শট খেলছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী মুশফিকুর রহিম
এবার বিশ্বকাপে শুরু থেকেই দুর্দান্ত নিউজিল্যান্ড। আর বাংলাদেশের পারফর্মেন্সে নেই ধারাবাহিকতা। বিশ^কাপ মঞ্চে আগের ৫ মোকাবিলাতেই জিতেছে নিউ-জিল্যান্ড। তাই ধারণা করা যাচ্ছিল একপেশে ম্যাচ হতে যাচ্ছে দুই দলের মধ্যে এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে। সেটাই হয়েছে, শুক্রবার চেন্নাইয়ে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে বিধ্বস্ত করেছে কিউইরা। এই মাঠে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে স্পিনাররা দাপট দেখিয়েছেন। কিন্তু পরের ম্যাচেই আমূল বদলে গেছে উইকেটের চরিত্র। হালকা ঘাসে ঢাকা উইকেটে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। তবে তারচেয়ে বরং আত্মাহুতি দিয়েই বাংলাদেশের ব্যাটাররা দলকে করেছেন বিপর্যস্ত। তবু অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের অর্ধশতক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের শেষদিকে দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৫ রান করে বাংলাদেশ। পরে বাংলাদেশী পেসারদের বিফলতায় এবং ৭ মাস পর ফিরে আসা অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেলের জোড়া ফিফটিতে ৪২.৫ ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে ২৪৮ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় কিউইরা। টানা ৩ জয়ে এখন নিউজিল্যান্ড পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। আর ৩ ম্যাচে টানা দ্বিতীয় হারে ছয়ে বাংলাদেশ।
টস জিতেই ফিল্ডিং বেছে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। কারণ উইকেটে ঘাস থাকায় পেসারদের জন্য কিছুটা সহায়তা পাওয়া যাবে। এদিন ৭ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। শেখ মেহেদি হাসানকে বসিয়ে মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে একাদশ সাজিয়ে ব্যাটিং শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু ২৯তম জন্মদিনে প্রথম বলেই লিটন কুমার দাস (০) বাজে শটে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। এরপর ৪০ রানের জুটি হয়েছে। কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম (১৭ বলে ১৬) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (৭) দ্রুতই ফিরে যান। দুর্দান্ত মিরাজও ৪৬ বলে ৪ চারে ৩০ রানে বিদায় নেন। ট্রেন্ট বোল্ট ও লকি ফার্গুসনের পেসে বেসামাল হয়েছে বাংলাদেশের টপঅর্ডার। মাত্র ৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া দলের হাল ধরেছেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম বিশ^কাপ খেলতে নামা সাকিব ও মুশফিক। দু’জন মাত্র ১০৬ বলে ৯৬ রানের জুটি গড়েছেন। কিন্তু ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে ধীরস্থির সাকিব ছক্কা হাঁকান ফার্গুসনকে। পরের বলে পুল করতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। ৫১ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় ৪০ রান করে সাকিব আত্মাহুতি দেওয়ায় আবার যেন বিপদ নেমে আসে। যদিও সাকিব এই রানের সুবাদে বিশ^কাপে ১২০১ রান করে সার্বিক তালিকায় ছয়ে উঠে এসেছেন সনাথ জয়াসুরিয়া (১১৬৫), বিরাট কোহলি (১১৭০) ও ক্রিস গেইলকে (১১৮৬) পেছনে ফেলে।
সাকিব বিদায় নেওয়ার আগেই ক্যারিয়ারের ৪৮তম অর্ধশতক হাঁকান মুশফিক। আগের ম্যাচেও ফিফটি পেয়েছেন তিনি। তবে মুশফিকের সঙ্গে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ফর্মের সঙ্গে লড়তে থাকা তাওহিদ হৃদয়। তিনি ২৫ বলে ১৩ রান করে বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হন। মুশফিকও ৭৫ বলে ৬ চার, ২ ছক্কায় ৬৬ রানে ফিরে যান ম্যাট হেনরির পেসে বোল্ড হয়ে। তিনি ৪ রানের জন্য বিশ্বকাপে এদিন ১ হাজার রান স্পর্শ করতে পারেননি। এরপর মাহমুদুল্লাহ দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। ৪৯ বলে ২ চার, ২ ছয়ে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তাকে বেশ ভালো সঙ্গ দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ ১৯ বলে ২ ছক্কায় ১৭ রান করে। তাই শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৫ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। কিউই পেসাররাই বড় সর্বনাশ করেছেন বাংলাদেশের। ফার্গুসন ১০ ওভারে ৪৯ রানে ৩টি এবং ১০ ওভার বোলিং করে বোল্ট ৪৫ রানে ও হেনরি ৫৮ রানে ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন অনিয়মিত অফস্পিনার গ্লেন ফিলিপস ও বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার।
জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশী পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়ে নিউজিল্যান্ডের ওপেনাররা। এদিন উইল ইয়াং না থাকায় ডেভন কনওয়ের সঙ্গে ওপেনিং করেছেন রাচিন রবীন্দ্র। কিন্তু এই তরুণকে বেশিদূর যেতে দেননি মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই রাচিনকে (৯) কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলেছেন তিনি। তবে আরেকটি উইকেট পেতে বেশ অপেক্ষা করতে হয়েছে। কনওয়ে ও উইলিয়ামসন বেশ সতর্ক হয়ে খেলেছেন এবং ৮০ রানের জুটি গড়েছেন। ২১তম ওভারে সাকিব ব্রেক থ্রু এনে দেন। ৫৯ বলে ৩ চারে ৪৫ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে যান কনওয়ে। দেখেশুনে খেলতে থাকা উইলিয়ামসনের সঙ্গে এরপর ড্যারিল মিচেল এরপর দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। ক্যারিয়ারের ৪৩তম হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দুর্দান্ত কামব্যাক করেন উইলিয়ামসন। এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু ৩৮তম ওভারে রানের জন্য যখন দৌড়েছেন তখন ফিল্ডারের থ্রো তার হাতে লাগে। এরপর ব্যাটিং করতে ব্যথা অনুভব করায় দলীয় ২০০ রানের সময় ৩৯তম ওভারে মাঠ ছাড়েন তিনি। ১০৭ বলে ৮ চার, ১ ছয়ে ৭৮ রান করেন তিনি। পরবর্তী কাজটা শেষ করেই মাঠ ছেড়েছেন মিচেল। এদিন ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি হাঁকিয়ে এ ডানহাতি মাত্র ৬৭ বলে ৬ চার, ৪ ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ৪৩ বল হাতে রেখেই ২ উইকেটে ২৪৮ রান করে বিশাল জয় পায় নিউজিল্যান্ড। ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন ফিলিপস। মুস্তাফিজ দারুণ বোলিং করে ৮ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ও সাকিব ১০ ওভারে ৫৪ রানে ১টি করে উইকেট নেন।
স্কোর ॥ বাংলাদেশ ইনিংস- ২৪৫/৯; ৫০ ওভার (মুশফিক ৬৬, মাহমুদুল্লাহ ৪১, সাকিব ৪০, মিরাজ ৩০; ফার্গুসন ৩/৪৯, বোল্ট ২/৪৫, হেনরি ২/৫৮)।
নিউজিল্যান্ড ইনিংস- ২৪৮/২; ৪২.৫ ওভার (মিচেল ৮৯*, উইলিয়ামসন ৭৮* রিটায়ার্ড, কনওয়ে ৪৫; মুস্তাফিজ ১/৩৬, সাকিব ১/৫৪)।
ফল ॥ নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা ॥ লকি ফার্গুসন (নিউজিল্যান্ড)।