বিশ্বকাপে ব্যার্থ বাংলাদেশ
বিশ্বকাপের আগে অন্তত সেমিতে যাওয়ার স্বপ্ন ছিলো বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচটা জিতে শুরুটাও হয়েছিলো সুন্দর সকালের মতো উজ্জ্বল করে। তবে পুরো বিশ্বকাপটা আলোকিত হয়নি, বিশ্বকাপে সময় যতই গড়িয়েছে ততই ব্যার্থতার অন্ধকারে ডুবেছে সেমির সেই আশা। যদিও মাঝে শ্রীলঙ্কার সাথে একটা জয় কিছুটা আনন্দ যুগিয়েছে কিন্তু বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সাথে হার যেনো সে কথাই মনে করিয়ে দেয়, শেষ খারাপ যার সব খারাপ তাঁর।
আরও পড়ুন : বুড়ো রিয়াদই কি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার!
আজ রবিবার (১১ নভেম্বর) নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলো টিম টাইগার। পুঁজিটাও খারাপ ছিল না। এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ৩০০ রানের গণ্ডি পার করে অস্ট্রেলিয়াকে ৩০৭ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
তবে আবারও ব্যার্থ বোলাররা, লড়াইটাও করতে পারলো না তাসকিনরা। এক মিচেল মার্শই যেন হারিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে। তার ১৭৭ রানের হার না মানা ইনিংসে ৩০৭ রানের লক্ষ্যও অনায়াসে টপকে গেলো অস্ট্রেলিয়া। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা জিতেছে ৮ উইকেট আর ৩২ বল হাতে রেখেই।
রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়াকে শুরুতেই ধাক্কা দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। দলীয় ১২ রানের মাথায় ট্রাভিস হেডকে (১০) বোল্ড করে ফেরান টাইগার গতিতারকা।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে মিচেল মার্শ আর ডেভিড ওয়ার্নার গড়েন সেঞ্চুরি জুটি। ১১৬ বলে গড়া তাদের ১২০ রানের জুটিটি অবশেষে ভেঙেছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
কাটার মাস্টারের বলে মিডঅনে নাজমুল শান্তর হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন ওয়ার্নার। ৬১ বলে ৬ বাউন্ডারিতে অসি ওপেনার করেন ৫৩ রান।
ওই পর্যন্তই। তৃতীয় উইকেটে ১৩৫ বলে ১৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ বের করেই মাঠ ছেড়েছেন মিচেল মার্শ আর স্টিভেন স্মিথ। ১৩২ বলে ১৭ চার আর ৯ ছক্কায় ১৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন মার্শ। এটি তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। ৬৪ বলে অপরাজিত ৬৩ করেন স্মিথ।
এর আগে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। ১৫.১ ওভারেই টাইগাররা পৌঁছেছিল ১০০ রানের মাইলফলকে। ৩ উইকেট হারিয়ে ২০০ পূরণ করে ৩৩ ওভারে। এরপর তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটে ভর করে এবং সঙ্গে বাকি ব্যাটাররা মিলে বাংলাদেশের রান পার করেছে ৩০০’র গণ্ডি।
পুরো বিশ্বকাপে এ নিয়ে দুটি ওপেনিং জুটি হলো মোটামুটি সন্তোষজনক। একটি ভারতের বিপক্ষে, আরেকটি আজ শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ৭৬ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়লেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস এবং তানজিদ হাসান তামিম।
কারও ব্যাট থেকে সেঞ্চুরি আসেনি। তবে মাঝারিমানের বেশ কয়েকটি ইনিংসই বাংলাদেশের স্কোর ৩০০ পার করে দিয়েছে। ৭৯ বলে ৭৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন তাওহিদ হৃদয়। ৫৭ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩৬ রান করে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন তানজিদ হাসান তামিম এবং লিটন দাস। ৩২ রান করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দারুণ সূচনা এনে দেন লিটন এবং তানজিদ তামিম। দুজনই প্রথম ১০ ওভার পার করেন স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করে।
অবশেষে ১১.২ ওভারের মাথায় ভাঙে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। ৩৪ বলে ৩৬ রান করে সিন অ্যাবটের বলে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বাংলাদেশ দলের তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। ৬টি বাউন্ডারির মার মারেন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ৩০ রানের জুটি গড়েন লিটন দাস। ১৬.৪ ওভারে ১০৬ রানের মাথায় আউট হন বাংলাদেশ দলের এই ওপেনার। ৪৫ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। বাউন্ডারির মার মারেন ৫টি।
অধিনায়ক শান্তর জন্য দুর্ভাগ্য, ৫ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি হলো না। ৪৫ রান নিয়ে যখন ব্যাট করছিলেন তখন দ্রুত দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হন তিনি।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং তাওহিদ হৃদয় জুটি চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু ৪৪ রানের জুটি ভেঙে যায় রানআউটের কারণে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ রানআউট হন ২৮ বলে ৩২ রান করে। মুশফিকুর রহিমও আশা জাগিয়ে আউট হয়েছেন ২১ রান করে। মেহেদী হাসান মিরাজ ২০ বলে ২৯ রান করে আউট হন।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ গিয়ে থামে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি উইকেট করে নেন সিন অ্যাবট এবং অ্যাডাম জাম্পা। ১ উইকেট নেন মার্কাস স্টয়নিস।
এবি