ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১

সকালে আফগানদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা

আজ ভারত-ইংল্যান্ড হাইভোল্টেজ সেমিফাইনাল

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:১৭, ২৭ জুন ২০২৪

আজ ভারত-ইংল্যান্ড হাইভোল্টেজ সেমিফাইনাল

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছেন ভারতের ক্রিকেটাররা

টি২০ বিশ্বকাপে আগের আট আসরে মোট ছয়টি দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। উইন্ডিজে শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়ে এখন দুটি দলই কেবল টিকে আছে। একদিকে ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, অন্যদিকে সেই ২০০৭ প্রথম বিশ্বকাপের পর চাতক পাখির মতো দ্বিতীয় শিরোপার অপেক্ষায় থাকা মোড়ল দেশ ভারত। গায়ানায় বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় নিয়ে ‘হাইভোল্টেজ’ এ দ্বিতীয় সেমিফাইনাল শুরু বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটায়।

তার আগে সকাল সাড়ে ছয়টায় প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকিটের লড়াইয়ে প্রথম সেমিতে মুখোমুখি ‘চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকা ও ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময় আফগানিস্তান। টেস্ট ও ওয়ানডেÑ আইসিসির শেষ দুটি বিশ্ব আসরের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার মানা ভারত এবার সুপার এইটেই তাদের বিদায় করে দিয়েছে। ব্যাটে-বলে দুর্বার এগিয়ে চলা রোহিত শর্মাদের সতেরো বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে ইংলিশরাই এখন বড় বাধা। অতি কষ্টে গ্রুপ-পর্ব পেরেনোর পর সেরা আটে ছন্দ খুঁজে পাওয়া জস বাটলারের দলও টানা দ্বিতীয় এবং সর্বোপরি তৃতীয় শিরোপার পথে এগিয়ে যেতে মরিয়া।

উত্তাপ ছড়ানো এ ম্যাচে চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি। স্থানীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস গায়ানায় ৮৮ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ত্রিনিদাদে সকালে আফগানিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে রিজার্ভ ডে থাকলেও, ভারত-ই্যংান্ড ম্যাচে রিজার্ভ ডে নেই। তবে ঐ ম্যাচের জন্য অতিরিক্ত ৪ ঘণ্টা ১০ মিনিট রেখেছে আইসিসি। কিন্তু কোনোভাবেই পরের দিন (শুক্রবার) ম্যাচ আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই। কারণ পরদিনই (শনিবার) ফাইনাল।

বৃষ্টিতে খেলা ভেস্তে গেলে সুপার এইটের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিতে উঠে যাবে ভারত। কপাল পুড়বে ইংল্যান্ডের। বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত কোনো ম্যাচ হারেনি ভারত। গ্রুপ-পর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান কিছুটা ফাইট দিলেও চার ম্যাচের তিনটিতেই জয় পায় রোহিত শর্মার দল, বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ। সুপার এইটে এসে রীতিমতো আগুনে পারফর্ম্যান্স মোড়লদের। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দাপুটে জয়ে গ্রুপÑ১এর শীর্ষে থেকে সেমিতে উঠে আসে ভারত।

তবে প্রতিপক্ষ হিসেবে বড় ম্যাচের বড় দল ইংল্যান্ড। চাপে থাকবে রোহিতের দল। সেই জায়গাটাতেই ফোকাস অধিনায়ক,‘আমরা আলাদা কিছু করতে চাই না। যে ক্রিকেট খেলছি সেটাই খেলতে চাই। কে প্রতিপক্ষ সেটি  দেখার দরকার নেই। ছেলেদের বলেছি, চাপ না নিয়ে নিজেদের মতো খেলতে। এই রকম ক্রিকেট খেললেই আমরা সফল হব।’ তিনি আরও বলেন,‘এখন পর্যন্ত পুরো টুর্নামেন্টেই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। ছেলেরা কোনোরকম চাপ নেয়নি। মাঠে নিজেদের সেরাটা দিতে মরিয়া ছিল তারা এবং ঠিকঠাক সেগুলোর বাস্তবায়নও করেছে। আশা করি, আরও একটি পরীক্ষায় সেরা পারফরমেন্সই দেখাবে দল।’ 
২০০৭ সালে শুরু হওয়া টি২০ বিশ^কাপের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়েছিল তারা। এরপর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ^কাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয় ভারত। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কাছে ৬ উইকেটে হেরে যায় টিম ইন্ডিয়া। ২০১৪ সালের পর আর কখনও টি২০ বিশ^কাপের ফাইনালে খেলতে পারেনি ভারত। দু’বার সেমিফাইনালে খেললেও আর ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। দশ বছর পর আবারও বিশ^কাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ ভারতের সামনে। এই সুযোগকে হাতছাড়া করতে চায় না মোড়ল দেশটি।

দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর ফাইনালে খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের সামনে। এই সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নই আমরা। ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে সেমির লড়াইয়ে নামবে দল।’ অন্যদিকে ২০১০ সালে টি২০ বিশ^কাপের তৃতীয় আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়ে শিরোপা ঘরে তোলে ইংল্যান্ড। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল ইংলিশরা। এরপর ২০১৬ সালের আসরে ফাইনালে উঠলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৪ উইকেটে হেরে যায় ইংল্যান্ড।

মূলত ম্যাচের শেষ ওভারে ক্রেইগ ব্র্যাথয়েটের অবিশ^াস্য ব্যাটিংয়ের সামনে হার মানে ইংলিশরা। শেষ ওভারে ১৯ রানের প্রয়োজনে ইংল্যান্ডের পেসার বেন স্টোকসের প্রথম চার বলে চার ছক্কায় ২৪ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা এনে দেন ব্র্যাথওয়েট। ২০২২ সালে তৃতীয়বারের মতো বিশ^কাপের ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। নিজেদের তৃতীয় ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারায় ইংলিশরা। তাই ২০১০, ২০১৬ ও ২০২২ সালের পর চতুর্থবারের মতো বিশ^কাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ ইংল্যান্ডের সামনে।

ফাইনালে খেলার লক্ষ্য সেমিফাইনালে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না ইংলিশরা। দলের অধিনায়ক জশ বাটলার বলেন,‘আমাদের সামনে চতুর্থ ফাইনাল খেলার সুযোগ। ফাইনালে খেলার সুযোগ যে কেউ লুফে নিবে। আমরাও এর ব্যতিক্রম না। ফাইনালে খেলতে দলের সবাই মুখিয়ে আছে। আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল খেলা।’
তবে গ্রুপ-পর্ব বা সুপার এইটের ম্যাচগুলোর কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে চান না ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বাটলার। ভারতকে আটকাতে বদ্ধপরিকর তারা। বাটলার বলেন, ‘গ্রুপ পর্ব ও সুপার এইটের ম্যাচ এখন অতীত। আমরা সামনের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। সেমিফাইনালে বাধা টপকাতে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে চাই আমরা। কাজটি কঠিন হলেও সেরা ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য ও যোগ্যতা আমাদের দলের  আছে।’ আন্তর্জাতিক টি২০তে এ পর্যন্ত দুই দল মোট ২৩বার মুখোমুখি হয়েছে।

এর মধ্যে ভারতের জয় ১২ ম্যাচে, ইংল্যান্ডের ১১টিতে। শেষ ৫ ম্যাচের ৩টিতে জিতেছে ভারত, শেষ ২টিতে ইংল্যান্ড। এছাড়া টি২০ বিশ্বকাপে ৪ দেখায় সমান ২টি করে জয় দুই দলের। ২০০৭ সালে প্রথম টি২০ বিশ্বকাপে ১৮ রানে জিতেছিল ভারত। এরপর ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের জয় ৩ রানে। ২০১২ সালে ভারতের জয় ৯০ রানে। ২০২২ সালের সেমিতে ইংল্যান্ডের জয় ১০ উইকেটে।

×