ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নয়, চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নিয়েই মত্ত ইংলিশরা!

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২ জুন ২০১৭

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নয়, চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নিয়েই মত্ত ইংলিশরা!

চলছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। কিন্তু এ টুর্নামেন্ট নিয়ে নয়। ইংল্যান্ডের সবাই যেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নিয়েই মশগুল। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে মশগুল। এ ম্যাচটি নিয়েই যত উন্মাদনা। যে ম্যাচটি কার্ডিফের মিলিনিয়াম স্টেডিয়ামে শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে একটায় শুরু হবে। বিশ্বের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড রেলনাইন সার্ভিসটি লন্ডনেই অবস্থিত। যা মুগ্ধ করার মতো। ১৮৬৩ সালে করা এ রেললাইন এতটাই পরিকল্পিতভাবে করা, মুগ্ধতাই শুধু ছড়ায়। যেখানে যাওয়া দরকার, শুধু সাইনবোর্ডে চিহ্নিত দিকগুলো দেখে, সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে থাকলে আর ট্রেনে উঠতে থাকলেই গন্তব্য স্থানে পৌঁছে যাওয়া যায়। এই লন্ডনেই চলছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। শুধু লন্ডনে নয়, তিন সপ্তাহব্যাপী বার্মিংহাম, কার্ডিফেও খেলা চলবে। কিন্তু এ টুর্নামেন্ট নিয়ে নয়। ইংল্যান্ডের সবার ভেতর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নিয়েই যেন কৌতূহল। উদ্দীপনা। কখন ম্যাচটি হবে সেই অপেক্ষা। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নিয়ে উন্মাদনা চলছেই। সবখানেই চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নিয়ে চুলচেনা বিশ্লেষণ চলছে। লন্ডন শহরটা খুবই গোছালো। রেললাইন পথের মতো শহরেও সব কিছুই পরিকল্পনা মতো চলে। কেউ হারিয়ে যাবে, তা যেন সম্ভবই নয়। সবখানে জায়গার নাম দেয়া। সাইন বোর্ডে বুঝিয়ে দেয়া আছে, কোথায় কিভাবে যেতে হবে। কেউ কোন ঠিকানায় যেতে চাইলে শুধু সাইন বোর্ডগুলোর দিকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে থাকলেই হবে। নির্দিষ্ট স্থানে সহজেই পৌঁছে যাবে। আর যদি কোন কারণে কিছু বোঝা না যায়, তাহলে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই হবে। সহযোগিতা খুব দ্রুতই করবে। যত পর্যন্ত ঠিকমতো বুঝিয়ে দিতে না পারবে, তত পর্যন্ত বোঝাতেই থাকবে। বুঝে গেলে উল্টো ধন্যবাদ দেবে। এমনই সুন্দর ব্যবহার। আন্ডারগ্রাউন্ডে ওভাল থেকে হোয়াইটচ্যাপেল স্থানটিতে যাওয়ার সময়ই আসলে বোঝা গেল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে নয়, চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নিয়েই উত্তেজনায় আছে লন্ডনবাসী। ট্রেনে সবাই চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নিয়েই আলোচনা করে। সংবাদপত্রগুলোতেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়েই যেন রিপোর্ট বেশি। সেই রিপোর্ট নিয়েই সারাদিন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইউরোপের প্রিমিয়ার ক্লাব ফুটবলের ৬২তম মৌসুম শেষ হবে এবার। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ক্লাবস কাপ থেকে ইউইএফএ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ হওয়ার পর ২৫ তম মৌসুম শেষ হয়েছে। এটি ২৬তম মৌসুম। এবার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ইতালিয়ান ক্লাব দল জুভেন্টাস ও স্প্যানিশ ক্লাব দল রিয়াল মাদ্রিদ। এ দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালেও খেলেছিল। জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদই। গোল ব্যবধান ছিল ১-০। মাদ্রিদ দলটি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল। সবচেয়ে বেশি ১১বার শিরোপাও জিতেছে তারা। যে দল এবার জিতবে, তারা এবার ইউইএফএ ইউরোপা লীগ জেতা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ইউইএফএ সুপার কাপ খেলার সুযোগ পাবে। এখানেই মূলত যত আলোচনা। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল হবে কার্ডিফে। তবে ম্যাচটিতে ইংল্যান্ড কিংবা ওয়েলসের কোন দল নয়, খেলবে ভিনদেশি দুই দল। তারপরও শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি নিয়েই যত গল্প চলছে। কারণ, যে দল জিতবে তারা যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে খেলবে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যে তাদের ঘরের দল। ‘রেড ডেভিলস’রা যে তাদের প্রাণের দল। সেই দলটির বিপক্ষে কোন প্রতিপক্ষ হলে ভাল, তা নিয়ে সবাই ব্যতিব্যস্ত। কেউ চাচ্ছে জুভেন্টাস হোক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষ। কেউ আবার চাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ হোক। ট্রেনে এ আলোচনাগুলো প্রতিদিনই শুনছি। বেশিরভাগের মধ্যে দেখা গেল জুভেন্টাসকে নিয়েই বেশি ভাবনা আছে। বেশিরভাগ ইংল্যান্ডবাসী যেন চাচ্ছে ম্যানচেস্টারের প্রতিপক্ষ হোক জুভেন্টাস। কারণটাও পরিষ্কার। রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে জুভেন্টাসের বিপক্ষে যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জয় বেশি। ট্রেনে এক গ্রুপ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। আলোচনা হচ্ছিল এমন। এক বন্ধু বলছেন, আরে জুভেন্টাসই জিতবে। এবার যা দারুণ খেলছে দলটি। এমনিতেই দলটি মাত্র দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে (১৯৮৫ ও ১৯৯৬)। এবার তাদের জেতা উচিত। ২০১৫ সালেও দলটি ফাইনালে উঠে জিততে পারেনি। স্প্যানিশ আরেক ক্লাব বার্সিলোনার কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছে। এবার দলটির চ্যাম্পিয়ন হওয়া উচিত। আরেক বন্ধু এর সঙ্গে যোগ করেন, আসলেই জেতা উচিত। তাহলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে ওদের খেলা হবে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ওরাও ৫ বার জিতেছে। ম্যানচেস্টারও ৫ বার জিতেছে। ১২ বারের লড়াইয়ে দুইবার ড্র হয়েছে। এমনভাবে কথাগুলো বলছে, যেন পরিসংখ্যানগুলো সব মুখস্থ। পরে এর রহস্য বুঝতে পারলাম। সংবাদপথে পুরো বিস্তারিত দেয়া আছে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালের বহু রিপোর্ট। এর সঙ্গে আবার ম্যানচেস্টারের সঙ্গে যে খেলা হবে, তা নিয়েই নাড়াচাড়া এখন থেকেই চলছে। অথচ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে ম্যানচেস্টারের ম্যাচটি হবে আগস্টে। কিন্তু এখন থেকেই সব হিসেব চলছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষ হিসেবে জুভেন্টাসকেই চাচ্ছে বেশিরভাগ ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসবাসী। তবে অনেকে আবার রিয়াল মাদ্রিদকেও চায়। যদিও রিয়ালের সঙ্গে ১০ বারের লড়াইয়ে মাত্র ২ বার জিততে পেরেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। চারবার হেরেছে। চারবার ড্র করেছে। এরপরও রিয়ালকেই চায়। সবার ধারণা এ দুই দলের মধ্যে ২০১৩ সালের পর আর কোন ম্যাচ হয়নি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়েছে, তাও ২০০৩ সালে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়াটার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ ছিল সেটি। এরপর আর রিয়াল মাদ্রিদকে হারাতে পারেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ ম্যাচটি যে হয়েছে, ২০১৩ সালের ম্যাচটি হয়েছিল ওল্ড ট্রাফোর্ডে। তাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দুঃখ আছে। তারা প্রতিশোধও নিতে চায়। আর তাই রিয়াল মাদ্রিদকে অনেকেই চাচ্ছে। যদিও এবার ম্যাচটি হবে মেসিডোনিয়ায়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষ পেতেই চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে যাবে সবাই। এরআগে জুভেন্টাস ও রিয়াল মাদ্রিদ ১১বার মুখোমুখি হয়েছে। জুভেন্টাস ৬ বার জিতেছে। তিনবার হেরেছে। দুইবার ড্র হয়েছে। তার মানে জুভেন্টাসের পাল্লাই ভারি। ২০১৫ সালে দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ লড়াই হয়। জুভেন্টাস একবার জিতে। ্একবার ড্র করে। জুভেন্টাসই তাই ফেবারিট মনে হচ্ছে। এ ম্যাচটি দেখতে অনেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। কিভাবে যাবে। কবে যাবে। কোথায় থাকবে। সবকিছু নিয়ে মাথাব্যথা আছে। এমনকি ইটালি, স্প্যান থেকেও ঢালাওভাবে লোকজন আসছে। সবাই কার্ডিফে হানা দিচ্ছে। কার্ডিফে যাওয়ার আগে লন্ডনে ঘুরছে। দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, কে জুভেন্টাসের পক্ষে, কে রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে। কারণ, জার্সি পরা। এই ম্যাচ নিয়ে এত উন্মাদনা। অথচ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে ইংলিশদের মধ্যে তেমন মাথাব্যথাই নেই। শুধু ইংল্যান্ডের ম্যাচগুলো নিয়ে একটু ভাবনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্ট নিয়ে নয়। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ নিয়েই তাদের যত উন্মাদনা!
×