দর্শনীয় হেডে গোল করছেন ক্যামেরুনের আবুবাকার
অবশেষে পরাজয়ের স্বাদ পেল ব্রাজিল। শুক্রবার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে ১-০ গোলে লজ্জাজনকভাবে হেরেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তারপরও ‘জি’গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবেই ২০২২ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর টিকিট কেটেছে তিতের দল। ফলে নকআউট পর্বে সেলেসাওদের প্রতিপক্ষ এশিয়ার দল দক্ষিণ কোরিয়া। অন্যদিকে ৫ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে সুইজারল্যান্ড ৩-২ ব্যবধানে পরাজিত করেছে সার্বিয়াকে। সেইসঙ্গে রানার্স-আপ হিসেবে গ্রুপ পর্বের বাধা অতিক্রম করেছে তারা। শেষ ষোলোতে সুইসদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী সুইজারল্যান্ড। সুইসদের কাছে হারায় ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের তলানীতে থেকেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল সার্বিয়া। যেখানে ব্রাজিলকে হারিয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়েও ছিটকে যেতে হলো ক্যামেরুনকে। তবে সুইজারল্যান্ড-সার্বিয়ার দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ৬। কিন্তু গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে অবস্থান ব্রাজিলের।
শুক্রবার দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে ক্যামেরুনের মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ৯ পরিবর্তন নিয়ে এদিন একাদশ সাজান তিতে। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত করে রেখেছিল সেলেসাওরা। যে কারণে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি প্রমাণের জন্য এই ম্যাচটার আলাদা গুরুত্ব ছিল। অন্যদিকে, আশা বাঁচিয়ে রাখতে ক্যামেরুনও নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলে ব্রাজিলের বিপক্ষে। সেলেসাওদের আক্রমণের জবাবে তারাও ব্যতিব্যস্ত ছিল পাল্টা আক্রমণে। কিন্তু প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি কেউ। এই সময়ে ব্রাজিলের এন্টনি-মার্টিনেলি-রদ্রিগোরা বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও সফলভাবে সমাপ্তি টানতে পারেননি। অন্যদিকে, বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে ক্যামেরুনের দুর্দান্ত এক শট রুখে দিয়ে নিশ্চিত গোল থেকে দলকে রক্ষা করেন এলিসন বেকারের বদলি নামা এডারসন। ৫৫ মিনিটে গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলির দুর্দান্ত শট ঠেকিয়ে দেন ক্যামেরুন গোলরক্ষক। এরপর মারকুইনহোস-ফ্রেড-পেদ্রো-রাফিনহাকে বদলি হিসেবে মাঠে নামালেও আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি তাদের কেউ। উল্টো ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের ৯২ মিনিটে গোল হজম করে বসে আসরের হট ফেভারিট ব্রাজিল। দুর্দান্ত হেডের সৌজন্যে ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে ক্যামেরুনকে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম জয় উপহার দেন আবুবাকার।
পরে জার্সি খুলে গোল উদযাপন করতে গিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড খেলে বাকিটা সময় ১০ জনের দল নিয়েই খেলে ক্যামেরুন। এই সময়ে ব্রাজিল বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও গোল করতে পারেনি। ফলে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় দানি আলভেজের দলকে। আর আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, স্পেনের পর ফেবারিট দল হিসেবে গ্রুপ পর্বে বড় ধাক্কা খেল ব্রাজিলও।
কাতার বিশ্বকাপের ‘জি’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে দোহার ৯৭৪ স্টেডিয়ামে বাঁচা-মরার ম্যাচে সার্বিয়ার মুখোমুখি হয় সুইজারল্যান্ড। দুই দলই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়াই করে। তবে ম্যাচ শুরুর ২০ মিনিটেই এগিয়ে যায় সুইসরা। রড্রিগুয়েজের এ্যাসিস্ট থেকে গোল করে সুইজারল্যান্ডকে এগিয়ে দেন জার্দান শাকিরি। বিশ্বকাপে এটা তার পঞ্চম গোল। সার্বিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয়। ২০১৪ সালের পর থেকে খেলা পাঁচ মেজর টুর্নামেন্টের সবকটিতেই গোল করার রেকর্ড গড়লেন তিনি। তার আগে ইউরোপের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো।
তবে গোল হজম করেই যেন জ্বলে উঠে সার্বিয়া। ২৬ থেকে ৩৫ মাত্র ৯ মিনিটের ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডের জালে দুইবার বল জড়ায় তারা। প্রথম গোল করে সার্বিয়াকে সমতায় ফেরান মিত্রোভিচ। টেডিচের এ্যাসিস্ট থেকে গোল করেন তিনি। আর ৩৫ মিনিটে টেডিসের সহায়তায় দারুণ এক গোল করে সার্বিয়াকে লিড এনে দেন দুসান ভøাহোভিচ। এই উচ্ছ্বাসও বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি তারা। ৪৪ মিনিটেই যে ওয়াইডমারের এ্যাসিস্ট থেকে গোল করে সুইজারল্যান্ডকে সমতায় ফেরান ব্রিল এমবোলো। ফলে শেষ ষোলোর সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেই বিরতিতে যায় দুই দল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবার এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। ৪৮ মিনিটে ভার্গাসের এ্যাসিস্ট থেকে গোল করে সুইসদের এগিয়ে দেন রেমো ফ্রিউলার। এরপর আর গোল না হলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ে সুইজারল্যান্ড। সেইসঙ্গে শেষ দল হিসেবে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত করে তারা।