ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

চার বছর পর খুলেছে ক্যাসিনো কা-ে বন্ধ থাকা ক্লাবগুলো, বন্ধ ক্লাব থেকে ট্রফিসহ অনেক কিছু গায়েব হওয়ার  অভিযোগ

মতিঝিলপাড়ার ক্লাবে প্রাণচাঞ্চল্য ফেরার আশা

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০১:২০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মতিঝিলপাড়ার ক্লাবে প্রাণচাঞ্চল্য ফেরার আশা

ইয়ংমেন্স ক্লাবে প্রথম ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে প্রথম ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর পর একে একে অনেকগুলো ক্লাবে চলে অভিযান। ক্যাসিনো কান্ডের ওই ঘটনার পর চার বছর ধরে স্থবির ছিল মতিঝিলপাড়ার ক্লাবগুলো। এতদিন বন্ধ ছিল ক্লাব ভবন, থাকতে পারেননি খেলোয়াড়রা। আরামবাগ, ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স, দিলকুশা, ইয়ংমেন্স ফকিরাপুলসহ আরও কয়েকটি ক্লাবের জীর্ণ দশা হয়েছে এ সময়ে। এমন পরিস্থিতিতে র?্যাব মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে দেখা করেন ক্লাবের সংগঠকরা। ফলে সম্প্রতি খুলে দেওয়া হয়েছে বন্ধ ক্লাবের তালা। 
খেলোয়াড়দের পদচারণায় একটা সময় জমজমাট থাকত মতিঝিলের ক্লাবপাড়া। সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে শূন্যতা ছিল। জং ধরে ক্লাব ফটকে। আবর্জনার স্তূপে ভরে যায় আঙিনা। অভিযোগ আছে মূল্যবান জিনিসত্র চুরিরও। এমন চিত্র গত চার বছর ধরে। ক্যাসিনোকা- বদলে দিয়েছে ক্লাবপাড়ার চালচিত্র। খেলোয়াড় আর সংগঠকদের আকুতি ছুঁয়ে যায়নি কারও হৃদয়। এই সময়ে ক্লাবগুলোর ভবন যেন হয়ে পড়ে পোকামাকড়ের ঘরবসতি। খোলার অনুমতি পাওয়ার পর এখন নেওয়া হচ্ছে সংস্কারের উদ্যোগ। এই মুহূর্তে এটা নিয়েই ব্যস্ত সংশ্লিষ্ট ক্লাব কর্মকর্তারা। ফুটবলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগ এমনকি চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের খেলোয়াড়দের থাকার জন্যও ক্লাব ভবনই ছিল ছোট ক্লাবগুলোর ভরসা। সেই জায়গা না পেয়ে বেড়েছে ব্যয়, অনন্ত সমস্যা নিত্য। ক্যাসিনোকা-ের মামলা চলছে, অভিযুক্তদের অনেকে জামিনে মুক্ত। কিন্তু মুক্তি মিলছিল না ক্লাবগুলোর।
চার বছর আগে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে উন্মোচিত হতে থাকে ঢাকার ক্লাবপাড়ার অন্ধকার জগতের ভয়ংকর নানা দিক। যে কারণে অনেকগুলো ক্লাবকে সিলগালা করা হয়েছিল। অবশেষে দীর্ঘদিন পর ক্যাসিনোকা-ে বন্ধ ক্লাবগুলেতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সাবেক ফুটবলার আব্দুল গাফফারের সঙ্গে কর্মকর্তারা ক্লাব পরিদর্শন শেষে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় দিলকুশার পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শাহীনুর রহমান বলেন, ক্লাবের ভেতরে প্রচুর ময়লা, দুর্গন্ধ, মশা-মাছি ছিল। সরকারি অনুমতি পেয়ে ক্লাব খুলেছি। কিন্তু সংস্কার করতে হবে অনেক। বলতে পারেন, ল্যাংড়া ঘোড়ার মতো কার্যক্রম শুরু করেছি।

ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ক্লাবে আসতে শুরু করেছি। মাস ছয়েকের মধ্যে আমরা ক্লাবটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারব। আবার খেলোয়াড় কর্মকর্তায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে ক্লাবগুলোতে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে খেলার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল জুয়া, ক্যাসিনো। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এসব ক্লাবে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রথম অভিযান চালানো হয় ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে। একই দিন অভিযান চলে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে। উন্মোচিত হতে থাকে ঢাকার ক্লাবপাড়ার অন্ধকার জগতের ভয়ংকর নানা দিক। এরপর কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, ধানমন্ডি ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবেও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলে। তাৎক্ষণিকভাবে সিলগালা করে দেয়া হয় ইয়ংমেন্স, ওয়ান্ডারার্স, মুক্তিযোদ্ধা, আরামবাগ, দিলকুশা ও ভিক্টোরিয়া ক্লাব।

মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের ক্যাসিনো খেলার মিলনায়তন এবং ধানমন্ডি ক্লাবের বার সিলগালা করে দেয়া হয়। ক্যাসিনোকা-ে জড়িতরা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে এলেও বন্ধই থাকে এসব ক্লাব। দীর্ঘ এ সময়ে ক্লাবগুলো বন্ধ থাকলেও তাদের কার্যক্রম চালু রাখে বিকল্প উপায়ে। যেসব ক্লাবে খেলোয়াড়ের আবাসনব্যবস্থা আছে, সেই ক্লাবগুলো আবাসিক ক্যাম্প করেছে অন্য জায়গায়। কিন্তু ক্লাব বন্ধ থাকায় চুরির অভিযোগ ওঠে। এই যেমন ভিক্টোরিয়া ক্লাবের দরজা-জানালা ভাঙা পাওয়া যায়। এসি, সোফা, চেয়ার, টেবিলসহ কোনো কিছুই নেই। একই চিত্র ইয়ংমেন্স, ওয়ান্ডারার্স, দিলকুশা ক্লাবে। এমনকি ক্লাবের অনেক অর্জনের ট্রফিগুলো পর্যন্ত নেই। এ নিয়ে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর বলেন, আসবাবপত্র নিয়ে গেছে দুঃখ নাই। কিন্তু শত বছরের ঐতিহ্য ট্রফিগুলোও চুরি হয়েছে। এটা দুঃখজনক। এখন লাখ টাকা খরচ করেও আমরা ট্রফিগুলো ফেরত পাব না।
তবে ক্লাব খুললেও খেলা ছাড়া জুয়া-ক্যাসিনো আর চালানো যাবে না, এটা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও ক্লাব খোলার নেপথ্যের কারিগর

×