সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় নিশ্চিতের পর পাকিস্তান ক্রিকেটারদের উল্লাস
‘মাইন্ড ইট, এটা পাকিস্তান। এখন কেউই আমাদের মুখোমুখি হতে চাইবে না। কেউ না।’- খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পাওয়ার পর বলেছিলেন ম্যাথু হেইডেন। অনেকের বক্তব্য, ভদ্রলোক দলটির মেন্টর, চাকরি করেন, বলেবনই তো। তারা হয়তো আনপ্রেডিক্টেবল ক্রিকেটের প্রকৃত সমঝদার নন! যে তকমাটা কেবল পাকিস্তানের সঙ্গেই যায়। টানা দুটি হারে শুরুতেই যাদের আসর শেষ হয়ে যাওয়ার পথে ছিল, সেই তারাই বাংলাদেশের সঙ্গে ‘অঘোষিত’ কোয়ার্টার জিতে সেমিতে নাম লেখায়।
আর সেখানে কি হলো? ৭ উইকেটের জয়ের পথে নিউজিল্যান্ডকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে ১৩ বছর পর ফাইনালে বাবর আজমের দল। বুধবার সিডনির প্রথম সেমিফাইনালে পাত্তা পায়নি কিউইরা। টস জিতে ব্যাটিং নেয়া কেন উইলিয়ামসনের দল ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫২ রানের মধ্যম মানের স্কোর গড়ে। জবাবে ৩ উইকেট হারিয়ে শেষ ওভারের প্রথম বলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান (১৫৩/৩)। ৫ চারে ৫৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে ম্যাচসেরা ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান।
আগের পাঁচ ম্যাচে চার বার সিঙ্গেল ডিজেটে আউট বাবরকে নিয়ে ছিল সমালোচান। হেইডেন জানিয়েছিলেন, বড় খেলোয়াড়েরর চুপচাপ থাকা মানে ঝড় আসছে...। সেটিই সত্যি হলো। সেমিতে জ্বলে উঠলেন অধিনায়ক। সঙ্গী হলেন সময়ের আরেক সেরা পারফর্মার রিজওয়ান। ওপেনিংয়ে ১২.৪ ওভারেই দুজনে ১০৪ রান তুলে নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিলেন। ৪২ বলে ৭ চারে ৫৩ রান করে আউট হন বাবর।
ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেন রিজওয়ান। রেহাই পাননি অন্যরাও। লুকি ফার্গুসন, ট্রেন্ট বোল্ট, মিচেল স্যান্টারদের পাড়ার বোলার বানিয়েছেন দুই পাকিস্তান ব্যাটার। ১৭তম ওভারে শেষ বলে ৪৩ বলে ৫ চারে ৫৭ রান করে রিজওয়ান বোল্টের বলে ক্যাচ দেন গ্লেন ফিলিপকে। সঙ্গী মোহাম্মদ হারিস নিজের দায়িত্বটুকু পালন করেন দারুণভাবে।
তিনি ২৬ বলে ৩০ রন করে যখন স্যান্টনারের বলে ফিন অ্যালেনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন, পাকিস্তান তখন জয়ের খুব কাছে। বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার বাকি কাজটুকু করেন শান মাসুদ (৩*) ও মোহাম্মদ ইফতিখার (০*)। ৫ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখেই ফাইনালে নাম লেখায় পাকিস্তান। বোল্ট ৪ ওভারে ৩৩ রানে নেন ২ উইকেট। স্যান্টনার একটি।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া নিউজিল্যান্ডকে মোটেই স্বস্তি দেননি পাকিস্তানের বোলাররা। শুরুতেই আঘাত হানেন শাহিন শাহ আফ্রিদি আর মোহাম্মদ নাওয়াজ। ৪ রান করা ফিন অ্যালানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন আফ্রিদি। ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগেই গ্লেন ফিলিপসকে (৬) রিটার্ন ক্যাচ বানান নওয়াজ। ডেভন কনওয়ে মোটামুটি খেলছিলেন, কিন্তু তিনি ২০ বলে ২১ রান করে রান আউট হন।
পাওয়ার প্লেতে কিউইরা ২ উইকেটে ৩৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি। পরে অবশ্য অধিনায়ক উইলিয়ামসন আর ড্যারিল মিচেলের ৫০ বলে ৬৮ রানের জুটি কিউইদের খাদের কিনারা থেকে উঠে আসতে সহায়তা করে। মিচেল ৩৫ বলে ৫৩ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। উইলিয়ামসন আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ৪২ বলে ৪৬ রান করে। শেষ দিকে পাকিস্তানি বোলারদের আঁটসাট বোলিংয়ের মুখে মিচেল জিমি নিশামকে সঙ্গে নিয়ে দলের সংগ্রহ দেড়শ’ পার করেন।
আফ্রিদি ২৪ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। এ নিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে টি২০ বিশ্বকাপে তৃতীয়বার ফাইনালে উঠল পাকিস্তান। এবারের আগে ২০০৭ ও ২০০৯ আসরে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তান। ২০০৭-এ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েই ফাইনালের টিকিট পেয়েছিল দলটি। ২০০৯-এর ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা।
এর আগে প্রথম দল হিসেবে তিনবার ফাইনাল খেলার কীর্তি গড়েছিল শ্রীলঙ্কা; ২০০৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালের আসরে। কাকতালীয় ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে পেয়েছিল পাকিস্তান। ৩০ বছর আগে কিউইদের হারিয়েই ইমরান খানের পাকিস্তান নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গৌরবের পথে পা বাড়িয়েছিল। ফাইনালে উঠেছিল দারুণভাবে। অকল্যান্ডের সে ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হলো সিডনিতে। এবারও কি শিরোপা?
স্কোর ॥ নিউজিল্যান্ড ১৫২/৪ (২০ ওভার; অ্যালেন ৪, কনওয়ে ২১, উইলিয়ামসন ৪৬, ফিলিপস ৬, মিচেল ৫৩*, নিশাম ১৬*; আফ্রিদি ২/২৪, ওয়াসিম ০/১৫, নাসিম ০/৩০, নাওয়াজ ১/১২)।
পাকিস্তান ১৫৩/৩ (১৯.১ ওভার; রিজওয়ান ৫৭, বাবর ৫৩, হারিস ৩০, মাসুদ ৩*, ইফতিখার ০*; বোল্ট ২/৩৩, সাউদি ০/২৪, স্যান্টনার ১/২৬)। ফল ॥ পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান)।