স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফুটবল ক্যারিয়ারের স্বীকৃতি হিসেবে যিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির সেরা ফুটবলার এবং ২০০৪ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছিলেন, খেলোয়াড়ি জীবনে যিনি ছিলেন মেজাজী, যার দূরপাল্লার শটগুলো ট্রেডমার্ক হিসেবে পরিগণিত, কিংবদন্তি ফুটবলার হিসেবে যিনি এদেশের কোটি ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে করে নিয়েছিলেন নিজস্ব স্থান, সেই এনায়েতুর রহমান খান ২০ বছরেরও বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছেন অভিমান ভুলে। আপাতত দুই মাসের ছুটিতে এসেছেন তিনি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান আরেক সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুল গাফফার। বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত এক প্রতিক্রিয়ায় এনায়েত বলেন, ‘দেশে ফেরার অনুভূতি অন্যরকম। যারা ফুটবল খেলেছে, মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তারা দেশ থেকে দূরে থাকতে পারে না। জীবনের প্রয়োজনে মানুষ অনেক কিছু করে। তাই করতে হচ্ছে।’ প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, পরে কানাডায় স্থায়ী হওয়া এনায়েতকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন প্রখ্যাত ক্রীড়া মুশফিকুর রহমান মোহন (বাংলাদেশ ব্রিজ ফেডারেশনের সভাপতি)। এনায়েতের কানাডা থেকে বাংলাদেশে ফেরার একটা উপলক্ষ আছে। সেটা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সনদ গ্রহণ করা। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে খেলেছিলেন। গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই এনায়েতের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু নানা ঝামেলায় সেটা পিছিয়ে যায়।
অনেক ফুটবলবোদ্ধাই মনে করেন বাংলাদেশের সেরা ফুটবলার এনায়েত। ২৬ জুলাই, ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত মারদেকা কাপে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ছিল বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ২-২ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচটি টাইব্রেকারে গড়ায়। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন এই এনায়েত। ঢাকার কালীগঞ্জে ১৯৫১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এনায়েতের জন্ম। ১৯৬৭ সালে দ্বিতীয় বিভাগে ইয়াংমেন্স ফকিরেরপুলের হয়ে তার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু। এরপর পর্যায়ক্রমে খেলেন ইস্ট পাকিস্তান গবর্নমেন্ট প্রেস, ভিক্টোরিয়া, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, বিজেআইসি, ওয়াপদা এবং মোহামেডানে। ১৯৭৮ লীগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ১৩ গোল করে। ঢাকা লীগে ৯০টির মতো গোল করেছেন। ১৯৭৩ ও ৭৫ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা ফুটবল, ১৯৭৬ সালে থাইল্যান্ডের কিংস কাপ ফুটবল এবং ১৯৭৮ সালে ব্যাংককে এশিয়ান গেমস ফুটবলে অংশ নেয়ার পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন এনায়েত। ১৯৮৫ সালে মোহামেডানের কোচ ও ম্যানেজার হিসেবে ৭/৮ মাস দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে ছিলেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচ।
এক সময়ের মাঠকাঁপানো সুপারস্টার ফুটবলার এনায়েত খেলতেন রূপকথার মতো। তার নেয়া বুলেটগতির শটে গোলপোস্টের জাল ছিঁড়ে যাওয়ারও বিস্ময়কর নজির আছে। এই প্রজন্ম তার মতো গ্রেট ফুটবলার সম্পর্কে কিছুই জানে না। ফুটবলার হিসেবে এনায়েত ছিলেন প্লে-মেকার। খেলতেন মাঠজুড়ে। গোটা দলের চালিকাশক্তি হয়ে উঠতেন।