ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

রোহিত-কোহলিদের রাজকীয় সংবর্ধনা

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ৫ জুলাই ২০২৪

রোহিত-কোহলিদের রাজকীয় সংবর্ধনা

বার্বাডোজ থেকে বৃহস্পতিবার ট্রফি নিয়ে ভারতে ফিরে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দল

মাঠের ক্রিকেটে ঝড় তুলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর টি২০ বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধার করেছে ভারত। বার্বাডোজের গ্র্যান্ড ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর সত্যি সত্যিই ঝড়ের কবলে পড়ে রোহিত শর্মার দল! ক্যারিবীয় সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘বেরিলের’ কারণে সব ধরনের বিমান ওঠা-নামা বন্ধ হয়ে যায়। শিরোপা নিয়ে হোটেলে বন্দি হয়ে পড়ে গোটা ভারত দল, সঙ্গে যাওয়া পরিবারের সদস্য এবং সংবাদকর্মীরা।

বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিউইয়র্ক থেকে চার্টার্ড বিমান উড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করে ইন্ডিয়ান বোর্ড (বিসিসিআই)। খোদ বার্বাডোজের সরকারপ্রধানের হস্তক্ষেপে সেটি বিমানবন্দরে অবতরণ করে এবং চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে দেশের পথে উড়াল দেয়। ফাইনালে জয়ের ১০৫ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার দিল্লি বিমানবন্দরে পা-রাখেন কোহলি, বুমরাহরা! সেই সাত সকালেও কিছুটা বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ভক্তদের ঢল নামে।

ছাদখোলা বাসে করে স্থানীয় হোটেলে বিশ্রাম শেষে চ্যাম্পিয়নরা চলে যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, সংবর্ধনা দেন নরেন্দ্র মোদি, ক্রিকেটাররাও তাঁকে বিশ্বজয়ের বিভিন্ন গল্প শোনান। সন্ধ্যায় তারা উড়ে যান মুম্বাইয়ে। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে হয় আরও একটি জমকালো আয়োজন। 
বিমানবন্দর থেকে দলকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি হোটেলে, সংবর্ধনার বড় আয়োজন যেখানে। সেখানেও কেক কাটাসহ ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতা। যথারীতি রাস্তা দুপাশে ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের ভিড়। বাস থেকে নামার পর বাদ্য-বাজনা, নাচে-গানে বরণ করে নেওয়া হয় দলকে। বাস থকে নেমে শিল্পীদের সঙ্গে নাচে মেতে উঠেন রোহিতও। হোটেলেও হয়েছে কিছু আনুষ্ঠানিকতা।

বিশ্রাম সেরে ভারতীয় দল সাক্ষাৎ করতে যায় মোদির সঙ্গে। বার্বাডোজ থেকে ভ্রমণ-জার্সিতে ভারতে পৌঁছালেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা জার্সি পরেই দেখা করেছেন দলের সদস্যরা। ঘূর্ণিঝড় বেরিলের কারণ তিনদিন হোটেলে আটকে ছিলেন ক্রিকেটাররা। পরিবারের সদস্য, সাপোর্ট স্টাফ ও ২২ সাংবাদিক মিলিয়ে মোট ৭৪ জনের বহর চার্টার্ড বিমানে উড়ে দিল্লিতে আসেন। বিমানবন্দরেই এক দফা আয়োজন করে বরণ করে নেওয়া হয় বিজয়ী ক্রিকেটারদের।

ফুলেল শুভেচ্ছার পাশাপাশি কেক কাটেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বাইরে বেরিয়ে তারা দেখতে পান, এই সকালেও শত শত ক্রিকেটপ্রেমী তাদের স্বাগত জানানোর অপেক্ষায়। বিপুল হর্ষধ্বনি, চিৎকার, স্লোগানে তারা দলের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে দেন। তাদের দিকে ট্রফি উঁচিয়ে ধরে উল্লাসে জোয়ার এনে দেন অধিনায়ক রোহিত। হোটেলবন্দি, দীর্ঘ ভ্রমণ, দিল্লিতে প্রাধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা... সেখানেই শেষ নয়। আরও বড় আয়োজনের জন্য তখন প্রস্তুত মুম্বাই, প্রস্তুত ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম।

সন্ধ্যার আগেই দিল্লি থেকে মুম্বাইর পথে উড়াল দেয় টিম-ইন্ডিয়া। সেখানে আয়োজন করা হয় ‘ভিক্টরি প্যারেড।’ ছাদখোলা বাসে করে শহর প্রদক্ষিণ করে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে পৌঁছায় চ্যাম্পিয়ন দল। ২০০৭ প্রথম টি২০ বিশ্বকাপেই বাজিমাত করে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরার পরও মাহেন্দ্র সিং ধোনির দলের জন্য ছিল এমন আয়োজন। সেবার বিমানবন্দর থেকে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যেতে ৬ ঘণ্টা লেগেছিল তাদের। এবার রোহিত- কোহলিদের বরণেও থমকে যায় গোটা মুম্বাই শহর। জনসমুদ্রে রূপ নেয়। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দলের জন্য ছিল আরও বড় আয়োজন।

ভারতীয় বোর্ডের ঘোষিত ১২৫ কোটি রুপির পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় কথা ক্রিকেটারদের হাতে। রোহিত-কোহলিরাও বোর্ড কর্তাদের হাতে তুলে দেন বিশ্বকাপের ট্রফি। ছিলেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট রজার বিনি, সেক্রেটারি জয় শাহসহ আরও অনেকেই। উল্লেখ্য, গত শনিবার বার্বাডোজের কিংস্টন ওভালে উন্মাদনার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে সতেরো বছর পর টি২০ বিশ্বকাপের ট্রফি পুনরুদ্ধর করে রোহিতের দল। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর যেটি ভারতের প্রথম কোনো আইসিসির বৈশ্বিক শিরোপা।

×