সাকিব-ম্যাথিউস
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘টাইমড আউট’ হয়েছেন ম্যাথিউস। তবে এ ঘটনা ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬ বার ঘটেছিল। কেউ বন্যার কারণে, কেউ ফ্লাইট মিস করে হয়েছিলেন ‘টাইমড আউট’। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ বিশেষভাবে আলোচনায় আসে লঙ্কান অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ‘টাইমড আউট’ হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরায়।
আরও পড়ুন : মাঠে নামার আগে অন্য লড়াই
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ২৫তম ওভারের ঘটনা। লঙ্কান ক্রিকেটার সাদিরাবিক্রমাকে আউট করেছিলেন সাকিব। ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ঠিক সময়ই মাঠে নামেন। স্ট্রাইক এন্ডে তার ব্যাট করার কথা। কিন্তু ক্রিজে এসেও করতে পারেননি হেলমেটের ঝামেলায়। হেলমেটের ফিতা খুলে যাওয়ায় পরিবর্তন করতে ডেকেছিলেন দ্বাদশ ক্রিকেটারকে। ক্রিকেটারের দেরি দেখে আম্পায়ারের কাছে আউটের আবেদন করে বসেন সাকিব।
টেলিভিশনে দেখা গেছে, আউট নিয়ে মাঠেই ম্যাথিউস আম্পায়ারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে সাকিবের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কিন্তু সাকিব তাকে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। যদিও আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত বদলাননি।
মাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে টাইগার অধিনায়কের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ম্যাথিউস কী বলেছিলেন। জবাবে সাকিব বলেন, ২০০৬ সাল থেকে একে অপরের বিপক্ষে খেলে আসছি। আমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনেক ম্যাচ খেলেছি। আমি তাকে ভালোভাবে চিনি, সেও আমাকে ভালোভাবে চেনে। সে আমাকে এসে জিজ্ঞেস করেছে আমি আবেদন তুলে নেব কি না। আমি বলেছি, আমি তোমার পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু আমি সেটা করব না।
এরপর সাকিব ম্যাথিউসের এমন আউটের ব্যাখা করতে গিয়ে জানান, আমাদের একজন ফিল্ডার আমার কাছে এসে বলল, যদি আমি আবেদন করি তাহলে (ম্যাথিউস) সে আউট হয়ে যাবে। এরপর আমি আবেদন করি এবং আম্পায়ার আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি সিরিয়াস কি না। এটা নিয়মে আছে, জানি না সেটা ভুল নাকি সঠিক।
কোন খেলোয়াড় আপনাকে আবেদন করার বুদ্ধি দিয়েছিলেন এই প্রশ্নে সাকিব বলেন, ‘নাম বলা যাবে না।’ সাকিবের আবেদনের সময় তার পাশে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। দলের লিডিং গ্রুপেরও অংশ এই দুজন। তাদের মধ্য থেকেই কেউ একজন এই বুদ্ধি দিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাকিবের এমন আবেদন দেখে অবাক গ্যালারি আর টিভির সামনে থাকা কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। কেননা নিয়মটা তাদের কাছেও অজানা। ধারাভাষ্যে থাকা ওয়াকার ইউনুস, মার্ক ওয়াহ, ডেল স্টেইন, গৌতম গম্ভীরের মত সাবেকরাও বিব্রত। সাকিবের সমালোচনায় মুখর তারা। তাদের মুখে আইন ছাপিয়ে শুধুই নৈতিকতার প্রশ্ন।
এমসিসির ক্রিকেট পরিচালনা আইনের ৪০ ধারার ১.১ উপধারা বলছে, কোনো ব্যাটার আউটের তিন মিনিটের মধ্যে পরের ব্যাটারকে বল ফেস করতে হবে। বিশ্বকাপের প্লেয়িং কন্ডিশনে অবশ্য সময়টা দু’মিনিটের।
এদিকে, ম্যাথিউসের আউট নিয়ে মাঠের চতুর্থ আম্পায়ার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক বলেন, (এমন টুর্নামেন্টে) এমসিসির ক্রিকেট আইনের জায়গায় আইসিসির বিশ্বকাপ প্লেয়িং কন্ডিশন প্রাধান্য পাবে। টাইম আউটের ক্ষেত্রে, নতুন ব্যাটসম্যানকে দুই মিনিটের মধ্যে বল খেলার জন্য তৈরি থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, টিভি আম্পায়ার এই দুই মিনিট সময়ের খেয়াল রাখেন এবং তা মাঠের আম্পায়ারদের জানান। (ম্যাথিউসের) এই ঘটনায় (হেলমেটের) স্ট্র্যাপ নিয়ে সমস্যায় পড়ার আগেই দুই মিনিট পেরিয়ে গিয়েছিল এবং ব্যাটসম্যান বল খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। দুই মিনিট সময় আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী, ফিল্ডিং দলের অধিনায়ক মাঠের আম্পায়ারের কাছে টাইমড আউটের আবেদন করেছিলেন।
এমন বিব্রতকর আউটের পর পুরো ম্যাচেই রাগান্বিত ম্যাথিউসকে দেখা গেছে। যার চোখে চিরজীবন ভিলেন হয়ে থাকবেন সাকিব আল হাসান। শুধু ম্যাথিউসই নয় পুরো শ্রীলঙ্কার কাছে ভিলেন হিসেবে থাকবেন সাকিব। ম্যাচ শেষে যার প্রতিবাদ স্বরূপ লঙ্কান ক্রিকেটাররা হ্যান্ডসেক করেনি বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে।
এস