ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৫ চৈত্র ১৪৩১

সবার হৃদয় জয় করেছেন হামজা

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:১৪, ২৭ মার্চ ২০২৫

সবার হৃদয় জয় করেছেন হামজা

শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে হামজা চৌধুরী

তাকে নিয়ে প্রত্যাশাটা ছিল আকাশচুম্বী। ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। শরীরে ক্যারিবীয় রক্ত, কিন্তু হৃদয়ে বাংলাদেশ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার পর ইংলিশ চ্যাম্পিয়শিপ লিগে খেলা ডিফেন্সিভ এই ঝাঁকড়া চুলের ও ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলারের নাম হামজা চৌধুরী। মঙ্গলবার মেঘালয়ের শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হলো তার।

এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক ম্যাচেই নিজেকে প্রত্যাশিতভাবেই নিংড়ে দিয়েছেন তিনি। যেমনটা ভাবা হয়েছিল, ঠিক তেমনটাই খেলেছেন তিনি। পুরো ৯০ মিনিট তাকে কখনো দেখা গেছে মিডফিল্ড জেনারেলের ভূমিকায়, আবার কখনো রক্ষণভাগের অতন্দ্রপ্রহরী হিসেবে।

নিখুঁত পাসিং, কড়া ট্যাকেল, প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো, নিজ দলের গোলের সুযোগ তৈরি, রাইটব্যাকে, লেফটব্যাকে গিয়েও বল ট্যাকল করা, প্রতিপক্ষের উইং ব্লক করা, অভিষেক ম্যাচে নিজের জাত চেনানো, আবার তাদের বক্সেও ভয় ধরানো, অধিনায়ক না হয়েও সামনে থেকে নেতৃত্ব ... কী না করেছেন হামজা।
কিন্তু তারপরও হামজার সপ্রতিভ অভিষেকটাও রাঙাতে পারেনি তার বাংলাদেশ। একের পর এক গোলের সুযোগ নষ্ট করে ম্যাচটা তারা করেছে গোলশূন্য ড্র। অথচ ম্যাচটি থেকে বাংলাদেশ পুরো ৩ পয়েন্টই অর্জন করতে পারত। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ কোচ জাভিয়ের ক্যাবরেরা বলেন, ‘ ম্যাচে কোনো সময়ই ভারত আমাদের উপরে ছিল না।

প্রথমার্ধে আমরা গোলের সুযোগ মিস করেছি। না হলে আমরা ম্যাচটি জিততেও পারতাম। ভারত এই গ্রুপে (সি) শীর্ষ বাছাই দল। সেই দলের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে এক পয়েন্ট নেওয়াটা অবশ্যই আমাদের জন্য ইতিবাচক। আমরা এশিয়ান কাপে খেলতে চাই।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এশিয়ান কাপের মূলপর্বে একবারই খেলেছিল, ১৯৮০ সালে। আবারও এই আসরে খেলতে হলে বাংলাদেশকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। প্রতিটি দল একে অন্যের সঙ্গে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে খেলবে। ছয় ম্যাচে সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২০২৭ সালে সৌদি আরবে এশিয়ান কাপ খেলতে পারবে।
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল শিলংয়ে মাঠে বসে ম্যাচ দেখেছেন। স্টেডিয়ামে উপস্থিত বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কাছে তিনি বলেছেন, ‘আমরা সৌদি আরবে এশিয়ান কাপ খেলতে চাই। ভারতের বিপক্ষে এক পয়েন্ট আমাদের সেই যাত্রার অংশ। হামজাসহ গোটা দলই ভালো খেলেছে।’
হামজাকে নিয়ে বাংলাদেশের কোচ বলেন, ‘হামজা বড় মাপের খেলোয়াড় ও মানুষ। প্রথম ম্যাচেই সে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে।’ আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের সমস্যা গোল স্কোরিংয়ে। ঘরোয়া লিগে দারুণ সব গোল করেও এই ম্যাচে আল-আমিনকে না খেলানোর  ব্যাখ্যা দেন ক্যাবরেরাকে, ‘আল আমিন প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়।

আজ কম্বিনেশনের সঙ্গে সে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।’ ক্যাবরেরার এই মন্তব্যকে উদ্ভট মনে করছেন ফুটবলপ্রেমীরা। ফেসবুকে তারা নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। যার সারমর্ম হচ্ছে, ‘সৌদি আরব ও বাংলাদেশে দলের সঙ্গে এতদিন অনুশীলন করানোর পরও একটা খেলোয়াড় কিভাবে টিম কম্বিনেশনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না? না পারলে আল আমিনকে তাহলে কেন শিলং নিয়ে গেলেন ক্যাবরেরা?’
ভারত কোচ মানোলো মারকুয়েজ বলেছেন, ‘আমি শুধু হতাশ নই, প্রচ- ক্ষুব্ধও। সৌভাগ্য যে আমরা গোল খাইনি। এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছি। আমার কোচিং ক্যারিয়ারে এটাই সবচেয়ে কঠিন সংবাদ সম্মেলন। আমরা জঘন্য খেলেছি। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু জেতার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।’ খেলা শুরু হওয়ার ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই গোলরক্ষক বিশাল কেথের মারাত্মক ভুলে ভারত পিছিয়ে পড়তে পারত। বিশালের এ ভুল প্রসঙ্গে মানোলো বলেন, ‘এই বিষয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাই না।’
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকের অনুভূতি সম্পর্কে হামজা বলেন, ‘আমি খুবই গর্বিত। অনেক গর্বিত লাগছে।’ আন্তর্জাতিক ম্যাচ শুরুর আগে দেশের জাতীয় সংগীত বাজে। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সময় প্রতিক্রিয়া নিয়ে হামজা বলেন, ‘অনেক অসাধারণ লাগছে সেই সময়।’ হামজার অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশ এক পয়েন্ট পেয়েছে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে।

ম্যাচ নিয়ে হামজার পর্যবেক্ষণ, ‘প্রথমার্ধে খুব ভালো খেলেছিলাম আমরা। কলিগদের নিয়ে আমি খুব গর্বিত। তারা অনেক কঠোর পরিশ্রম করছে। আমরা সবাই গুড টিম স্পিরিট নিয়ে খেলেছি। আমরা জয় প্রাপ্য ছিলাম। ফুটবলে মিস হতেই পারে, ইপিএলেও মিস হয়। আমাদের এটা বাজে দিন ছিল।’ প্রথম ম্যাচের পর সমর্থকদের উদ্দেশে তার বক্তব্য, ‘পজিটিভ ভাইভ বজায় রাখতে হবে।’

×