
দল ঘোষণা করছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, পাশে নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক ও হান্নান সরকার
অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে বাংলাদেশের টি২০ বিশ^কাপ দল ঘোষণা করা হয়েছে মঙ্গলবার দুপুরে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এই দল ঘোষণা করেন নির্বাচক প্যানেলের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। সেই দলে খুব বেশি চমক নেই, তবে প্রশ্ন তোলার মতো নানা ব্যাপারই ছিল।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে ঘোষিত দল নিয়ে। অধিকাংশ প্রশ্নই উঠেছে পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন কেন বাদ পড়েছেন সে বিষয়ে। যদিও দল ঘোষণার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব সেরে প্রধান নির্বাচক লিপু কিছুটা চ্যালেঞ্জই জানিয়েছেন, কাউকে দলে না নেওয়ার বিষয়ে কোনো মতামত জানানোর পাশাপাশি কাকে নিলে ভালো হতো যুক্তি সহকারে সেই পরামর্শও দেওয়ার।
ইনজুরি সমস্যা, বেশকিছু ক্রিকেটারের ফর্মহীনতাসহ নানাদিক বিবেচনা করে সর্বোচ্চ সেরা দলই দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তার। ১৫ জনের স্কোয়াডে সবচেয়ে বড় চমক ইনজুরি থাকলেও ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদকে সহঅধিনায়ক করা। যথারীতি নাজমুল হোসেন শান্তই অধিনায়ক। এ সময় তিনি দাবি করেছেন, সবাই ফর্মের সঙ্গে লড়ছেন তাই সেখান থেকে সম্ভাব্য সেরাদেরই বেছে নেওয়া হয়েছে। আজ মধ্যরাতে দল যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি২০ সিরিজে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে। যারা নিয়মিত টি২০ ফরম্যাটে খেলছেন তাদের নিয়েই হয়েছে পরীক্ষা। কারণ তারা ফর্মের সঙ্গে নিয়মিতই লড়াই করে যাচ্ছিলেন।
ওপেনার লিটন রান খরায় ভুগছিলেন, অধিনায়ক শান্তও ঠিক ছন্দে নেই, টপঅর্ডার ভালো করলে মিডলঅর্ডার ব্যর্থ এবং টপঅর্ডার ব্যর্থ হলে মিডলঅর্ডার লড়াই করেছে। বোলারদের মধ্যে ধারাবাহিকতার ঘাটতি দেখা গেছে। তাই দল ঘোষণার এক পর্যায়ে লিপু বলেছেন, ‘সবাই তো ফর্মের সঙ্গে লড়ছে। কেউ খুব ভালো ফর্মে নেই।
এর মধ্যে থেকেই আমরা সবাই আলোচনা করে সম্ভাব্য সেরা দল দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি তারা ছন্দে ফিরবে এবং বিশ^কাপে গিয়ে নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দেবে।’ ১৫ জনের স্কোয়াডে ৪ পেসার, ৩ স্পিনার, ২ অলরাউন্ডার ও ৬ ব্যাটার রাখা হয়েছে। মূলত কন্ডিশন বিবেচনায় জেনুইন স্পিনারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কারণ বিশ^কাপে স্পিনারদের জন্য সহায়ক থাকতে পারে উইকেট।
আর সে কারণেও সাইফউদ্দিন শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের ৪ ম্যাচে ৮ উইকেট নিতে পারলেও দেদার রান দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে ডেথ ওভারে তার দুর্দান্ত বোলিং করার সক্ষমতায় দৃষ্টি দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট এবং সেক্ষেত্রেই তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তানজিম হাসান সাকিব ভালো করতে না পারলেও তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে লিপু বলেছেন, ‘দুটো রাস্তা ছিল আমাদের সামনে– প্রথমত দলে থাকা ফিট ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে নির্বাচন, দ্বিতীয়ত বাকিদেরও পরখ করে দেখা। আমরা চোট থেকে ফেরা সাইফউদ্দিনের পারফর্ম্যান্স দেখতে চেয়েছিলাম, তার ওপর অবশ্যই আমাদের আস্থা ছিল।
তবে এই সিরিজে আমাদের আস্থার জায়গায় কিছুটা এগিয়ে তানজিম। সে কারণে সাইফউদ্দিনকে রাখা হয়নি। সাকিবকে আমরা শ্রীলঙ্কা সিরিজেও দেখেছি। তার একাগ্রতা ও আগ্রাসন খুব ভালো। তার সঙ্গে সাইফউদ্দিনের প্রতিযোগিতা চলছিল। সে জায়গায় সাকিব উৎরে গেছে।’
ঘোষিত দলে এবার বেশ বৈচিত্র্য রাখতে পেরেছে নির্বাচকরা। কারণ এখানে জেনুইন বাঁহাতি স্পিনার, অফস্পিনার এবং লেগস্পিনার আছেন। কয়েকজন ভালো হিটার আছেন, অভিজ্ঞ ও তরুণ ক্রিকেটারের মিশেল রয়েছে। অলরাউন্ডার রয়েছেন এবং ডানহাতি-বাঁহাতির প্রায় সমানে-সমান উপস্থিতি রয়েছে।
১৫ জনের স্কোয়াডে ৭ বাঁহাতি ও ৮ জন ডানহাতি। এই স্কোয়াডে প্রথমবার বিশ^কাপ খেলার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন- বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম, বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম, ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়, উইকেটরক্ষক জাকের আলী অনিক, লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন ও পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
তবে ইনজুরির কারণে অনিশ্চিত তাসকিনকে সহ-অধিনায়ক করার ঘোষণা আরেকটি বড় চমক। কারণ তিনি শেষ পর্যন্ত খেলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আছে যথেষ্ট সংশয়। ৩ সপ্তাহের মতো সময় লাগবে তার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে খেলায় ফিরতে।
এ বিষয়ে লিপু বলেছেন, ‘ইনজুরি আক্রান্ত ক্রিকেটারকে বিশ^কাপ স্কোয়াডে রাখা যাবে এবং যদি শেষ পর্যন্ত না খেলতে পারেন সেক্ষেত্রে যে কোনো সময় পরিবর্তন আনা যাবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আগেই সিদ্ধান্ত তাসকিনকে সহঅধিনায়ক করার। তিনি বিশ^কাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের সিরিজে খেলার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বিশ^কাপে সুস্থ হয়ে ফেরার সুযোগ রয়েছে।
তাই তাকে আমরা সঙ্গে রেখেছি আমাদের অন্যতম সেরা বোলার হওয়ার কারণে।’ এই দলটিকে নিয়ে প্রত্যাশার বিষয়ে লিপু বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই জাতীয় দলের কাছে প্রত্যাশা আছে। আমরা যেন প্রথম রাউন্ড পার করে পরের রাউন্ডে যেতে পারি। দ্বিতীয় রাউন্ডে গেলে সেখান থেকে আরও একটা প্রচেষ্টা থাকবে পরের রাউন্ডে যাওয়ার.. প্রত্যাশা থাকবে।’
টি২০ বাংলাদেশ দল ॥ নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ (সহ-অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, তানভীর ইসলাম, শেখ মেহেদি হাসান, রিশাদ হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব। ট্র্যাভেলিং রিজার্ভ ॥ হাসান মাহমুদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব।