ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

নাটকীয় ফটোফিনিশে দ্রুততম মানব নোয়াহ

রুমেল খান

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ৫ আগস্ট ২০২৪

নাটকীয় ফটোফিনিশে দ্রুততম মানব নোয়াহ

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পর অলিম্পিকেও দ্রুততম মানব হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নোয়াহ লাইলস (মাঝে)

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক। আর অলিম্পিকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট হচ্ছে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। অনূর্ধ্ব ১০ সেকেন্ডের মধ্যে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে এ ভুবনে। ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ হতে পারে সুউচ্চ অট্টালিকা, ঘটতে পারে গাড়ি দুর্ঘটনা, আবার এক নিশ্বাসের দৌড়ে হাসিল করা যায় স্বর্ণপদক। যেমনটি করলেন নোয়াহ লাইলস।

এর মাধ্যমে জ্যামাইকার দীর্ঘদিনের দাপট ভেঙে প্যারিস অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতে ফের যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম ফিরিয়ে আনলেন এই অ্যাথলেট। রবিবার দিবাগত রাতে স্তাদে দে ফ্রান্সে জ্যামাইকান প্রতিদ্বন্দ্বীকে ০.০০৫ সেকেন্ডের ব্যবধানে হারিয়ে স্বপ্নের স্বর্ণপদক জেতেন নোয়াহ। তিনিই এখন এই গ্রহের অবিসংবাদিত দ্রুততম মানব। তবে ১০ সেকেন্ড নয়, এই ইভেন্টের ফলাফল পেতে দীর্ঘ ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হয়। কেননা বিজয়ীদের অবস্থান নির্ধারণ করতে হয়েছে ফটোফিনিশে! ব্যক্তিগত সেরা ৯.৭৮৪ সেকেন্ডে ফিনিশিং লাইন পার করেন তিনি।

অন্যদিকে, জ্যামাইকার কিশানে থম্পসন ৯.৭৮৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে রৌপ্যপদক জেতেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রেড কার্লি ৯.৮১ সেকেন্ড সময় নিয়ে জেতেন ব্রোঞ্জপদক। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের দ্রুততম মানব মার্চেল ইয়াকবস হন পঞ্চম। ১০০ মিটার দৌড়ে আট প্রতিযোগীর সবাই রেস শেষ করেন ১০ সেকেন্ডের কম সময়ে। অলিম্পিকের ইতিহাসে এমনটা আগে কখনোই হয়নি।  
২০০৪ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রকে পুরুষদের (জাস্টিন গ্যাটলিন) ১০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রথম স্বর্ণপদক এনে দিলেন নেয়াহ। এর আগে এই ইভেন্টে আধিপত্য ছিল জ্যামাইকান কিংবদন্তি উসাইন বোল্টের। ২০০৮ থেকে ২০১৬ অলিম্পিক পর্যন্ত তার কাছ থেকে স্বর্ণ কেড়ে নিতে পারেনি কেউ। ১৯৮০ সালের মস্কো অলিম্পিকের পর প্যারিসেই সবচেয়ে কম ব্যবধানে নিষ্পত্তি হলো পুরুষদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টের স্বর্ণপদকের।

সেবার মস্কোতে ব্রিটেনের অ্যালান ওয়েলস এমন সুক্ষè ব্যবধানেই হারিয়েছিলেন সিলভিও লিওনার্দকে। তখন অবশ্য সেকেন্ডকে হাজার ভাগ করার প্রযুক্তি ছিল না।
নাটকীয়ভাবে স্বর্ণপদক জিতে নোয়াহ বলেন, ‘এই পদকটা আমি চেয়েছি, কী কঠিন লড়াই হলো, প্রতিদ্বন্দ্বীরাও অবিশ্বাস্য ছিল। সবাই প্রস্তুত হয়েই এসেছিল আর আমি শুধু এটিই প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম তাদের সবার মধ্যে আমি সেই মানুষ।’ 
এখন নোয়াহর দৃষ্টি ২০০ মিটার দৌড়ে। তিন বছর আগে টোকিও অলিম্পিকে এই ইভেন্টে অবশ্য ব্রোঞ্জপদক জিতেছিলেন ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার নোয়াহ। তবে ২০০ মিটারে নোয়াহ তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। প্যারিসে এই ইভেন্টের ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে লাইলস আত্মবিশ^াস নিয়ে বলেছেন, ‘১০০ শতাংশ। এটি আমার সেরা ইভেন্ট এবং এখন আমি ১০০ মিটারে সাফল্য পেয়েছি। ২০০ মিটারেও সাফল্য পেতে চাই।’ 
তবে ১০০ মিটার দৌড়ের ফলাফল না দেখানো পর্যন্ত ২৭ বছর বয়সী লাইলস কিন্তু ধরেই নিয়েছিলেন যে তিনি কিশানে থম্পসনের কাছে রেসটি হেরে গেছেন! এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘আমি কিশানের কাছে গিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, আমার মনে হচ্ছে তুমিই জিতেছ। কিন্তু পরে স্ক্রিনে প্রথম স্থানের অধিকারী হিসেবে আমার নামটি দেখে আমি হতবাক হয়ে গেলাম এবং ঈশ^রকে ধন্যবাদ জানালাম।

শেষ পর্যন্ত এই বিস্ময়কর কঠিন লড়াই জিততে পেরে আমি দারুণ খুশি। আমি প্রমাণ করেছি আমি নেকড়েদের মধ্যে সেরা নেকড়ে। এর চেয়ে বড় মুহূর্ত আর চাইতে পারতাম না।’
বিজয় নিশ্চিত হবার পর একটি ব্যতিক্রম কাজও করেছেন লাইলস। সেটা হচ্ছে ট্র্যাকের পাশে রাখা একটি বিশালকার ঘণ্টা বাজানো। তার এমন উদযাপনকে বলা হচ্ছে ‘বজ্রপাতের মতো ঝাঁকুনি’ এবং ‘তার আবেগ প্রকাশের ধরন’। 
রেসের অনেকটা সময় পর্যন্ত থম্পসনই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ ১০ মিটারে বাজিমাত করে একে একে সবাইকে ছাড়িয়ে যান লাইলস। গত বছর বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে তিনটি স্বর্ণ জিতে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। তাই এবার অলিম্পিকে তাকে ঘিরেই বেশি কৌতূহল ছিল সবার। লাইলসও তাদের নিরাশ করেননি। অথচ হিট ও সেমিফাইনালের কোনোটিতেই জিততে পারেননি তিনি!

×