ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

দ্বিতীয় দিন শেষে ৪৪ রানে পিছিয়ে নিউজিল্যান্ড

সিলেটে তাইজুলের ভেল্কি

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

সিলেটে তাইজুলের ভেল্কি

তাইজুল ইসলাম

অভিজ্ঞতা অমূল্য সম্পদ, ক্রিকেটে তা অনেকবারই প্রমাণ পাওয়া গেছে। এবার টেস্ট দলে নবীন হাসান মুরাদ বেশ ভালোভাবেই সাড়া জাগিয়ে টেস্ট দলে ঠাঁই পেয়েছেন। সাকিব আল হাসান না থাকায় অভিজ্ঞ তাইজুল ইসলামের বোলিং সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল ছিল তার। কিন্তু অভিজ্ঞ তাইজুলের ওপরেই ভরসা রেখেছে বাংলাদেশ। তিনি চিরাচরিত নিয়মেই দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। 
সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় দিন তার বাঁ-হাতের ভেল্কিতেই নড়বড়ে হয়ে পড়া অবস্থান দৃঢ় হয়েছে বাংলাদেশের। বুধবার ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে তাইজুল দুর্দান্ত বোলিং করেছেন এবং তার নেওয়া ৩ উইকেটেই অনেক ভালো একটি অবস্থান থেকে সরে গিয়ে এখন সফরকারী নিউজিল্যান্ড পিছিয়ে পড়েছে। এমনকি অনেকগুলো সুযোগ দিয়ে রেকর্ড শতক হাঁকানো কেন উইলিয়ামসনকেও শিকার করেছেন তিনি। সবমিলিয়ে তাইজুল একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট। তাই কিউইরা ৪৪ রানে পিছিয়ে থেকে শেষ করেছে দিন। ৮ উইকেটে ২৬৬ রান নিয়ে এখন কিউইদের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়েছে। তবে উজ্জ্বল হয়েছে বাংলাদেশের লিড নেওয়ার আশা।

দ্বিতীয় দিনের শুরুতে প্রথম বলেই বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেমে যায়। এরপর নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম থেকেই বেশ দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল। টম লাথাম ও ডেভন কনওয়ে দেখেশুনেই খেলছিলেন। একাদশে থাকা একমাত্র পেসার শরিফুল ইসলাম ও ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ শুরু থেকেই বোলিং করে তাদের ধৈর্যে চিড় ধরাতে পারেননি। কিন্তু ১৩তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন তাইজুল। ওই ওভারের পঞ্চম বলে তিনি ৪৪ বলে ২১ রান করা লাথামকে সাজঘরে ফেরান। তাইজুলের শুরু করা আঘাতের পর মিরাজও সাফল্য পেয়েছেন কিছুক্ষণ পর কনওয়েকে (১২) ফিরিয়ে। কিন্তু উইলিয়ামসন ও হেনরি নিকোলস দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন। দু’জনেরই বাংলাদেশের বিপক্ষে বেশ সমৃদ্ধ রেকর্ড। সেটাই যেন আরেকবার প্রমাণ করেছেন।

তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে ৫৪ রানের জুটি। ফিরতি স্পেলে এসে অবশ্য শরিফুল ফিরিয়েছেন নিকোলসকে। কিন্তু কেউ সুবিধা করতে পারছিলেন না সেভাবে। এমনকি তাইজুলও আহামরি কোনো বোলিং পারফর্ম্যান্স দেখাতে পারছিলেন না। সাধারণত নিখুঁত লাইন-লেংন্থে বল করতে পারঙ্গম এ বাঁহাতি স্পিনারের এদিন অ্যাকুরেসিতেও যেন সমস্যা হয়েছে। এক সময় ১৪ ওভার শেষে ওভারপ্রতি ৪ রানেরও বেশি করে ৬০ রান খরচা করেছেন তিনি। তাই নিউজিল্যান্ডও তাদের সংগ্রহ বড় করতে থাকে। 
একটানা ১৪ ওভার বোলিং করেছেন তাইজুল তার প্রথম স্পেলে। ৮ ওভার বিরতি পেয়েছেন। প্রান্ত বদল করে নিজের দ্বিতীয় স্পেলে অবশেষে ইনিংসের ৪৮তম ওভারে এসে প্রথম বলেই আঘাত হেনেছেন তিনি। ভেঙেছেন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি। এবার তাইজুলের শিকার হয়েছেন আক্রমণাত্মক ড্যারিল মিচেল। ক্যারিয়ারে প্রথমবার স্টাম্পিং হয়েছেন তিনি তাইজুলের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে। ৫৪ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ৪১ করা মিচেলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে মহা গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন তাইজুল।

উইলিয়ামসনের সঙ্গে ৬৬ রানের জুটি গড়েছেন তিনি। চা বিরতির মাত্র কিছুক্ষণ আগে পাওয়া সেই উইকেটে কিছুটা উজ্জীবিত হয়েছে স্বাগতিকরা। আর তাই চা পানের বিরতি শেষেই অফস্পিনার নাঈম হাসান আঘাত হানেন এবং ফিরিয়ে দেন টম ব্লান্ডেলকে (৬)। কিন্তু গ্লেন ফিলিপস ও উইলিয়ামসন আবার বড় জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডকে লিড পাওয়ার মতো ভিত গড়ে তোলেন। তারা ৭৮ রানের জুটি গড়েন মাত্র ১৮.৪ ওভার একসঙ্গে থেকে। 

এবার অবশ্য অনিয়মিত মুমিনুল হক বল হাতে নিয়েই ৬২ বলে ৫ চার, ১ ছয়ে ৪২ রান করা ফিলিপসকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু দিয়েছেন। এরপর তাইজুলের ঘূর্ণি অসহনীয় হয়ে ওঠে নিউজিল্যান্ডের জন্য। ব্যক্তিগত ৬৩ রানে ডিপ মিডউইকেটে একেবারেই সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন অভিজ্ঞ উইলিয়ামসন। নাঈমের বলে ক্যাচটি নিতে পারেননি তাইজুল। সেই উইলিয়ামসন সুযোগ পেয়ে ক্যারিয়ারের ২৯তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ফলে অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লার্ক, দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলাকে ছাড়িয়ে টেস্ট শতকের সংখ্যায় কিংবদিন্ত স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ভারতের বিরাট কোহলিকে স্পর্শ করেছেন তিনি। ব্র্যাডম্যান ৭৯ ইনিংসে, কোহলি ১৮৭ ইনিংসে ২৯ সেঞ্চুরি করেছেন।

সেখানে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বাধিক টেস্ট শতকের রেকর্ডধারী উইলিয়ামসন ২৯ সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র ১৬৫ ইনিংসে। তার চেয়ে ব্র্যাডম্যান ছাড়া আর দ্রুততম ২৯ শতক করা দুইজন হচ্ছে শচীন টেন্ডুলকর ১৪৮ ইনিংস ও স্টিভেন স্মিথ ১৫৫ ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ২০৫ বলে ১১ চারে ১০৪ করা উইলিয়ামসনকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সাফল্য এনে দিয়েছেন তাইজুল। পরের ওভারেই আবার ইশ সোধিকে (০) সাজঘরে ফিরিয়েছেন। তাইজুলের এই দুর্দান্ত বোলিংয়েই ৮ উইকেটে ২৬৬ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে কিউইরা।

৩০ ওভারে ৭ মেডেন দিয়ে ৮৯ রানে ৪ উইকেট নেওয়া তাইজুল এখন অপেক্ষায় ক্যারিয়ারে ১২তম বার ৫ উইকেট নেওয়ার। আরও দুটি উইকেট হাতে নিউজিল্যান্ডের, তাইজুল যদি একটিও শিকার করতে পারেন বাংলাদেশ লিড নিতে পারবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৯ সালে ওয়েলিংটন টেস্টেই শুধু বোলিং করেন এক ইনিংস এবং ২ উইকেট নেন। মাত্র দ্বিতীয়বার তাদের বিপক্ষে বোলিং করতে নেমেই ভেল্কি দেখিয়েছেন।

×