ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

জয় হয়েছে ক্রিকেটের

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ৩০ জুন ২০২৪

জয় হয়েছে  ক্রিকেটের

.

প্রিয় পাঠক, ভালোলাগার পরশ সঙ্গী করে আপনাদের সামনে এসেছি। ফাইনাল ম্যাচ এত সুন্দর হয়েছে যার ব্যাখ্যা করা কঠিন। ভারত চ্যাম্পিয়ন আর দক্ষিণ আফ্রিকা রানার্সআপ হয়েছে। যেহেতু খেলা, সেহেতু একটি দলকে হারতেই হয়। সেটাই হয়েছে বার্বাডোজে টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে। কিন্তু আমি বলব, এখানে দুদলই জিতেছে। দুদলের ক্রিকেটাররা অসাধারণ খেলে সবার মন জয় করেছেন। ভারত কাগজে-কলমে চ্যাম্পিয়ন। এটাই লেখা থাকবে ইতিহাসে। তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকা রানার্সআপ এটাও থাকবে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ কিংবা জয়-পরাজয় বড় কথা নয়; এখানে জয় হয়েছে ক্রিকেটের।

আমি আগেই বলেছিলাম, টুর্নামেন্টে সেরা দুটি দলই ফাইনালে এসেছে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা ভারত পুরো টুর্নামেন্টে যেভাবে খেলেছে তাতে তারাই রঙিন মঞ্চে আসার যোগ্য। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। ফাইনালেও তারা হৃদয় জয় করা খেলা উপহার দিয়েছে। ইতিহাস বলে, বেশিরভাগ ফাইনাল ম্যাচই একপেশে হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের টি২০ ফাইনালটি হয়েছে ফাইনালের মতোই। ম্যাচটির পরতে পরতে ছিল উত্তেজনার পারদ। বিরাট কোহলি কত বড় মাপের ক্রিকেটার সেটা তিনি ফাইনাল মঞ্চেই প্রমাণ দিয়েছেন। ফাইনালে আগে ঠিক তাকে চেনা যায়নি! কিন্তু বিশ্বসেরা এই ব্যাটারের ওপর ভরসা ছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট অধিনায়কের। সেটা তিনি ফাইনাল ম্যাচে প্রমাণ করেছেন। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের সময় বুক চিতিয়ে লড়াই করে ভারতকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন।

প্রিয় পাঠক, বিদায় নেয়ার এমন ভালো মঞ্চ আর পেতেন না কোহলি। সে সুযোগটাই তিনি নিয়েছেন অবসর নিয়ে। অধিনায়ক রোহিত শর্মাও কি দুর্দান্ত। পুরো আসরে অসাধারণ খেলেছেন। তিনিও অবসর নিয়েছেন। একটা দলের অধিনায়ক যখন পারফরমেন্স করেন তখন দলের অন্যদেরও ভালো করার তাড়না থাকে। রোহিত নিজে পারফর্ম করেছেন; সতীর্থদের কাছ থেকেও সেরাটা বের করে নিয়েছেন। এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। আমাদের অধিনায়কই তো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দলের ওপর। সত্যি বলতে, ভারত যোগ্য দল হিসেবে এবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপেই তারা সেরা হতে পারত। কিন্তু ফাইনালে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। আমি আগের লেখাগুলোতে বলেছি, ভারত ওই হার থেকে এবার শিক্ষা নিয়ে সতর্কভাবে পথ চলেছে। যার ফল হিসেবে পেয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি।

এই ট্রফিটা ভারত জিততে না পারলে হয়তো ক্রিকেটের জন্যই অমঙ্গল হতো! আমি এটা বলছি কারণ গত এক যুগেরও বেশি সময় ভারত যেভাবে ক্রিকেটের জন্য পরিশ্রম করছে তাতে এই সময়কালে তাদের শোকেসে একটি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ট্রফি থাকা দরকার ছিল। এবার সেটা পূরণ হয়েছে। আমার ধারণা, ভারত সামনেও আরও বড় সাফল্য পাবে। ভারতের এমন সাফল্যের কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটে আমূলে পাল্টে ফেলা। একটা সময় তারা নিজেদের মতো করে উইকেট বানিয়ে ঘরের মাঠে একতরফা সাফল্য পেত। কিন্তু বিদেশের মাটিতে ব্যর্থতার লজ্জায় পুড়তে হতো। ওই অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত উইকেট পরিবর্তন করে স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করে। এরপর তারা যোগ করে আইপিএল। দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রমের ফসল এবার তারা পেয়েছে। তাদেরকে অভিনন্দন।

প্রিয় পাঠক, দক্ষিণ আফ্রিকাও অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। অনেকেই হয়তো এই হারকে চোক বলছেন। কিন্তু আমি সেটা বলব না। সূর্যকুমার যাদব ওই ক্যাচটা নিতে না পারলে হয়তো প্রোটিয়ারাই জিতে যেত। তবু তাদের অভিনন্দন। আসলে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটেরই জয় হয়েছে। পুরো টুর্নামেন্টও বেশ সফল হয়েছে। আয়োজক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ওয়েস্ট ইন্ডিজও বাহবা পাওয়ার দাবিদার।

অনুলিখন : জাহিদুল আলম জয়।

×