লিওনেল মেসি।
বার্সেলোনার জার্সি গায়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন লিওনেল মেসি। স্প্যানিশ ক্লাবটির সঙ্গে যাত্রা শুরু হয়েছিল তার। ফুটবল প্রেমীরা সবাই জানেন, কীভাবে একটি ‘ন্যাপকিন পেপারে’ মেসির সঙ্গে চুক্তি করেছিল ব্লাউগ্রানারা। মেসির পরিবারকে মধ্যাহ্নভোজে ডেকে ঐতিহাসিক চুক্তিপত্র সেরে ফেলেন একটা ন্যাপকিন পেপারে। শেষ পর্যন্ত ন্যাপকিন পেপারটি বিক্রি হলো ৯ লাখ ৬৫ হাজার ডলারে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১১ কোটি।
শুক্রবার (১৮ মে) ব্রিটিশ অকশন হাউস বোনহামসের মাধ্যমে বিক্রি হয়ে গেল সেই মেসি-বার্সেলোনার ঐতিহাসিক প্রথম চুক্তির প্রমাণপত্র।
ব্রিটিশ নিলাম প্রতিষ্ঠান ধারণা করেছিল ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে এর দাম। কিন্তু তাদের চমকে দিয়ে এই ন্যাপকিনের দাম উঠেছে ৯ লাখ ৬৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১১ কোটি ২৯ লাখ ৯৩ হাজার ২০১ টাকা)। নিলামে এর ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ডলার।
সাড়ে ছয় বাই সাড়ে ছয় ইঞ্চির এ ন্যাপকিনের নিলামপ্রক্রিয়ার দায়িত্বে ছিল যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান বোনহামস। ১৮ মার্চ নিলাম শুরু হয়, চলে ২৭ তারিখ পর্যন্ত।
বার্সা ও মেসির মধ্যকার সেই ন্যাপকিন পেপারে করা চুক্তিতে লেখা ছিল, বার্সেলোনায় ১৪ ডিসেম্বর, ২০০০ সালে মিনগেলা, হোরাশিও আর বার্সার ক্রীড়া পরিচালক কার্লোস রেক্সাসের উপস্থিতিতে পূর্ণ দায়িত্বের সঙ্গে নির্দিষ্ট অঙ্কে লিওনেল মেসিকে সই করানোর ব্যাপারে একমত হওয়া গেল। নীল কালিতে স্প্যানিশ লেখার বাংলা অনুবাদ এমনটাই।
এ সময় নিজের তত্ত্বাবধানে মেসির যত্ন নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন রেক্সাস। পরে এক সাক্ষাৎকারে রেক্সাস জানিয়েছিলেন, দুই পক্ষ মৌখিকভাবে সম্মত হওয়ার পর হাতের কাছে আর কিছু ছিল না। পরে হোটেলে ন্যাপকিনে স্বাক্ষর করিয়েছিলেন মেসিকে। মেসির নাম থাকলে বিশ্বাসযোগ্যতা আরো বাড়বে বলে র্জজকে (মেসির বাবা) রাজি করিয়ে ছিলেন তিনি।
লিওনেল মেসির বয়স তখন ১৩ বছর। পরিবার নিয়ে বার্সেলোনায় যান তিনি। সঙ্গে ছিলেন দুই আর্জেন্টাইন প্রতিনিধি ফ্যাবিয়ান সোলদিনি এবং মার্তিন মনতেরো এবং স্পেনের প্রতিনিধি হোরাশিও গ্যাগিওলি। ট্রায়ালে সবাইকে চমকে দিলেন মেসি। ফলে চুক্তির আশা নিয়ে নিজ শহর রোজারিওতে ফিরলো মেসি ও তার পরিবার। বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট তখন হুয়ান গাসপার্ত। তিনি ভেবেছিলেন, তাড়াহুড়ো করে মেসির সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কিছু সময় নিতে চেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু গ্যাগিওলি সভাপতিকে বললেন, দ্রুত চুক্তি না হলে অন্য ক্লাবে মেসিকে নিয়ে যাবে, এমনকি হতে পারে তা রিয়াল মাদ্রিদও। এরপর হঠাৎ একদিন বার্সার ক্রীড়া পরিচালক কার্লোস রেক্সাস মেসির পরিবারকে দুপুরের খাবারের নিমন্ত্রণ করেন। সেখানেই হয় এই ঐতিহাসিক চুক্তি।
২০২১ সালে বার্সা ছাড়ার আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগাসহ ৩৫টি ট্রফি জেতেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। যেখানে রয়েছে চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ১০টি লা লিগা শিরোপা। ক্লাবকে সামনে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মেসি নিজেকে নিয়ে গেছেন কিংবদন্তির কাতারে। ২০২১ সালে মেসি যোগ দেন পিএসজিতে। গত বছর ফরাসি ক্লাবটি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন মেসি।
এম হাসান