স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যুদ্ধে জিততে গেলে চাই অস্ত্র, রসদ, রণকৌশল, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং দৃঢ় মনোবল। সবাই নিশ্চয়ই একমত হবেন শেষেরটিই হচ্ছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান। আর এই উপাদানটিই এখন আছে জেমি ডের শিষ্যদের ভাণ্ডারে। ভুটানকে দুই ম্যাচের ফিফা ফ্রেন্ডলি সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই হারিয়ে এখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে আছে ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ দল। কোন সন্দেহ নেই, কাতারকে মোকাবেলার আগে এই ‘ভুটান-জয়’ আত্মবিশ্বাস জোগাবে বাংলাদেশকে।
ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতিটা বেশ ভালোভাবেই সেরে নিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। মূল লড়াইয়ে নামার আগে ভুটানের বিপক্ষে পরপর দু’টি জয় নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে জামাল ভুঁইয়াদের। তবে শিষ্যরা দুই ম্যাচেই জয় কুড়িয়ে নিলেও শতভাগ সন্তুষ্ট হতে পারেননি দলের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। কেননা ২৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলেও (৪-১ গোলে) একটি গোল ঠিকই হজম করেছিল। জেমির চাওয়া ছিল তার দল যেন কোন গোল হজম না করে। কিন্তু কোচের সেই চাওয়া পূরণ করতে পারেননি আশরাফুল ইসলাম রানারা। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য জেমির সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হন শহীদুল আলম সোহেলরা। তবে এই ম্যাচে তার ফরোয়ার্ডরা গোল না পাওয়াতে (দুটো গোলই করেন ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান) এই জায়গাতেও আক্ষেপ রয়ে গেছে জেমির। কেননা প্রথম ম্যাচে তার ফরোয়ার্ডরাই দলের সবগুলো গোল করেছিল। এছাড়া তৃপ্ত না হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথমার্ধে তার শিষ্যরা তেমন ভাল খেলা উপহার দিতে পারেনি।
দুই প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে জেমি বলেন, ‘ছেলেদের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট। পর পর দুই ম্যাচে আমরা জয় তুলে নিয়েছি। এটা নিশ্চিতভাবেই আমাদের আত্ববিশ্বাস বাড়িয়েছে। এটা কাজে লাগাতে হবে কাতার ম্যাচের বিপক্ষে।’ জেমি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের এখনও কিছু ভুলত্রুটি রয়ে গেছে। হাতে যে সময় পাবো, এর মধ্যে এগুলো নিয়ে কাজ করবো। আশা করি ছেলেরা তা শুধরে নিতে পারবে।’
আগামী ১০ অক্টোবর ঘরের মাঠে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ শক্তিধর কাতারকে মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে। কাতার আবার ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজকও বটে। ফিফা র্যাংকিংয়ে দলটি বাংলাদেশ থেকে ১২৫ ধাপ এগিয়ে। যেখানে বাংলাদেশের র্যাংকিং ১৮৭, সেখানে কাতারের অবস্থান ৬২ নম্বরে। অবস্থানে।
শুধু তাই নয়, হেড টু হেডেও যোজন ব্যবধানে কাতারের চেয়ে পিছিয়ে আছে লাল-সবুজরা। এ পর্যন্ত ৩টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এর মধ্যে ২টি ম্যাচেই জয়ী হয়েছে কাতার। ১টি ম্যাচে ড্র করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
দু’দলের প্রথম সাক্ষাত আজ থেকে দীর্ঘ ৪০ বছর আগে, ১৯৭৯ সালের ৩০ এপ্রিল। এএফসি এশিয়ান কাপের ওই ম্যাচটিতে গোলশূন্য ড্র করে কাতারকে রুখে দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ২৭ বছর পর আবারও একই আসরে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয় দু’দল। ২০০৬ সালের ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে কাতারের কাছে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। একই বছর ৬ সেপ্টেম্বর একই আসরের ফিরতি ম্যাচে কাতারের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। এবারের স্কোরলাইন ছিল ৩-০।
তবে সিনিয়র পর্যায়ে না পারলেও যুব পর্যায়ে ঠিকই কাতারের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এশিয়ান গেমস ফুটবলে নিজেদের থেকে ৯৬ ধাপ এগিয়ে থাকা কাতারকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়ে এশিয়ান গেমস ফুটবলের প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে নাম লিখিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল করেছিলো বাংলাদেশ অনুর্ধ-২৩ জাতীয় ফুটবল দল। ওই দলেরও কোচের দায়িত্বে ছিলেন জেমি ডে।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের বাংলাদেশের বর্তমান দলের বেশিরভাগ ফুটবলারই সেই অনুর্ধ-২৩ দল থেকেই এসেছেন। কোচও সেই জেমিই। এখন দেখার বিষয়, কাতারকে নিজেদের মাটিতে মোকাবেলার আগে ‘ভুটান-জয়’ কতটা আত্মবিশ্বাস জোগায় আর সাহায্য করে বাংলাদেশকে।