পুরষ্কৃত করা হয়।  
এই অ্যাওয়ার্ডটি বাংলাদেশ রাগবির নিরলস পরিশ্রমের একটি আন্তর্জতিক স্বীকৃতি, যা বাংলাদেশের জন্য অনেক গৌরবের। 
ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, এটা সবাই জানে। তবে এর পরের স্থানটি কোন্ খেলার? বেশিরভাগ ক্রীড়াপ্রেমীর মতে, দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলাটি হচ্ছে রাগবি। বিশ্বের অনেক দেশই আছে, যাদের জাতীয় খেলাই হচ্ছে রাগবি। যেমন: জর্জিয়া, মাদাগাস্কার, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, ওয়েলস্ প্রভৃতি। এছাড়া ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশ আছে, যেখানে এ খেলাটি অন্য অনেক খেলার চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। 

বাংলাদেশে রাগবির শুরুটা আসলে কিভাবে? কে বা কারা ছিলেন এর নেপথ্যে? এর উত্তর- মৌসুম আলী, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশে রাগবির আর্বিভাব ঘটে তার হাত ধরেই। ২০০৪ সাল থেকে রাগবি নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। ২০০৬ সালে তাঁর চিন্তা থেকেই খন্দকার জামিলউদ্দিনকে সভাপতি করে রাগবি বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। শুরুটা ছিল দুঃখ-কষ্ট ও অন্ধকারের পথচলা। বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয় রাগবিকে। ২০০৬ সালের অক্টেবরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে এ্যাসোসিয়েশন হিসেবে অনুমোদন লাভ করে বাংলাদেশ রাগবি ইউনিয়ন। কিন্তু দীর্ঘ সময় খেলাটি প্রসারের জন্য মাঠ সুবিধা পায়নি। নটরডেম কলেজের মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়াম, মোহামেডোন ক্লাবের মাঠে ... এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন মাঠে রাগবি খেলা চালিয়ে যেতে হলেও কখনই হতোদ্যম হননি মৌসুম। জাইকা ও জাপান দূতাবাসের দুই রাগবি প্লেয়ার পাওয়া যায় (নাম ওদামা ও সুজুকি)। তাদের মাধ্যমে সে মাসেই মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল কলেজের ১৩০ শিক্ষার্থীদের প্রথম রাগবি কোচিং করানো হয়। 
পরের বছর দেশীয় ক্রীড়া সাংবাদিকদের এ খেলাটি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার দিতে একটি সেমিনার আয়োজন করেন মৌসুম আলী। এরপর আরামবাগ, ভিক্টোরিয়া, আজাদ ও মেরিনার্স- এ চারটি  ক্লাব নিয়ে পল্টন মাঠে ক্লাব কাপ টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়। ক্লাবগুলোকে খেলোয়াড় সরবরাহ করে রাগবি ইউনিয়নই। 
শুরুতে অনেকেই বলেছিলেন, এ খেলাই দর্শক হবে না। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হয়।  

শুরুর দিকে রাগবির টুর্নামেন্ট চালাতে সামান্য একটা মাঠের জন্য মৌসুম আলীকে সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন বাধায়। এসব বাধা অতিক্রম করে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল কলেজের সহযোগিতায় তাদের মাঠকে কাজে লাগিয়ে চালিয়ে যেতে থাকেন একটার পর একটা টুর্নামেন্ট। রাগবি যাত্রার শুরু থেকে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল মাঠের ভূমিকা ছিল আসাধারণ। এখানেই রাগবির জাজ, রেফারি, কোচের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের নিয়েই শুরু হয় এগিয়ে চলার কাজ। বিভিন্ন স্কুলে-কলেজে ট্রেনিং দিয়ে শুরু হয় টুর্নামেন্ট। 

মৌসুম আলীর সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ রাগবি ইউনিয়ন কাজ করে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। তবে সমস্যা হচ্ছে শুধু মাঠের। পল্টন মাঠটি যেন রাগবির জন্য সবসময়ই পাওয়া যায়, এটাই মৌসুম আলীর একান্ত চাওয়া। 
 

 

রুমেল খান

×