ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বৃষ্টি আইনে ৫ রানে জিতল ভারত

টাইগারদের হৃদয়ভাঙ্গা হার

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ৩ নভেম্বর ২০২২

টাইগারদের হৃদয়ভাঙ্গা হার

ভারতের বিরুদ্ধে তিন উইকেট শিকারি হাসান মাহমুদকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সতীর্থরা, ম্যাচশেষে এই উল্লাস পরিণত হয় হতাশায়

বিশ্বকাপ আর ভারতের কাছে লড়াই করে হার যেন একসূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে বাংলাদেশ দলের জন্য। অ্যাডিলেড ওভালে ভারতের বিপক্ষে আরেকটি মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ বুধবার। শেষ ওভার পর্যন্ত লড়ে মাত্র ৫ রানে হারের পর তাসকিন আহমেদের কান্নাটাই বলে দিয়েছে আবারও হৃদয়ভাঙা পরাজয়ের বেদনা সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশ দলের। আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৪ রান তোলে ভারত।

জবাবে লিটন কুমার দাসের ব্যাটিং তা-বে ৭ ওভারেই বিনা উইকেটে ৬৬ রান তুলে জয়ের আশা উজ্জ্বল করে বাংলাদেশ। কিন্তু বৃষ্টি তার ব্যাটিং ঝড়ে রাশ টেনেছে এবং পরে ১৬ ওভারে ১৫১ রানের নতুন টার্গেট আর ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। ২৫ মিনিটের বিরতিতে ছন্দ হারিয়েছেন লিটন, কক্ষপথ থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ দল। শেষ পর্যন্ত ১৬ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৫ রান করতে পেরেছেন সাকিব আল হাসানরা।

বৃষ্টি আইনে ৫ রানে জিতে সেমিফাইনালের পথে বেশ ভালোভাবে এগিয়ে গেছে ভারত। ৬ পয়েন্ট নিয়ে এখন তারা দুই নম্বর গ্রুপের শীর্ষে। আর এই হারে সেমির আশা অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে ৪ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশের।
অ্যাডিলেডে এর আগে একটাই টি২০ খেলে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৭ রানের জয় পেয়েছে ভারত। আর অস্ট্রেলিয়ার অন্য ভেন্যুগুলোর মতো এই মাঠে কোন টি২০ খেলেনি বাংলাদেশ। তবে আন্তর্জাতিক একটি ম্যাচ খেলেছে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। সেই ম্যাচে ঐতিহাসিক জয় পায় টাইগাররা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

সেই মাঠেই এবার ভারতের বিপক্ষে অষ্টম টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার রেসে ভালোভাবে টিকে থাকার লড়াই বাংলাদেশের। হারলে ভারতের জন্যও সমীকরণ হয়ে যাবে কঠিন, তাই তারাও জেতার জন্য মরিয়া হয়েই নেমেছে। অ্যাডিলেডে সাধারণত আগে ব্যাট করা দল জয় পায়। কিন্তু বাংলাদেশ দল এদিন টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়েছে। কারণ চলতি বিশ্বকাপে এদিনই দুপুরে হল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ে ভুগেছে এবং মাত্র ১১৭ রানে গুটিয়ে গেছে।

সে কারণেই হয়তো সাকিব ফিল্ডিং বেছে নিয়েছেন। একাদশে একটাই পরিবর্তন, বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামকে নিয়ে টানা ব্যর্থ সৌম্য সরকারকে বাদ দেয় বাংলাদেশ। চলতি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত বোলিং করা তাসকিন আহমেদ বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা। তিনি শুরুটাও করেছেন অসাধারণভাবে। প্রথম ২ ওভারে তিনি মাত্র ২ রান দিয়েছেন। তৃতীয় ওভারে তার বলে রোহিত শর্মার ক্যাচও ছেড়েছেন ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে দাঁড়ানো হাসান মাহমুদ। টানা ৪ ওভার বোলিং করে দলের ৭ ওভারের মধ্যেই তাসকিন তার কোটা শেষ করেছেন মাত্র ১৫ রান দিয়ে।
 তাসকিনের মতো নিয়ন্ত্রণ অন্যরা সেভাবে দেখাতে পারেননি। তবে সুযোগটা নিয়ে প্রথম আঘাত হানেন ডানহাতি পেসার হাসান। আগের ওভারে ক্যাচ ছেড়ে দিয়ে সেই আক্ষেপ মিটিয়েছেন ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বল হাতে নিয়েই। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলেই রোহিতকে (৮ বলে ২) সাজঘরে ফেরান তিনি।

ফলে বাংলাদেশী বোলারদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ১ উইকেটে মাত্র ৩৭ রান করতে পারে ভারত। শুরু থেকেই কিছুটা আক্রমণাত্মক ছিলেন লোকেশ রাহুল। তিনিই দলের রানের গতি সচল রাখেন। তাসকিনের ওভার শেষ হওয়ার পর আর কোন বোলার নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। বিশেষ করে নবম ওভারে শরিফুল ২৪ রান দিয়েছেন রাহুলকে অগোছাল বোলিংয়ে। এতেই নিজেদের ফিরে পেয়েছে ভারতীয় ব্যাটাররা।

তাই প্রথম ৬ ওভারে ৩৭ করা ভারত পরের ৬ ওভারে আরও ৭৮ রান তুলে ফেলে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায়। অবশ্য এর আগেই দশম ওভারে ক্যারিয়ারের ২১তম ফিফটি পান মাত্র ৩১ বলে। ফিফটি পেয়েই পরের বলে সাকিবের বাঁহাতি স্পিনে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ভেঙে যায় রাহুল-বিরাট কোহলির ৩৬ বলে ৬৭ দ্বিতীয় উইকেট জুটি।

৩২ বলে ৩ চার, ৪ ছক্কায় ৫০ রান করেন রাহুল। এরপর বিরাট কোহলি ও সূর্য কুমার যাদব ৩৮ রানের জুটি গড়েন। সূর্য কুমার ১৬ বলে ৪ চারে ৩০ রানের দারুণ কৌশলী ইনিংস খেলার পর সাকিব তাকে বোল্ড করে দেন। শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে ৪৪ বলে ৮ চার, ১ ছয়ে ৬৪ রান করেন কোহলি। টি২০ বিশ্বকাপে এখন ২৩ ইনিংসে ১০৬৫ রান করে সর্বাধিক রানের রেকর্ড তার।

পেছনে পড়ে গেছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক তারকা মাহেলা জয়াবর্ধনে ৩১ ম্যাচে ১০১৬ রান নিয়ে। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় ভারত। বাংলাদেশের পক্ষে হাসান ৪ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ৩টি এবং সাকিব ৪ ওভারে ৩৩ রানে ২টি উইকেট নেন। সবচেয়ে বড় ঝড় গেছে শরিফুলের ওপর দিয়ে, তিনি ৪ ওভারে ৫৭ রান দিয়েছেন।
অ্যাডিলেডে গড় দলীয় রান ১৭০ এবং প্রথমে ব্যাট করা দলের গড় সংগ্রহ ১৮১। তারচেয়ে বেশি রানই করেছে ভারত। শেষ ৫ ওভারে তারা ৫৪ রান তোলে। বিশাল এই লক্ষ্য পেরোতে এদিন নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে ঝড় তোলেন লিটন। তিনি ভুবনেশ্বর কুমার, অর্শদীপ সিং ও মোহাম্মদ শামিকে পিটিয়ে মাত্র ২১ বলেই ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি পেয়ে যান।

পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৬০ রান তুলে লড়াই জমিয়ে তোলে বাংলাদেশ। লিটন যদিও ২ বার কট বিহাইন্ডের সুযোগ দিয়েও বেঁচে যান। ৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৬ রান তোলার পর বৃষ্টি নামলে ২৫ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। বৃষ্টির আগে দারুণ ছন্দে থাকা লিটন বৃষ্টির পর ২৭ বলে ৭ চার, ৩ ছয়ে ৬০ রান করে সাজঘরে ফেরেন রাহুলের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে।
তখন পর্যন্ত ১৬ বলে মাত্র ৭ রানে থাকা শান্ত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে দ্রুত রান করতে থাকেন। কারণ বৃষ্টির পর নতুন টার্গেট ১৬ ওভারে ১৫১, অর্থাৎ আরও ৯ ওভারে ৮৫ রান করতে হবে। সেটি আর হয়নি। সাকিব ১২ বলে ১৩, আফিফ হোসেন ৫ বলে  ৩, ইয়াসির রাব্বি ৩ বলে ১ ও মোসাদ্দেক হোসেন ৩ বলে ১ ছয়ে ৬ রানে সাজঘরে ফিরেছেন।

শেষদিকে নুরুল হাসান সোহান ১৪ বলে ২ চার, ১ চয়ে ২৫ রান করলেও জেতাতে পারেননি বাংলাদেশকে। শেষ ওভারে ২০ রান দরকার থাকলেও অর্শদীপের ওভারে ১৪ রান উঠেছে। তাই ১৬ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৫ রান তুলে ৫ রানের হার বরণ করতে হয়েছে।

×