রকিবুল হাসান
প্রিয় পাঠক, দেখতে দেখতে বিশ্বকাপ শেষের দিকে। লিগ পর্বের লম্বা লড়াই শেষে সেরা চারটি দলই সেমিফাইনালে উঠে এসেছে। আমি বিশ্বকাপের শুরুর দিকেই লিখেছিলাম, এবার সেরা চারে খেলার দৌড়ে সবচেয়ে ফেভারিট ভারত, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড তাদের ইতিহাসের বাজে ফল করেছে। কিন্তু বাদবাকি চারটি দল তাদের যোগ্যতা দিয়েই সেমির মঞ্চে এসেছে।
সেমিফাইনালের চার দলের মধ্যে শক্তিমত্তায় বাকি তিন দলের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। এর অনেক কারণ আছে, যা আমি আগের লেখাগুলোতেও বলেছি। একমাত্র ভারতই এবার লিগ পর্বের সবগুলো অর্থাৎ টানা নয়টি ম্যাচ জিতে সেরা চারে এসেছে। রোহিত শর্মার দল স্বাগতিক হওয়ায় কন্ডিশন ও পরিবেশেরও সুবিধা পাচ্ছে। এটা বললে আসলে তাদেরকে খাটো করা হয়। ভারত দল হিসেবেই সবার চেয়ে এগিয়ে। তাদের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব বিভাগেই বৈচিত্র্যে ভরপুর। একজনের বদলি হিসেবে আরেকজনও সেরাটা দিতে মুখিয়ে আছেন। এতটাই বৈচিত্র্যপূর্ণ দল যে, কোনো জায়গাতে ঘাটতি নেই। যে কারণে সেমিতে অন্যদের চেয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে থেকে খেলবে ভারত।
প্রিয় পাঠক, ভারত এগিয়ে থাকলেও এখানে কিন্তু শক্তির পার্থক্য খুব একটা নেই। প্রতিটি দলই জয়ের জন্য জানপ্রাণ বাজি রেখে নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কেউ কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছেড়ে কথা বলবে না। এখানে স্নায়ুর চাপ থাকবে। এটা কাটিয়ে যারা স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারবে, তাদের জয় পাওয়া সহজ হবে। স্বাগতিক হিসেবে ভারতের ওপর বাড়তি চাপ থাকবে। তবে কোহলি, রাহুল, শামিদের চাপ নিয়ে খেলার অভ্যাস আছে। আমার ধারণা, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন ব্যাটাররা।
ম্যাচগুলোতে প্রচুর রান হবে। যে কারণে বোলারদের খুব বেশি কিছু করার থাকবে না। কোয়ালিটি বোলাররা তাদের মুন্সিয়ানা দেখিয়ে হয়তো সফল হবেন। এখানেও ভারতীয় বোলাররা এগিয়ে থাকবেন। আগে ব্যাট করা দল বড় স্কোর করতে পারলে সেটা চেজ করা কঠিন হবে। মোমেন্টাম ধরে রেখে কোনো দল যদি প্রথমে ব্যাট করে, তাহলে বড় স্কোর গড়া সহজ হবে। ব্যাটে-বলে ধুন্ধুমার লড়াই হলেও ব্যাটারদের আধিপত্য বেশি থাকবেÑ এটা বলাই বাহুল্য। সেমির আগে কয়েকদিন বিশ্রাম পেয়েছে দলগুলো। এই সময়ে প্রতিটি দল প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে কাজ করছে। যে কারণে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আমি আশা করছি।
প্রিয় পাঠক, এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কথাও বলতে হয়। টাইগাররা এবার সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে ভারত গিয়েছিল। কিন্তু আমি আগেই বলেছিলাম, সে স্বপ্ন দেখিনা; তবে প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু প্রত্যাশার ন্যূনতম প্রতিদান দিতে পারেননি আমাদের ক্রিকেটাররা। তারা এতটা খারাপ করবে কল্পনাতেও ভাবিনি। দেশবাসীও হতাশ হয়েছেন। যে কারণে কষ্ট তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। বাজে এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখন থেকেই নিতে হবে। শুধু ক্রিকেটারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে, চার বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে।
অনেকেই হয়তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ পেয়েছে, এই সুখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। কিন্তু এটা তেমন কিছুই না। দশ দলের মধ্যে আট নম্বর হওয়া চরমতম লজ্জার। আরেকটি বিষয় হয়তো অনেকের মাথাতে নেই। দল এত খারাপ করায় আইসিসির ফিউচার টু প্ল্যানে বাংলাদেশ বড় ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে না। বড় দেশগুলোও আমন্ত্রণ জানাতে চাইবে না। এসব নেতিবাচক বিষয় থেকে বের হয়ে আসার জন্য সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।
অনুলিখন : জাহিদুল আলম জয়