রুমেল খান ॥ ঘরোয়া মহিলা হ্যান্ডবলে বিজেএমসির সাফল্য বেশ ঈর্ষা জাগানিয়া। কিন্তু গত দুটি আসরেই তারা হেরেছিল। দু’বারই তাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ আনসারের কাছে হার মানে। একবার বিজয় দিবস হ্যান্ডবলে (ডিসেম্বরে), আরেকবার জাতীয় হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে (জানুয়ারিতে)। এবারের ‘এমএ হামিদ স্বাধীনতা দিবস হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে লীগ পদ্ধতিতে। প্রথম লেগে আবারও সেই আনসারের কাছে ২৯-২২ গোলে হারে ‘সোনালী আঁশের দল’ খ্যাত বিজেএমসি। ফলে সংশয় জাগে- দ্বিতীয় লেগেও বুঝি হেরে শিরোপা বঞ্চিত হতে হবে তাদের। কিন্তু না, মঙ্গলবার সমাপনী খেলায় (অলিখিত ফাইনাল) সেই আনসারকে হারিয়েই আবারও ছন্দ ফিরে পেল বিজেএমসি। মজার ব্যাপার, আনসার তাদের প্রথম লেগে যে ব্যবধানে হারিয়েছিল, সেই একই ব্যবধানে এবার জিতেছে বিজেএমসি (২৯-২২)। সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাওয়ার সুবাদে বিজেএমসিই চ্যাম্পিয়ন। এই আসরে তারা এর আগে ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ঢাকার পল্টনের শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সমাপনী দিনে পুরুষ বিভাগের খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয় বিজিবি। তারা ৩৮-২২ গোলে হারায় বাংলাদেশ পুলিশ হ্যান্ডবল দলকে। বিজিবির তাজুল ইসলাম এবং বিজেএমসির সুশীলা মিঞ্জ যথাক্রমে সেরা পুরুষ ও মহিলা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ী ও বিজিত দলকে পুরস্কৃত করেন ‘দাবার রানী’ খ্যাত কিংবদন্তি দাবাড়ু রানী হামিদ।
বিজেএমসির এক নম্বর গোলরক্ষক শিলা রায় পুরো আসরেই দলের খেলা দেখেছেন দর্শক হিসেবে। কারণ তার হাত ও আঙ্গুল ভাঙ্গা। হাতে ব্যান্ডেজ করা। খেলা শেষ হতেই ব্যান্ডেজমাখা হাত নিয়েই সতীর্থদের জড়িয়ে ধরে যেভাবে উল্লাসে মেতে উঠলেন তাতে মনে হলো তিনিও যেন মাঠে নেমে খেলেছেন। বিজেএমসির অধিনায়ক শিল্পী আকতার শিরোপা জয়ের পর জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আনসারের কাছে টানা দুটি ফাইনালে হেরে যাওয়ায় মনের ভেতর প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল। সেটা আজ মাঠে প্রকাশ করেছি। যদিও এই আসরেই ওদের বিরুদ্ধে প্রথম লেগের ম্যাচে ওদের কাছে আবারও হেরেছিলাম। কিন্তু আমরা ইচ্ছে করে ওই ম্যাচ সিরিয়াসলি খেলেনি আজকের এই সমাপনী ম্যাচে ভাল করে খেলব বলে। তাছাড়া ওই ম্যাচে আমি হাফ টাইম পর্যন্ত খেলেছিলাম। কারণ একটু ইনজুরি ছিল। তাই রিকভারি করে সমাপনী ম্যাচে ফুল ফিট হয়েই খেলেছি।’
আনসার দলের ময়না এবং খাদিজা লাল কার্ড পেয়েছে বলেই যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিÑ এমনটা মানতে রাজি নন শিল্পী, ‘ওরা লাল কার্ড না পেলেও আমরাই জিততাম। ম্যাচের শুরু থেকেই আমরা ওদের চেয়ে বেশি গোলে এগিয়ে ছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা, একতাই ছিল আমাদের জয়ের মূল কারণ। আমাদের জন্য এই ম্যাচটি ছিল ‘বাঁচা-মরার’ ম্যাচ। আর সেভাবেই আমরা খেলেছি। অধিনায়ক হিসেবে দলের সতীর্থদের সেভাবেই অনুপ্রাণিত করেছি। কোচও আমাদের তাই বলেছিলেন। তার সম্মান রক্ষা করাই ছিল আমাদের দায়িত্ব। বিজেএমসির হারানো সম্মান আবারও পুনরুদ্ধার করেছি, অধিনায়ক হিসেবে তাই ভীষণ রোমাঞ্চিত। আর ধন্যবাদ জানাচ্ছি পুরো দলকে সহযোগিতা করায়।’ অলিখিত ফাইনালে দলের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ১০ গোল করা শিরিনা আক্তারকে দেখা গেল হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে ব্যথায় কাঁদছেন। একটু সুস্থির হতেই জানালেন, ‘ব্যথার চেয়ে শিরোপা জয়ের আনন্দই বড়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে আনসারের কাছে দুটি টুর্নামেন্টে হারায় আমরা অনেক চাপে ছিলাম। কাজেই স্বাধীনতা দিবস হ্যান্ডবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা আমাদের জন্য ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। জেদ ছিল, জিততেই হবে। সফল হওয়ায় খুব ভাল লাগছে। ব্যথা পেয়েছিলাম গত পরশু। তারপরও দলের স্বার্থে খেলেছি। ব্যথার চেয়ে বিজেএমসির জয়-সম্মানটা অনেক বড়।’ বিজেএমসির কোচ নাসিরউল্লাহ লাভলু জানান, ‘আনসার-বিজেএমসি একই মানের দল। সমাপনী খেলায় আনসার দুটি লাল কার্ড পেয়েছে বলে নয়, বিজেএমসি খেলেই জিতেছে। আমাদের মূল গোলরক্ষক শিলা রায় আহত, অপর গোলরক্ষক পিংকি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। আরেক গোলকিপার সুশীলারও আঙ্গুলে ব্যথা। সুমি ও ফাল্গুনী চোটগ্রস্ত। তাছাড়া এই আসরেই কিন্তু আমরা আনসারের কাছে হেরেছি। আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ খেলোয়াড়দের মনোবল। এগুলোই আমাদের শিরোপা জিততে সাহায্য করেছে।’ বিজেএমসির গোলরক্ষক সুশীলা মিঞ্জ বলেন, ‘আঙ্গুলে ব্যথা নিয়ে খেলেছি পুরো আসরেই। দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
খুবই ভাল লাগছে। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছি। এটা আমার ক্যারিয়ারের প্রথম ব্যক্তিগত পুরস্কার। এটা আমার জন্য ডাবল আনন্দ। তবে দলের শিরোপাই আগে। আমার এই পুরস্কার উৎসর্গ করছি দলের সবাইকে। কারণ তাদের সাহায্য না পেলে সেরা খেলোয়াড় হতে পারতাম না। আমরা সবাই আলোচনা করেছি, এই আসরে আমাদের জীবন দিয়ে হলেও চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে।’