
লন্ডনে গোলের পর সতীর্থদের সঙ্গে রাইসের উদ্যাপন
অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয়, চোখ ধাঁধানো কোনো বিশ্লেষণই যথেষ্ট নয় ডিক্লান রাইসের জন্য। ২৬ বছর বয়সী ইংল্যান্ডের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ফ্রিকিক থেকে অবিশ্বাস্য দুই গোলে ভর করে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২০০৯ সালের পর সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন বুনছে আর্সেনাল। মঙ্গলবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে আসরের বর্তমান ও রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে স্বাগতিক আর্সেনাল।
লন্ডনের বিখ্যাত এমিরেটস স্টেডিয়ামে ৬০১১০ দর্শকের সামনে ম্যাচের ৫৮ ও ৭০ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে মনোমুগ্ধকর দুই গোল করেন রাইস। এরপর ৭৫ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মিকেল মেরিনো তিন নম্বর গোল করে রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন। এই জয়ে সেমিফাইনালে খেলার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে আর্সেনাল। আসরে টিকে থাকতে হলে আগামী ১৬ এপ্রিল রাতে নিজেদের মাঠ সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে শেষ আটের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে অবিশ্বাস্য কিছুই করতে হবে রিয়ালকে।
এখন পর্যন্ত নিজেদের ইতিহাসে একবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিততে পারেনি আর্সেনাল। এবার রিয়ালকে উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নটা ডালপালা গজাতে শুরু করেছে। নিজেদের মাঠে ম্যাচের শুরু থেকেই অতিথি রিয়ালকে চেপে ধরেন গানার্স ফুটবলাররা। একের পর এক আক্রমণে গ্যালাক্টিকো গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে চেপে ধরেন রাইস, সাকা মার্টিনেল্লিরা।
কোর্তোয়া অবিশ্বাস্য দক্ষতায় একাধিক সেভ না করলে রিয়ালের লজ্জার মালাটা আরও বড় হতে পারত। প্রথমার্ধে গোল না পেলেও বিরতির পর ৫৮ মিনিটে লক্ষ্য পূরণ করে কোচ মিকেল আর্তেতার দল। এ সময় ডি বক্সের বাইরে ৩২ গজ দূর থেকে ফ্রিকিকে রিয়ালের চারজনের দেওয়াল ঘেঁষে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়িয়ে দেন রাইস। প্রথমে শটটি দেখে মনে হয়েছিল পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যাবে।
কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে বলটি অনেক বেঁকে রিয়ালের জালে প্রবেশ করে। ম্যাচের ৭০ মিনিটে প্রায় একই পজিশন থেকে আরেকটি ফ্রিকিক থেকে গোল করেন রাইস। দুইবারই রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়া বল ফেরানোর কোনো সুযোগ পাননি।
অথচ অবাক করা বিষয়, ক্যারিয়ারে এর আগে কখনই রাইস ফ্রিকিক থেকে গোল করতে পারেননি। কিন্তু একই ম্যাচে দুই গোল করে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন এবার। ম্যাচটি গ্যালারিতে বসে দেখেন ব্রাজিল ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক তারকা রবাতো কার্লোস। যাকে বলা হয়ে থাকে ফ্রিকিকের জনক। ফ্রিকিক থেকে অবিশ্বাস্য সব গোল আছে কার্লোসের। এর মধ্যে অন্যতম ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য বাঁকানো ফ্রিকিক থেকে গোল।
যে কারণে এই লেফট ব্যাক রাইসের গোল দু’টি দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত রাইস বলেন, এটা কিভাবে হলো আমি এখনো বুঝতে পারছি না। সবসময়ই আমার শট হয় ডিফেন্ডারদের দেওয়ালে লেগেছে, অথবা বারের ওপর দিয়ে গেছে। এবার আমি সামনে শুধুমাত্র দেওয়াল দেখেছি এবং এরপর গোলরক্ষকের পজিশন লক্ষ্য করেছি। এরপর শট নিয়েছি। প্রথম গোল হওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। দুটোতেই সফল হয়েছি। আমি সত্যিই খুব খুশি।
ওয়েস্টহ্যাম ও বর্তমানে আর্সেনালে খেলা রাইস পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই মূলত ডিফেন্সিফ মিডফিল্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সবসময়ই দলকে গোল করে সহযোগিতা করতে চাইতেন। গানার্স কোচ মিকেল আর্তেতা এক্ষেত্রে তাকে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছে। এ প্রসঙ্গে রাইস বলেন, এমনকি ওয়েস্টহ্যামেও সবাই আমাকে আরও বেশি শট নিতে বলত। আমার মধ্যেও প্রতি ম্যাচে গোল করার একটি মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে। আমার সেই যোগ্যতা ছিল। তবে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলাম না।