
ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ সামনে রেখে অনুশীলনে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল
দুই দেশের মধ্যেই পড়েছে সুন্দরবন। এজন্যই বোধকরি উভয় দেশের জাতীয় ফুটবল দলেরই নিকনেমে ‘টাইগার্স’ শব্দটি আছে। পরিসংখ্যানের বিচারে দুই দলের মধ্যে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে আছে ভারত, যাদের ফিফা র্যাংকিং ১২৬, নিকনেম ‘দ্য ব্লু টাইগার্স’। তাদের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের ফিফা র্যাংকিং ১৮৫, নিকনেম ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স।’
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের গ্রুপ ম্যাচে আজ মেঘের রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী এবং ঠান্ডার শহর শিলংয়ে ফুটবলীয় লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে এই দুই দেশ। জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হবে ম্যাচটি। ম্যাচের আগের দিন সোমবার প্রি-ম্যাচ কনফারেন্সে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দলেরই কোচ-অধিনায়ক নিজ দলের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
হেড টু হেডে ভারতই বেশ এগিয়ে। ১৯৭৮-২০২১ সাল পর্যন্ত নানা টুর্নামেন্টে দু’দেশ মুখোমুখি হয়েছিল ৩১ বার। যার মধ্যে মাত্র তিনবার জিতেছে বাংলাদেশ। ১২টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। বাকি ১৬টিতে জিতেছে ভারত। তবে বাংলাদেশের তিন জয়ের মধ্যে দুটিই লাল-সবুজ বাহিনী জন্য চিত্তসুখের। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এই ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল বাধা কাটিয়ে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ।
পরে ফাইনালে মালদ্বীপকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফের শিরোপাও জিতে নেয় বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত সেটাই হয়ে আছে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য। তারও আগে ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসের ফুটবলে সেমিফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিদায় করে দেয় লাল-সবুজের দল। ওই আসরের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতে নেয় বাংলাদেশ। ১৯৯১ সালে কলম্বো সাফ গেমস আসরে গ্রুপ পর্বের খেলায় ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিদায় করে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ টগবগে আত্মবিশ^াস নিয়েই মাঠে নামবে। যার প্রধান কারণ হামজা চৌধুরী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে খেলা হামজা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের তথা এশিয়ান ফুটবলের অনেক বড় আকর্ষণ। এক হামজার কারণেই ভয় পেয়ে ভারত বাধ্য হয়ে অবসর থেকে ফিরিয়ে এনেছে তাদের কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রীকে। সুনীল অবসর নেওয়ার পরে ভারত এখন পর্যন্ত ১২ ম্যাচে জিততে পারেনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে মাতামাতি, উত্তেজনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দু’দেশের সমর্থকদের তর্কবিতর্ক আলাদা উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। ফুটবল এতদিন তার ধারেকাছেও ছিল না। কিন্তু আজকের এই ম্যাচকে ঘিরে দু’দেশের ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও নতুন একটা ধারা তৈরি হতে যাচ্ছে। ম্যাচটিকে ঘিরে উন্মাদনার পারদ দু’দেশেই ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্ব ফুটবলে নিচের সারির দু’টি জাতীয় দলের ম্যাচকে ঘিরে আপাতদৃষ্টিতে তেমন কোন হইচই হওয়ার কারণই ছিল না, অথচ হচ্ছে।
যার কিছু কারণ হামজা ও সুনীল। তবে তারকাদ্যুতিতে আলোকিত হলেও বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার অভাব থেকেই গেল। কারণ সৌদি আরবের তায়েফে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করলেও কোন প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারেননি জামাল ভূঁইয়ারা। সুদানের বিপক্ষে খেলার কথা থাকলেও তারা রাজি হয়নি।
তাই সৌদি আরবের একটি ক্লাবের সঙ্গে খেলে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়েছে স্প্যানিশ কোচ জাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যদের। যদিও ভারত নিজ দেশে মালদ্বীপকে ডেকে এনে ৩-০ গোলের দুর্দান্ত একটি প্রস্তুতমূলক জয়ী ম্যাচ খেলেছে। যেখানে সুনীল ছেত্রীর ছিল এক গোল।
কিন্তু এই ম্যাচের আগে যে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে, তা হলো বাংলাদেশের প্রতি ভারতের চরম অসহযোগিতামূলক আচরণ। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে শিলং পৌঁছান জামাল-হামজারা। অভিযোগ উঠেছে, শিলংয়ে এসে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের। কেননা হোটেল, মাঠ, অনুশীলন সব কিছুতেই অনিয়ম, ঝামেলা, সমস্যা। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই স্বাগতিকদের পক্ষ থেকে চরমভাবে অসহযোগিতা করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষ করে অনুশীলন মাঠ নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে বাংলাদেশ দলের কোচ জাভিয়ের ক্যাবরেরার মধ্যে। ম্যাচ ভেন্যুতে অনুশীলনের অনুমতি না পাওয়া, বিকল্প ভেন্যুর মান চাম খারাপ, অনুশীলনের সময় বিনা নোটিসে ফ্লাডলাইট বন্ধ করে দেওয়া, ফলে বাধ্য হয়ে নরমাল লাইটের মধ্যে অনুশীলন করা এবং মাঠ ভাড়া করে অনুশীলন করা এ রকম গুরুতর অনিয়ম ও ভোগান্তির শিকার হয়েছে বাংলাদেশ দল।