ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

ফাইনালের স্বপ্নে বিভোর আফগানিস্তান

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ২৫ জুন ২০২৪

ফাইনালের স্বপ্নে বিভোর আফগানিস্তান

ইতিহাস গড়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার পর অধিনায়ক দর্শকদের ভালোবাসার জবাব

উইন্ডিজ বিশ্বকাপে একের পর এক রূপকথার গল্প লিখে চলেছে আফগানিস্তান। গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়া-বধ; সর্বশেষ উত্তাপ ছড়ানো দ্বৈরথে বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ এক জয়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠে গেছে রশিদ খানের দল। কাবুল থেকে কান্দাহারÑ উৎসবে মাতোয়ারা গোটা আফগানিস্তান। এ নিয়ে গর্ব আর উচ্ছ্বাস থাকলেও আনন্দের আতিশয্যে ডুবতে চান না দেশটির ক্রিকেটের বড় তারকা।

কারণ ত্রিনিদাদে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায় প্রথম সেমিতে তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। ‘এটা অনেক বড় অর্জন। সেই গ্রুপ পর্ব থেকে এ পর্যন্ত আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে সেমিফাইনালটা আমাদের প্রাপ্যই ছিল। এখন সেমির দিকে তাকিয়ে আছি। বিশ্বকাপে আমরা যা করেছি, অনেক সময় যেসব বিষয় আমাদের পক্ষে এসেছে... তার সবকিছু (প্রক্রিয়া) স্বাভাবিক রাখতে হবে। সেমিতে আরও বড় উপলক্ষটা যেন উপভোগ করতে পারি, তা নিশ্চিত করতে হবে।’ বলছিলেন রশিদ।
২০১৮ ও ২০২২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছে আফগানিস্তান। বড়দের ক্রিকেটে এবারই প্রথম তারা উঠল সেরা চারে। রশিদ বলেন, ‘আমার মতে, সেমিফাইনালে খেলাটা দেশের তরুণদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণার উৎস হবে। আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে এর আগে সেমিফাইনাল খেলেছি। তবে এই পর্যায়ে কখনো করিনি। এমনকি সুপার এইটে ওঠাও আমাদের জন্য প্রথম ছিল। অবিশ্বাস্য অনুভূতি। আমাদের সামর্থ্য আছে তবে সেটা যতক্ষণ আমরা সব কিছু স্বাভাবিক রাখছি।

আমার মতে, পুরো টুর্নামেন্টে আমরা সবকিছু স্বাভাবিক রেখেছি। হ্যাঁ, কঠিন ছিল সময় এসেছে বটে। তবে আমরা নিজেদের হতাশ করিনি এবং সবসময় শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা করি।’ টি২০ বিশ্বকাপ শুরু হয় ২০০৭ সালে। বাছাই পেরিয়ে আফগানিস্তান প্রথম সুযোগ পায় ২০১০ সালের তৃতীয় আসরে। সেই থেকে তিনবার বিদায় নেয় প্রথম রাউন্ড থেকে। সর্বশেষ তিন আসরে খেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত নবম বিশ্বকাপে এবার ৭ ম্যাচে ৫ জয় পেয়েছে আফগানিস্তান। দলটির এটিই এক আসরে সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ড। ২০১৬ সালে ৭ ম্যাচে ৪টি জিতেছিল তারা। তবে সেবার সুপার টেন থেকে পরের ধাপে যেতে পারেনি। গ্রুপের পাঁচ দলের মধ্যে সবার নিচে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করেছিল।
গ্রুপ-পর্বেই নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে বিদায় করে এবার আইসিসির বৈশ্বিক আসরের সফলতম দল, সাবেক চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ানদের হাতে প্লেনের টিকিট ধরিয়ে দিল রশিদ খানের দল। ভারতের কাছে ৪৭ রানের হারের পর অজিদের বিপক্ষে ২১ রানের ঐতিহাসিক জয়ে ঘুরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান। কার্যত নক-আউট হয়ে ওঠা শ্বাসরুদ্ধকর শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে বৃষ্টি আইনে ৮ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় রশিদ-বাহিনী। তাতে বিদায় ঘণ্টা বাজে অস্ট্রেলিয়ার।

তালেবান শাসন, অধিকার বঞ্চিত নারীÑ এমনি সব অভিযোগে গত কয়েক বছরের আফগানিস্তানের সঙ্গে একের পর এক দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া। সেন্ট ভিনসেন্টে পরাক্রমশালী সেই অজিদের হারিয়ে ইতিহাস গড়ে আফগানরা, যে কোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে যা তাদের প্রথম সাফল্য। সেদিনই রশিদ খান বলেছিলেন, বিশ্বকাপে খেলতে পারলে দিপক্ষীয় সিরিজে কেন নয়?

সবাই আফগান স্পিন নিয়ে ভাবলেও অবিস্মরণীয় সেই জয়ে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে ২০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইব। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৬ রানে ৪ শিকারে নায়ক বনে যান আরেক পেসার নাভিন উল হক। আসরজুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। 
দারুণ বোলিং করেছেন তিন পেসার ফজল হক ফারুকী, নাভিন উল হক ও গুলবাদিন নাইব। টি২০তে এ পর্যন্ত দুবার মুখোমুখি হয়ে দুবারই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দুটিই টি২০ বিশ্বকাপে, ২০১০ সালে ৫৯ রানে ও ২০১৬ সালে ৩৭ রানে।

×