কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের অন্যতম আকর্ষণ আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি ও ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে
সবখানে এখন একই আলোচনা। ফ্রান্স বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট ধরে রাখবে না আর্জেন্টিনা ৩৬ বছর পর বিশ্বজয়ের হাসি হাসবে? সঙ্গতকারণেই গোটা দুনিয়ায় প্রধান আলোচনার বিষয় কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। যে মহারণ মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ সময় রবিবার রাত ৯টায়। কাতারে রাজধানী দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ২২তম বিশ্বকাপের এই ফাইনাল জিততে মুখিয়ে আছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স দুদলই।
এবারের ফাইনাল মহারণ উপভোগ্য ও উত্তেজনাপূর্ণ হবে বলেই ধারণা করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। হাইভোল্টেজ ম্যাচ ঘিরে দুদলই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। ফাইনালের ঠিক আগে আর্জেন্টিনার প্রাণভোমরা ও অধিনায়ক লিওনেল মেসির পুরনো চোটের বিষয়টি সামনে এসেছে। অনেকে শঙ্কা করছেন খুদে জাদুকরের চোট ফাইনালে ভোগাতে পারে আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু বিষয়টি তেমন গুরুতর নয় বলে মনে করছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, মেসির থেকে ফরাসিদের দৃষ্টি যেন কিছুটা হলেও অন্যদিকে যায় এ কারণেই তার চোটের বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে! যদিও আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে ফরাসিরা ভয় পাচ্ছেনা বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দলটির মিডফিল্ডার থিও হার্নান্দেজ। অন্যদিকে ফাইনালের আগে ফ্রান্সের ট্রাম্পকার্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তারকা ফরোয়ার্ড করিম বেঞ্জামা। চোটের কারণে শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া রিয়াল মাদ্রিদ সুপারস্টার ফাইনালে খেলতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। না খেললেও প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে তাকে সাইডবেঞ্চে রাখতে পারেন ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম।
এই মুহূর্তে শিরোপা ছাড়া আর কিছুই ভাবছে না আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো না হলেও ফাইনালে এখন তারাই ফেভারিট। ৩৬ বছরের সাধনা আলবিসেলেস্তারা ভেস্তে যেতে দিবে না বলে পণ করেছে। তার ওপর অধিনায়ক মেসি খেলবেন ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ। শেষটায় এলএমটেনকে সোনার ট্রফি উপহার দিতে চান আলভারেজ, ফার্নান্দেজ, ডি পলরা। কিন্তু ফাইনাল মহারণের আগে আর্জেন্টিনার অনুশীলনে মেসির অনুপস্থিতি অনেককে শঙ্কিত করে তুলেছে।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে অধিনায়ককে ছাড়াই কোচ লিওনেল স্কালোনি ফাইনালের প্রস্তুতি শুরু করেন। এটা দেখার পরই সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সমর্থকদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে বাঁ-পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল মেসিকে। তখন থেকেই আর্জেন্টাইন তাবুতে উদ্বেগের শুরু।
এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনা টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে খোলাসা করে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু আর্জেন্টাইন সাংবাদিকরা জানান, চোটমুক্ত থাকা আর টানা খেলার ধকল কাটাতেই মেসিকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু মেসির পরিবার দাবি করেছে, তিনি দীর্ঘসময় ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে ছিলেন। এরপর দলীয় অনুশীলনে না থাকায় রহস্যটা আরও ঘনীভূত হয়। তবে দলের সেরা তারকা অনুশীলনে না থাকলেও আর্জেন্টিনার বাকি সদস্যদের বেশ ফুরফুরে দেখা গেছে বলে সংবাদ এসেছে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, সতর্কতার অংশ হিসেবেই মেসি একদিন অনুশীলন করেননি। তবে তিনি সুস্থ আছেন। আর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে শতভাগ ফিট হয়েই দলীয় অধিনায়ক খেলবেন বলে জানিয়েছেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
ফাইনাল মহারণে মাঠে নামার আগে বেঞ্জামার ফেরার সম্ভাবনার খবরটি যেমন ফ্রান্সের জন্য সুখবর, তেমনি আরেকটা অপ্রত্যাশিত সমস্যাতেও জর্জরিত তারা। ফাইনালের আগে ফ্রান্স দলের ফুটবলাররা সর্দি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর এসেছে। তিনজন ফুটবলার ঠা-া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনুশীলনেও যোগ দিতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত না হলেও সতর্ক ফরাসিরা। দলটির তারকা কোচ দিদিয়ের দেশম এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দুজন খেলোয়াড়কে এরই মধ্যে আইসোলেটেড করা হয়েছে। তারা হলেন ডিফেন্ডার ডায়ট উপামেচানো ও মিডফিল্ডার অ্যাদ্রিয়েন র্যাবিওট। এ কারণে মরক্কোর বিরুদ্ধে ২-০ গোলে জয় পাওয়া ম্যাচে র্যাবিওটকে স্কোয়াডেই রাখা হয়নি। উপামেচানোকে বদলি হিসেবে নামানো হয়। দেশম বলেন, উপামেচানো কঠিন দিন পার করার পর সুস্থ হয়ে উঠছে। যদিও ফাইনালের আগে চারদিন সময় পেয়েছি। উপামেচানো ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছে। আশা করি ফাইনালে তাকে পাওয়া যাবে।
তারকা উইঙ্গার কিংসলে কোম্যানও সর্দি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যত কিছুই হোক, কোচ দেশম আশা করছেন ফাইনালে তিনি সম্পূর্ণ ফিট একাদশই পাবেন। তবে কাতারের ভিন্ন আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জয় করা দেশম।