স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব একসময়কার দেশীয় ফুটবলের Ôত্রিশক্তিÕর একটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, ২ বার প্রিমিয়ার লীগ, ৩ বার ফেডারেশন কাপ, ১ বার আগা খান গোল্ডকাপ ও ১ বার বরদুলই ট্রফির চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গোপীবাগের দলটি। ক্লাবটি গঠিত হয় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী মরহুম জহিরুদ্দিন এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক এবিএম মুসা যথাক্রমে এই ক্লাবের প্রথম সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমদিকে ক্লাবটি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই ক্লাবটির মূল উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় পর্যায়ে খেলাধূলার মানোন্নয়নে ভূমিকা পালন করা। এই ব্যাপারে প্রথম দিকে এবিএম মুসা, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, মিজানুর রহমান ছানা প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তবে স্বাধীনতার পর গোপীবাগের পরিবেশ ছিল খুবই খারাপ। তরুণরা বখাটে হয়ে পড়েছিলো। জড়িয়ে পড়েছিল বিভিন্ন অপরাধের পথে। তখন সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এলাকার পরিবেশ আবারও সুস্থতার দিকে ফেরানোর পাশাপাশি ব্রাদার্স ক্লাবেরও পুর্নগঠন করেছিলেন যিনি, তিনি শহীদ উদ্দিন আহমেদ সেলিম। নিচতলায় দুটি ফ্ল্যাটে ব্রাদার্সের ক্যাম্প করেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সাইফুদ্দিন মানিকের ছোট ভাই সেলিম। কোন ভাড়া নিতেন না তিনি! ১৯৭২-৮২ পর্যন্ত ব্রাদার্সের হয়ে খেলা (১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন দলের অধিনায়ক) সেলিমই ব্রাদার্সে কোচ হিসেবে নিয়ে আসেন কিংবদন্তী গফুর বেলুচকে। সেলিম বর্তমানে ব্রাদার্সের ভাইস চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক (খেলেছেন ১৯৭৫-১৯৮০) ও সাবেক কোচ (১৯৮০ সালে কুয়েতে এশিয়া কাপ এবং ১৯৯১ এসএ গেমস) সেলিম দাঁতের মাড়ির ক্যান্সারে (স্টেজ-১) আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। শনিবার তার দীর্ঘ সময় ধরে অপারেশন হয়। অপারেশনের আগে ৬৮ বছর বয়সী সেলিমের জন্য সবার কাছে দোয়া চান তার ভগ্নিপতি এবং ব্রাদার্স ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক তারকা ফুটবলার-কোচ হাসানুজ্জামান খান বাবলু। জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপনে বাবলু কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, Ôব্রাদার্স ইউনিয়নের পুনর্জন্মের নায়ক সেলিমের জন্য সবাই দোয়া চাইবেন। এই প্রজন্মের কেউ জানে না তিনি ব্রাদার্সের জন্য আসলে কত কিছুই না করেছেন।Õ
বাবলু আরও যোগ করেন, Ôব্রাদার্সের বাবলু-মোহসীন-সেলিম ছিল থ্রি সুপারস্টার। আমরা মতে এদের মধ্যে এক নম্বর সুপারস্টার ছিলেন এই সেলিম। আমি যাদের সঙ্গে খেলেছি, তাদের মধ্যে সত্তর দশকে দেশের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার ছিলেন সেলিম (তিনি খেলতেন স্টপার ব্যাক পজিশনে)।Õ
১৯৯৪ ও ৯৫ সালে ব্রাদার্সকে কোচিং করানোর পাশাপাশি ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল এবং নোয়াখালী জেলা দলেরও কোচ ছিলেন সেলিম। দশ বছরের কোচিং ক্যারিয়ার তার।
বাবলুর স্মৃতিচারণ, Ô১৯৭৫ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবলে উঠে ব্রাদার্স তাদের প্রথম ম্যাচেই তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করে। ওই ম্যাচে আবাহনীর তারকা ফরোয়ার্ড কাজী মোঃ সালাউদ্দিনকে একেবারে বোতলবন্দী করে ফেলেছিলেন সেলিম। শুধু সালাউদ্দিনই নয়, আবাহনীর কাউকেই কোন গোল করতে দেননি তিনি।Õ
সেলিমের আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয় চেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।