সিরাত জাহান স্বপ্না
প্রথমে আনুচিং মগিনি ও সাজেদা খাতুন। এরপর সিরাত জাহান স্বপ্না। বাংলাদেশ জাতীয় জাতীয় নারী ফুটবলের এই তিন সদস্যের প্রথম দুজন পারফর্ম্যান্সর কারণে দল থেকে বাদ পড়ে (গত জানুয়ারিতে) অভিমানে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন। শুক্রবার তাদের পথে হাঁটলেন স্বপ্নাও। তবে আগের দুজনের সঙ্গে তার পার্থক্য হলো, তিনি দল থেকে বাদ পড়েননি। বরং অবসর নিয়েছেন হতাশা থেকে। শুক্রবার সকালে নিজের ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে ফুটবল ছেড়ে রংপুরে নিজের বাড়ি চলে যান ২২ বছর বয়সী এই তারকা ফরোয়ার্ড।
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের আক্রমণভাগে অন্যতম নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন স্বপ্না। গত বছর নেপালে প্রথমবারের মতো ইতিহাস গড়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ছিলেন দারুণ ফর্মে। করেছিলেন চার গোল। সেই নির্ভরশীল ফরোয়ার্ড স্বপ্না কেন আকস্মিক অবসর নিলেন? নিজের ফেসবুকে তিনি পোস্ট করেছেন, ‘আমি নিজ ইচ্ছায় পেশাদার ফুটবল থেকে বিদায় নিলাম। প্রায় আট বছর পেশাদার ফুটবল খেলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। ফুটবল ক্যারিয়ারে আসার পর অনেক কিছু পেয়েছি। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি। খেলার সুবাদে অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তাই জেনে বা না জেনে যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি প্লিজ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই আমার জন্য দোয়া চাইবেন ...।’
গণমাধ্যমে স্বপ্না বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে ফুটবল ক্যাম্প থেকে রংপুরের বাড়িতে এসেছি। আমি আর ফিরব না, সেটা আমার কোচরা বুঝতে পেরেছেন।’ তিনি যোগ করেন, ‘ইনজুরি বা কোনো চোটের কারণে নয়। আমি পুরোপুরি ফিট আছি। ক্যাম্পে হার্ড ট্রেনিং চলছিল, সেখানেও ভালো অনুশীলন করেছি। অবসরের কোনো কারণ বলতে পারব না।’ তবে সূত্রে জানা গেছে, অনেক প্রচার ও প্রচারণার পরও ১৫ মে থেকে মাঠে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ গড়াতে পারেনি। এই টুর্নামেন্ট আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এই টুর্নামেন্টে খেলার আশায় গত জানুয়ারিতে ভারতের লিগে ওড়িশা এফসির হয়ে খেলার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ এ ছাড়া গত আট মাস ধরে জাতীয় দলের হয়ে কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি। সব মিলিয়ে এ সব কারণেই হতাশা হয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দিলেন স্বপ্না।
স্বপ্নার অবসরে অবাক জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও। ‘স্বপ্না মনে হয় হতাশ। এ জন্যই এমনটা করেছে। আমরা ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও পারিনি। এমনও নয় যে, ওর ওপর বিয়ের কোনো চাপ ছিল। এমনকি পরিবারও ওকে খেলা ছাড়তে বলেনি,’ বলেন কোচ। নারী ফুটবলের বেশ কিছু সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্বপ্নার নাম। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে তার যাত্রা শুরু। খেলেছেন বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টের দুটি আসর। এরপর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৬ নারী দলে ডাক পান। ২০১৪ সালে ঢাকায় খেলেন আঞ্চলিক বাছাইপর্ব। ২০১৫ সালে নেপালে এএফসি অনূর্ধ্ব–১৪ ফুটবলের আঞ্চলিক পর্বে বাংলাদেশ শিরোপা জিতেছিল। স্বপ্না ছিলেন সে দলের সদস্য। অনূর্ধ্ব–১৬ এএফসি বাছাইয়েও খেলেছেন ২০১৬ সালে। সে বছরই শিলং–গুয়াহাটি এসএ গেমসে জাতীয় নারী দলের জার্সি পরেন। ২০১৭ সালে নারী সাফে ৫ গোল করেছিলেন।
২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব–১৮ নারী সাফে ৮ গোল করেছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, যে কোনো লেভেলের আন্তর্জাতিক নারী ফুটবলে এক ম্যাচে বাংলাদেশী হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত গোলের রেকর্ডটি স্বপ্নার। ২০১৮ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের জালে একাই পাঠান ৭ গোল, আর সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ১৭-০ গোলে। সেই স্বপ্নার হঠাৎ বিদায়ে হতবাক দেশের ফুটবলাঙ্গন।