ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১

অথৈ সাগরে ইতালির ফুটবল

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ০০:৪৭, ৩ জুলাই ২০২৪

অথৈ সাগরে ইতালির ফুটবল

বাছাইপর্ব না পেরুতে পারায় ২০১৮ ও ২০২২ টানা দুই বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি ইতালি

বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মিশন শুরু করেছিল ইতালি। কিন্তু মূলমঞ্চে সেইরুপ আর দেখা যায়নি আজ্জুরিদের। একটি মাত্র জয়ে বাকি দুটিতে ড্র আর হেরে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেনে-টুনে গ্রুপ পর্বের বাধা অতিক্রম করলেও শেষ ষোলো থেকেই বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় দুইবারের ইউরো জয়ীরা। শনিবার জার্মানির বার্লিনে শেষ ষোলোর ম্যাচে সুইজারল্যান্ড ২-০ গোলে বিধ্বস্ত করে লুসিয়ানো স্পালেত্তির শিষ্যদের। আর তাতেই ৩১ বছর পর ইতালিকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কাটে সুইজারল্যান্ড। 
ইরোপিয়ান ফুটবলের এই শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সফল দল ইতালি। সবচেয়ে বেশি তিনবার করে জেতা জার্মানি আর স্পেনের পরই দুইবার এই টুর্নামেন্টের শিরোপা উঁচিয়ে ধরার নজির আজ্জুরিদের। সর্বশেষ আসরেও ইংল্যান্ডরে হারিয়ে দীর্ঘ ৫৩ বছর পর ইউরোর শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করেছিল রবার্তো মানচিনির দল। ইউরোর মতো বিশ্বকাপেও পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের পর যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপার অধিকারী দলটির নাম ইতালি।

চারবার স্বপ্নের বিশ্বকাপের ট্রফিতে চুমো আঁকার অবিস্মরণীয় কীর্তিগাথা পিরলো-বুফনদের। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম খেলা। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এই ইতালি বিশ্বকাপের সর্বশেষ দুটি আসরে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের পর কাতারে অনুষ্ঠিত ২০২২ বিশ্বকাপেও দর্শকের ভূমিকায় ছিল বিশ্ব ফুটবলের পরাক্রমশালী দলটি।
তবে রাশিয়ার পর কাতারে খেলতে না পারার দুঃখ ঘুচিয়ে উঠার নতুন স্বপ্ন দেখছিল ইতালির ফুটবল সমর্থকরা। তাদের প্রত্যাশা ছিল জার্মানিতে চলমান ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রাখতে পারবে লুসিয়ানো স্পালেত্তির শিষ্যরা। কিন্তু না, এবার শিরোপা ধরে রাখা তো দূরের কথা? ভক্ত-অনুরাগীদের হতাশায় ডুবিয়ে ইউরোর রাউন্ড অব সিক্সটিন থেকেই বিদায় নিল ২০২০ ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল।
ফলে এবারের ইউরোতে ইতালির সঙ্গী হয়েছে কেবল একটি মাত্র জয়। সেটিও প্রথম ম্যাচে আলবেনিয়ার বিপক্ষে। যদিওবা এই ইউরোতে নিজেদের সেই প্রথম ম্যাচে ২৩ সেকেন্ডের মধ্যেই গোল হজম করে বসেছিল আজ্জুরিরা। আলবেনিয়ার নেদিম বাইরামির সেই গোলটি এবারের তো বটেই ইউরোর ইতিহাসেই তা দ্রুততম। এরপর শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে প্রত্যাশিত জয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ইউরোর মিশন শুরু হয়।

কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে স্পেনের কাছে ১-০ গোলে হেরে বসে তারা। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে কোনো রকমে ১-১ গোলে ড্র করে পরের রাউন্ডে জায়গা করে নিলেও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেনি লুসিয়ানো স্পালেত্তির শিষ্যরা।
আর আলবেনিয়ার বিপক্ষে একটি মাত্র জয় নিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে এমন বিদায়ের পর এখন প্রশ্ন উঠছে তাহলে কী ইতালির ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বাজে দল? তিন বছর আগে ২০২১ সালে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের স্বপ্নকে চূর্ণ করে লিওনার্দো বোনুচ্চি, জর্জ কিয়েলিনি, চিরো ইম্মোবিলেদের যে দলটি ইউরো জিতেছিল, তার সঙ্গে এবারের দলটির আকাশ-পাতাল তফাৎ। ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা গ্যারি লিনেকার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ইংলিশ কিংবদন্তি বলেন, ‘আমার মনে হয় না, এ জীবনে আমি ইতালির এত বাজে দল কখনো দেখেছি।’

দলটিতে যে প্রতিভাবান খেলোয়াড় নেই, তা বলা যাবে না। ২০২১ সালে ইউরোজয়ী দলের গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা যা একটু নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। গ্রুপ পর্বে রেকর্ড ১১টি সেভ করেন তিনি। এছাড়া জিওভান্নি ডি লরেঞ্জো, নিকোলো বারেলা, ফেডরিকো চেসিয়ারা এবার নিজেদের তুলে ধরতে পুরোপুরিই ব্যর্থ। এই দল নিয়ে তাই কথা বলেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যালান শিয়েরারও।

বিশেষ করে সুইজারল্যান্ডের মতো দলের কাছে এভাবে হার যেন কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি। সেই ম্যাচের পরই শিয়েরার বলেন, ‘তিন বছর আগে ইউরোতে ইতালি দলটা ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু আমি সত্যিই অবাক এবারের ইতালির দলটাকে দেখে। এত বাজে দল হয়ে গেছে তারা। কোনো পজিশনেই ভালো কিছু দেখলাম না। সুইজারল্যান্ড রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে তাদের নিয়ে। ফরোয়ার্ড পজিশনে তো ইতালিকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি।’
২০২১ সালে ইউরোতে ইতালিকে চ্যাম্পিয়ন করার নেপথ্য নায়ক ছিলেন অভিজ্ঞ কোচ রবার্তো মানচিনি। কিন্তু গত আগস্টে হঠাৎ করেই কোচের পদ ছেড়ে দেন তিনি। এরপরই তার উত্তরসূরী হিসেবে লুসিয়ানো স্পালেত্তির হাতে তুলে দেওয়া হয় ইতালির দায়িত্ব। ১৯৯০ সালের পর তার অধীনেই ২০২৩ সালে নাপোলি ইতালিয়ান সিরি ‘আ’ লিগ জিতেছিল। এরপর নাপোলির দায়িত্ব ছেড়ে নির্ভার সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কোচ হিসেবে প্রথম বড় মঞ্চেই পুরোপুরি ব্যর্থতার গল্প সঙ্গী হলো স্পালেত্তির।

×