
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা তারকা হামজা চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে যোগদানের পর দর্শকদের মধ্যেও ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য
ফুটবল মাঠে লড়াই করে ২২ জন ফুটবলার। তাতে প্রাণ সঞ্চার করে দর্শকরা। দর্শকহীন মাঠে বিশ্বসেরা দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বড্ড পানসে লাগে। ২০২০-২১ মৌসুমে করোনা মহামারির সময় ফুটবল মাঠে বিধিনিষেধ ছিল দর্শক প্রবেশে। শূন্য গ্যালারি সাক্ষী রেখে ইউরোপের বড় লিগের খেলাগুলোকেও মনে হতো নিষ্প্রাণ।
খেলোয়াড়রা ঠিক যেন অনুপ্রাণিত হচ্ছিল না সমর্থকদের উন্মাদনার অভাবে। আয়োজকরা মাঠে চেষ্টা করেছে জায়ান্ট টিভি স্ক্রিনে দর্শকের উন্মাদনা আর কৃত্রিম শব্দের মাধ্যমে উত্তেজনার আবহ তৈরির। কিন্তু সেটা ছিল দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর ব্যর্থ চেষ্টা।
বাংলাদেশের ফুটবলে দর্শক ক্ষরার মহামারি চলছে যুগ ধরে। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর পেশাদার লিগ কিংবা টুর্নামেন্ট চলছে, দেশের মানুষ যেন জানেই না। কারও মাঠে গিয়ে খেলা দেখার উৎসাহ নেই। কে বলবে, এক সময় শুধু মোহামেডান আর আবাহনীর নামেই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত পুরো দেশ উত্তেজনায় কেঁপেছে। স্টেডিয়ামের গ্যালারি উপচে পড়ত দর্শকে। মিনি পর্দায় খেলা সম্প্রচার হলে শূন্য হয়ে যেত রাস্তাঘাট।
তাহলে কি বাংলাদেশের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ফুটবল থেকে? সেটাও না। এখনো রাত জেগে ইউরোপিয়ান লিগের খেলা দেখা দর্শকের অভাব নেই। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল নিয়ে উন্মাদনার খবর ফলাও করে প্রচার হয় বিশ্ব-মিডিয়ায়। আসলে আমাদের সমস্যা শুধু দেশীয় ফুটবল নিয়ে। এক সময় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে সমীহ জাগানিয়া শক্তি ছিল। মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানদের বলে কয়ে হারাতো।
ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার আর থাইল্যান্ডের মতো এশিয়ান মাঝারি শক্তির দেশকে হারানোর রেকর্ড রয়েছে আমাদের। অথচ সেই বাংলাদেশ এখন নেপাল কিংবা ভুটানের বিপক্ষেও হেরে বসে প্রায়শ। ফিফা র?্যাঙ্কিং ঘোরাফেরা করে ১৮০-১৯০ এর ঘরে। লাগাতার আন্তর্জাতিক ব্যর্থতায় কে আগ্রহ দেখাবে ফুটবল নিয়ে!
যে কোনো খেলাধুলায় দর্শক আগ্রহের অন্যতম শর্ত ‘আইকন’ খেলোয়াড়। লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর জন্য মুহূর্তে ইন্টার মিয়ামি আর আল-নাসরের মতো অখ্যাত দল পেয়ে যায় পৃথিবীর মনোযোগ। এক সময় বাংলাদেশেও সালাহউদ্দিন, মুন্না, আসলাম, কায়সার হামিদ আর সাব্বিরদের নামে দর্শকদের ঢল নেমেছে স্টেডিয়ামে। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশে তারকা ফুটবলারের বড্ড অভাব।
আশার কথা, সর্বশেষ দুই বছরে দেশীয় ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে দর্শকদের। ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর লেবাননের বিপক্ষে কিংস অ্যারেনার গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। কয়েকগুণ দামে কালোবাজারিতে টিকিট বিক্রি হয়েছে। অনেকেই টিকিট না পেয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকতে না পেরে আফসোস করেছেন। আসন না পেয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী ধরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে হয়েছে বহু দর্শককে। বহু বছর পর বাংলাদেশের ফুটবলে যেন প্রাণ ফিরেছিল।
লেবানন ম্যাচ বাদেও সম্প্রতি কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশের প্রতিটা ম্যাচে উপস্থিত ছিল প্রচুর দর্শক। এমনকি ২০২৪ সালের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারীদের ফাইনালে কমলাপুর স্টেডিয়াম ছিল দর্শকে পূর্ণ। ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর পত্রিকার হেডলাইনে পুনরায় জায়গা পাচ্ছে দেশের ফুটবলের সংবাদ।
আগামী ১০ জুন ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ আর সিঙ্গাপুর। ম্যাচটি ঘিরে ইতোমধ্যে ফুটবল ভক্তদের উত্তেজনা তুঙ্গে। যার কেন্দ্রে রয়েছেন হামজা চৌধুরী। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক হামজার লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হামজা জুনে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলবেন নিজ দেশের দর্শকদের সামনে।
দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো জাতীয় দলের ইতিহাসে হামজাই সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল ফুটবলার। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা হামজাতে খুঁজে পেয়েছে তাদের আজন্ম-লালিত ‘আইকন’। শেফিল্ড ইউনাইটেডের হামজাকে ঘিরে ফুটবল ভক্তরা স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশের ফুটবল অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে। যে আলামত কিছুটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের হয়ে খেলার আগ্রহ দেখিয়েছেন শমিত সোম।
ক্যানাডা জাতীয় দলের হয়ে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছেন শমিত। ক্যানাডা প্রিমিয়ার লিগের ক্যাভালরি এফসির খেলোয়াড় শমিতের জন্য বাংলাদেশী পাসপোর্ট আর ফিফার প্রয়োজনীয় অনুমতি পাওয়ার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। জুনেই বাংলাদেশ দলে খেলতে পারেন শমিত।
ইংল্যান্ডের সাদারল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলে খেলা কিউবা মিচেলকে বাংলাদেশ দলে খেলার প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাফুফে। এই নিয়ে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান জানান, প্রতিভাবান কিউবার বয়স মাত্র ১৯ বছর। জুম মিটিংয়ে সে মৌখিকভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে প্রস্তাব দিয়েছি। সে বাংলাদেশে এলে খুব ভালো হবে। লম্বা সময় বাংলাদেশ কিউবার সার্ভিস পাবে।
প্রবাসী ফুটবলারদের নিয়ে বাংলাদেশের সমর্থকদের আগ্রহ তুঙ্গে। মার্চে সৌদি আরবে অনুশীলন ক্যাম্পে থাকা ইতালি প্রবাসী তরুণ ফাহমিদুল ইসলাম বাদ পড়েন চূড়ান্ত স্কোয়াড, যা নিয়ে বেঁধে যায় তুলকালাম। সেই ফাহমিদুলকে বাংলাদেশের জার্সিতে দেখা যেতে পারে অচিরেই। জুনে ত্রিশের বেশি প্রবাসী ফুটবলারকে ট্রায়ালে ডাকছে বাফুফে।