গোল করার পর ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোর
কাক্সিক্ষত গোলের জন্য ৮৩ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোর ডানপায়ের জোরালো শট লক্ষ্যভেদ করে সুইজারল্যান্ডের জালে জড়িয়ে যায়। এতেই ১-০ গোলের জয়ে সোমবার রাতে দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪ ব্রাজিলের সাম্বা ছন্দে মেতে ওঠার সুযোগ পায়। ফলে টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘জি’ গ্রুপ থেকে সবার আগে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। সুপার স্টার নেইমারকে ছাড়া কিছুটা গতিহীন ও অগোছালো ফুটবল খেললেও ৬৪ মিনিটে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র গোল করেন। তবে সেটি বাতিল হয় রিচার্লিসন অফসাইডের ফাঁদে পড়ায়।
কিন্তু সেলেসাওদের ক্যাসেমেরা সেই আক্ষেপ ভুলিয়েছেন। বিশ্বকাপে এর আগে দুইবারের সাক্ষাতে সুইসদের হারাতে না পারলেও এবার জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে ব্রাজিল। আগের ম্যাচে সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় তারা। ‘ডি’ গ্রুপ থেকে ফ্রান্স সবার আগে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে। নেইমারকে ছাড়া শঙ্কায় থাকলেও এবার ১ ম্যাচ হাতে রেখে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে স্বস্তিতে মাঠ ছেড়েছে সেলেসাওরা।
সুপার স্টার প্লে-মেকার নেইমার, ডিফেন্ডার দানিলোকে ছাড়াই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে নামে ব্রাজিল। প্রতিপক্ষকে শঙ্কিত করার মতো কোন আক্রমণ শাণাতে পারেনি ব্রাজিল। নেইমারের ঘাটতি বেশ ভালভাবেই অনুভূত হয়েছে তাদের সংঘবদ্ধ আক্রমণের মধ্যে কোন ধারালো ভাব না থাকায়। ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলতে নেমে শুরুর আধা ঘণ্টায় অগোছালে মনে হয়েছে সেলেসাওদের। একইভাবে সুইজারল্যান্ডও গোছানো খেলা খেলতে পারেনি। তাই সমানে-সমান খেলা হয়েছে। বল দখলে রাখার লড়াইয়ে একটা সময় এগিয়ে যায় সুইসরা।
কিন্তু শেষের ১০ মিনিট কিছুটা সুশৃঙ্খল দেখা গেছে ব্রাজিলকে। যার কারণে বেশ কিছু ধারালো ও পরিকল্পিত আক্রমণ করতে পেরেছে তারা। শুরুটা হয় ২৭ মিনিটে। রাফিনহার বাঁকানো লম্বা ক্রস সুইজারল্যান্ডের ছোট ডি-বক্সে নামে। বাম প্রান্ত থেকে গতিময় ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এসে সেই বলে জোরালো শট নিতে পারেননি। তাই গোলরক্ষক ইয়ান সোমার কর্নারের বিনিময়ে বাঁচাতে পেরেছেন সুইজারল্যান্ডকে। এর আগে ১২ মিনিটে লুকাস পাকেতা দারুণ এক পাস দেন ফাঁকায় দাঁড়ানো রিচার্লিসনকে।
কিন্তু বক্সের ভেতরে যাওয়া ভিনিসিয়ুসকে ঠিকভাবে দিতে পারেননি তিনি। ১৯ মিনিটের সময়ও ভিনিসিয়ুস বল পান, কিন্তু তাকে ঘিরে ছিলেন সুইজারল্যান্ডের ৪ ডিফেন্ডার। শেষ পর্যন্ত পাকেতাকে বল দিলে তিনি দারুণ ক্রস করেন। তবে রিচার্লিসন সেটা থেকে লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। সুইস ডিফেন্স ব্যস্ত থাকলেও বেশ কিছু কাউন্টার আক্রমণে যায়। তবে সেই আক্রমণ বড় কোন চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারেনি ব্রাজিলের রক্ষণভাগকে।
তবে ৩৯ মিনিটে ভাল একটা সুযোগ পেয়েছে তারা। দুর্দান্ত খেলা রিকার্ডো রড্রিগুয়েজ দারুণ একটা বল পেয়েও দেরিতে প্রতিক্রিয়াশীল হয়েছেন এবং সে কারণে থিয়াগো সিলভা ক্লিয়ার করেন। ৪৪ মিনিটে রাফিনহার কর্নার থেকে থিয়াগোর দুর্দান্ত হেড লক্ষ্যে যায়নি। শেষ পর্যন্ত অসংখ্য ভুল পাসে প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবে শেষ করে দু’দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেশকিছু সংঘবদ্ধ আক্রমণে ব্রাজিলের রক্ষণভাগকে চ্যালেঞ্জে ফেলে সুইজারল্যান্ড। ৫৩ মিনিটে বেশ ভাল একটা সুযোগও পায় তারা। কিন্তু সিলভান উইডমার পোস্টের বাইরে মেরেছেন, ফাবিয়ান রেইডার পিছলে এসে পা ছোঁয়াতে চাইলেও নাগাল পাননি। ৫৭ মিনিটে উল্টো সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। ফ্রেডের থেকে পাওয়া পাসে ভিনিসিয়ুস ক্রস করলে সেটাতে পা লাগাতে পারেননি সুইস বক্সে ঢুকে পড়া রিচার্লিসন। তবে ৬৪ মিনিটে দারুণভাবে লক্ষ্যভেদ করেন ভিনিসিয়ুস।
ক্যাসেমিরোর পাস থেকে বল নিয়ে দুর্দান্ত গতিতে সুইসদের বক্সে ঢুকে দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। উল্লাসে মাতে ব্রাজিল, সাম্বা ছন্দে নেচে ওঠে স্টেডিয়াম ৯৭৪। কিন্তু রিভিউ থেকে রিচার্লিসন অফসাইড হওয়ায় বাতিল হয় গোলটি। কিন্তু এরপর ব্রাজিলের আক্রমণ ধারালো হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের সীমানায় সংঘবদ্ধ হয়ে গোছানো ফুটবল খেলে সেলেসাওরা। ৭৩ মিনিটে রিচার্লিসনকে তুলে নেন কোচ তিতে। কারণ এ ম্যাচে তিনি খেলেছেন প্লে-মেকারের ভূমিকায়। ৮৩ মিনিটে আসে কাক্সিক্ষত সাফল্য।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বদলি হিসেবে নামা রড্রিগোর দারুণ পাস বড় ডি বক্সের ভেতরে এক ড্রপে পেয়ে যান আক্রমণোদ্যত ক্যাসেমিরো। বাম কোনা থেকে ডান পায়ের তীব্র শটে সুইস গোলরক্ষক সোমারকে পরাভূত করেন তিনি। ব্রাজিল এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
আক্রমণ থামায়নি সেলেসাওরা। ৮৭ মিনিটে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের বাঁ প্রান্ত থেকে দেওয়া পাস রড্রিগো জোরালো শট নিলেও তা ঠেকিয়ে দেন সোমার। ৯৩ মিনিটে জেসুুসের আরেকটি দারুণ পাসে ভিনিসিয়ুস ভাল সুযোগ পেলেও জোরালো শট নিতে পারেননি। ৯৪ মিনিটেও সুযোগ আসে। এবার গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন রড্রিগো। ভিনিসিয়ুসের বল পেয়ে ডি-বক্সে গোলরক্ষকের সামনে থেকে শট নিতে দেরি করেছেন।
তাই সুইস ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল নিরাপদ দূরত্ব দিয়ে চলে গেছে। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের জয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। পুরো ম্যাচে টার্গেটে কোন শট নিতে পারেনি সুইজারল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে সার্বিয়াও কোন শট নিতে পারেনি ব্রাজিলের গোলপোস্টে। ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ দল হিসেবে বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে গোলপোস্টে কোন শট মোকাবিলা না করা দল ছিল ফ্রান্স। এবার ব্রাজিলও সেই গৌরবময় সাফল্য দেখাল। এর আগে বিশ্বকাপে দুইবার সুইজাল্যান্ডের মুখোমুখি হয়ে জিততে পারেনি ব্রাজিল। ১৯৫০ ও ২০১৮ সালের আসরে দু’দলের মুখোমুখি লড়াই ড্র হয়। এবার সুইসদের নেইমারকে ছাড়াই হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করল ব্রাজিল।