..
শেষ হলো মরক্কোর রূপকথার দৌড়। কাতার বিশ্বকাপে একের পর এক পরাশক্তিকে বধ করে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠে ইতিহাসগড়া দলটিকে থামিয়ে দিল ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। তবু গর্বিত দলটির কোচ ওয়ালিদ রিগ্রেগুয়েইর, ‘আমরা বুঝতে পারি, এরই মধ্যে মহান কিছু অর্জন করতে পেরেছি। সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া, টিভিসহ সবখানেই দেখছি আমাদের নিয়ে লোকজন কী রকম গর্ববোধ করছে। আর অবিশ্বাস্য এই অর্জনের জন্য আমি আমার শিষ্যদের নিয়ে গর্বিত। ওরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল ছাড়েনি। বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে, নিজেদের ওপর বিশ্বাস্য ও অদম্য মানসিকাতায় কী হতে পারে। বিশ্বজুড়ে সমর্থকদেরও ধন্যবাদ। তারা আমাদের প্রাণ খোলা সমর্থন দিয়ে এসেছে। কাতার বিশ্বকাপ মরক্কো ফুটবলের এগিয়ে যাওয়ার সোপান হয়ে থাকবে।’
বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালের মতো ইউরোপিয়ান পরাশক্তিদের হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয় মরক্কো। ফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে সেমিফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল মরক্কো। তবে ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলে হেরে স্বপ্নযাত্রা ভঙ্গ হয় মরক্কোর। তবে হারলেও দলের পারফরম্যান্সে খুশি মরক্কোর কোচ। ফ্রান্সের বিপক্ষে পুরো ম্যাচে ৬১% বল পজিশন নিয়ে খেললেও গোল পেতে ব্যর্থ হয় মরক্কো। ফলে ২-০ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। মরক্কোর কোচ রিগ্রেগুয়েই বলেন, ‘আমি মনে করি, পুরো বিশ্ব মরক্কো দলকে নিয়ে গর্বিত। কেননা আমরা নিজেদের সেরাটা দেখিয়েছি। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং সৎ ও পরিশ্রমী ফুটবল খেলেছি।’ বড় বড় জায়ান্টদের বিদায় করে দেওয়া মরক্কো প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিতে খেলেছে। এই অর্জনকেই বড় করে দেখছেন রিগ্রেগুয়েইর, পুরো টুর্নামেন্টেই আঁটোসাঁটো রক্ষণের জন্য আলোচিত ছিল মরক্কো। সেমির আগে প্রতিপক্ষের একটি গোলও হজম করেনি। কিন্তু ফ্রান্সের বিপক্ষে গতকাল ৫ মিনিটেই হজম করে বসে প্রথম গোল! মরক্কো কোচ শুরুর এই গোল হজম নিয়েই আক্ষেপ করছেন, ‘যদি আক্ষেপ থাকে সেটা হবে ম্যাচের শুরু নিয়ে। শুরুটা বাজেভাবে করেছি। প্রথম দিকের গোলটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য বারবার আক্রমণেও উঠতে দেখা গেছে তাদের। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে একটিও সাফল্য পায়নি তারা। রিগ্রেগুইও মানছেন সেটা, ‘দ্বিতীয়ার্ধে অনেক সুযোগ তৈরি করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ফিনিশিংয়ের অভাবে অ্যাটাকিং থার্ডে সাফল্য পাইনি।’ অবিশ্বাস্য কয়েকটি অঘটনের জন্ম দেওয়া মরক্কোর রূপকথা শেষ। ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে হারের পর মরক্কান শিবিরে ভর করেছিল আকাশ ছুঁতে না পারার হতাশাও। ভক্ত-সমর্থকদের চোখে চিকচিক করছিল জল। তবে, গভীরভাবে দেখলে ওই কষ্টের চেয়েও অনেক বেশি গর্বিত তারা। এবার প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে তৃতীয় হওয়ার সুযোগ মরক্কোর সামনে। শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের তাদের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে মরক্কো সেমি-ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রিয় দলকে ঘিরে সমর্থকদের স্বপ্নের সীমানা আকাশ ছুঁয়েছিল। সে আশার সমাপ্তি হলেও বিশ্ব সেরার মঞ্চ থেকে নিশ্চিতভাবেই খালি হাতি ফিরছে না তারা। দেশের মানুষের কাছে জিয়াশ-হাকিমরা বীরের মর্যাদা তো পেয়েই গেছেন, দুর্দন্ত ফুটবলে অন্যান্য দেশের ভালোবাসাও অর্জন করেছেন তারা। তাই স্বপ্নের ভেলায় ভেসে তারা হয়তো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি, তবে তাদের অর্জনও অনেক বড়। অনেক বড় গর্বের।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে গেছে, আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের দেশগুলোতে মরক্কোর জনপ্রিয়তা কেবলই বেড়েছে। দলটির জন্য তারা গলা ফাটিয়েছেন, যেন নিজেদের দেশের জাতীয় দল জিতেছে, যেন মরক্কোই তাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে। পুরো মুসলিম, আফ্রিকান, অ্যারাবিয়ান জাতিগোষ্ঠীর কাছেই সাফল্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে মরক্কো। কোচ ওয়ালিদ রিগ্রেগুয়েইর জন্য তাই গর্বটাও অনেক বেশি। কাতার বিশ্বকাপ মরক্কোর জন্য সত্যি অনন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।