ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো
বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। ক্যারিয়ারের স্বর্ণালি সময়টাতে খেলেছেন ইউরোপের শীর্ষ সারির ক্লাবে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ এবং জুভেন্টাস ঘুরে এখন গোধূলিতে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে। ৩৮ বছর বয়সী পর্তুগিজ সুপারস্টার এখানেই থামতে নারাজ।
গত বছরটা দুঃস্বপ্নের মতোই কেটেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর। বিশেষ করে কাতার বিশ্বকাপের শেষটা ছিল তার জন্য চরম অবমাননার। পর্তুগাল স্কোয়াডে থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ শেষ ম্যাচের একাদশেই স্থান পাননি সিআর সেভেন। তবে ইউরো বাছাইপর্বের জন্য জাতীয় দলে ফের তাকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন পর্তুগালের নতুন কোচ রবার্তো মার্টিনেজ।
ইতোমধ্যে ১১৮ গোল করে পুরুষদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন রোনাল্ডো। ইউরোপীয় ফুটবলেও জাতীয় দলের হয়ে ১৯৬টি ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক ম্যাচের রেকর্ডটি তার দখলে। সেই সঙ্গে বিশ্বের সর্বাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড বইয়ে কুয়েতের বাদের আল-মুতাওয়ার সঙ্গে সহাবস্থানে রয়েছেন পাঁচ বারের এই ব্যালন ডি’অর জয়ী এই ফুটবলার। বুধবার রাতে লিচেনস্টেইনের বিপক্ষে মাঠে নামলে এই রেকর্ডটাও হয়তো এতক্ষণে এককভাবে নিজের করে নিয়েছেন রোনাল্ডো।
তবে ইউরো বাছাইপর্বের এই ম্যাচের আগেই সিআর সেভেন জানিয়েছেন, তিনি এখনই থামতে চান না। পর্তুগিজ সুপারস্টারের ভাষ্য, ‘রেকর্ড আমার অনুপ্রেরণা। ফুটবলের ইতিহাসে সর্বাধিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডটিকে আমি (একক ভাবে) নিজের অধিকারে নিতে চাই। যা আমাকে গর্বিত করবে। তবে এখানেই আমি থামতে চাই না। আমি বারবার (জাতীয় দলে) ডাক পেতে চাই।’
২০০৩ সালে কাজাখস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন রোনাল্ডো। তবে সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে কাতার বিশ্বকাপটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে দুঃস্বপ্নের মতো। কাতার বিশ্বকাপ থেকে পর্তুগালের বিদায়ের পর স্টেডিয়ামের টানেল ধরে রোনাল্ডোর কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও এখনও ফুটবলপ্রেমীদের কাছে বেশ তরতাজা। তার সেই কান্নায় বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার কষ্ট তো ছিলই, হয়তো ছিল ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এতটা বাজে সময় কাটানোর আক্ষেপও।
এরপর সময় গড়িয়েছে অনেক। তবে এবার মুখ খুলেছেন তিনি। সেই বাজে সময় প্রসঙ্গে রোনাল্ডো বলেন, ‘কে তোমার পাশে আছে, সেটা দেখার জন্য এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মাঝেমধ্যে যেতে হয়। কঠিন সময়েই বোঝা যায় কে পাশে আছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই, ক্যারিয়ারে খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছি, এ নিয়ে অনুশোচনা নেই। জীবন চলে যায়, ভালো খারাপ যাই করি, আর এটা আমার অভিযাত্রার একটা অংশ।’
তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, ২০২২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে সেরা একাদশে না থাকার পর অবসরের সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘মিথ্যা বলব না। আমাদের জীবনের সবকিছুই মেপে চলতে হয়। আমি এবং আমার পরিবার নিয়ে চিন্তা করা হয়, আমরা প্রতিফলিত হই, সবকিছু সত্ত্বেও কঠিন সময়ের পর যখন সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, মনে হলো এভাবে ফেলে যাওয়া ঠিক হবে না। ওই সময়টাকে বিভিন্ন দিক থেকে দেখেছি। সেখান থেকে অনেককিছু শিখেছি।
ফিরে আসতে পেরে আমি খুশি। রবার্তো মার্টিনেজ আমাকে বিবেচনা করেছেন। আমি সবসময়ই খেলতে চেয়েছিলাম। সে সবার সঙ্গে কথা বলেছে, আমার সাথেও। আমার মনে হয়েছে জাতীয় দলে আমার এখনও অনেককিছু দেয়া বাকি।’ আর সৌদি প্রো লিগকে নিয়েও চমকপ্রদ মন্তব্য করেছেন রোনাল্ডো। জানালেন খুব শীঘ্রই শীর্ষ পাঁচে দেখা যেতে পারে এই লিগকে। তার ভাষ্যমতে, ‘আমি মনে করি সৌদি প্রো লিগকে ভিন্নভাবে দেখতে হবে আপনাকে। আমি নিশ্চিত যে, আসছে বছরগুলোতে এই লিগই... বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগগুলোর মধ্যে চার, পাঁচ কিংবা ছয়ে দেখা যাবে।’