
আগামীকাল শিলংয়ে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ
একটি ফুটবল দলের অনুশীলন চলছে। তখন রাত। অনুশীলন চলাকালে হঠাৎ করেই কোনো জানান না দিয়েই বন্ধ হয়ে গেল স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট! আর কোনো উপায় না দেখে পরে সেই দলের ফুটবলারদের মাঠের একপাশে সরে গিয়ে নরমাল লাইটের আলোয় অনুশীলন করতে হলো। এ যেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ঘরে হারিকেনের তেল না থাকায় রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোর নিচে দাঁড়িয়ে লেখাপড়া করার মতোই।
যে দল এমন বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে, তারা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের গ্রুপ ম্যাচ খেলতে তারা এখন ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে। ২৫ মার্চ স্বাগতিক ভারতকে মোকাবিলা করবে তারা। ভেন্যু জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম। কিন্তু তার আগে অতিথি দলকে ‘অসাধারণ’ আতিথ্য দিয়ে ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন! এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত লাল-সবুজ বাহিনী।
বাংলাদেশ দলে অভিষেক হতে যাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল শেফিল্ড ইউনাইটেডের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর। যাকে নিয়ে ফুটবলবিশ্বে চলছে তুমুল আলোড়ন। হামজার কারণে ভারত ‘ভয়’ পেয়ে অবসর থেকে ফিরিয়ে এনেছে তাদের কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রীকে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে শিলং পৌঁছান জামাল-হামজারা।
তবে অভিযোগ উঠেছে, শিলংয়ে এসে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের। কেননা হোটেল, মাঠ, অনুশীলন ... সব কিছুতেই অনিয়ম, ঝামেলা, সমস্যা। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই স্বাগতিকদের পক্ষ থেকে চরমভাবে অসহযোগিতা করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে অনুশীলন মাঠ নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে বাংলাদেশ দলের কোচ জাভিয়ের ক্যাবরেরার মধ্যে।
ফুটবলারদের খেলার মান যদি উন্নত করতে হয়, তাহলে সবার আগে প্রয়োজন একটি ভালোমানের মাঠ। অথচ বিস্ময়কর হলেও সত্য তেমন মাঠই এখন পর্যন্ত পায়নি ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ দল। বাংলাদেশ দলের স্প্যানিশ কোচ ক্যাবরেরার চাওয়া ছিল ম্যাচ ভেন্যুতে গিয়ে দলকে সুন্দর-নিবিড়ভাবে অনুশীলন করাতে। কিন্তু সেখানে অনুশীলনের অনুমতি পায়নি বাংলাদেশ দল।
নিয়ম মোতাবেক নেহরু স্টেডিয়ামে অনুশীলনের অনুমতি পাওয়া যাবে ম্যাচের আগের দিন। ফলে বাংলাদেশ দলকে অনুশীলনে পাঠানো হয় শহরের নর্থ ইস্টার্ন হিলস বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে। মাঠটি একেবারেই নি¤œমানের ও জঘন্য। অসমতল, এবড়োথেবড়ো। এমন মাঠে অনুশীলন করতে হয়েছে বলে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছে ক্যাবরেরা।
শনিবার অবশ্য নেহরু স্টেডিয়ামেই অনুশীলন করেছে। যদিও সেটা মূল স্টেডিয়ামে নয়, গ্রাউন্ড-টু টার্ফ মাঠে। বাংলাদেশ দল যখন বাইরে অনুশীলন করছিল, ভারতীয়রা তখন অনুশীলন করল ম্যাচের মূল ভেন্যুতেই। যদিও স্বাগতিক হিসেবে এ সুবিধা তারা পেতেই পারে; কিন্তু প্রতিপক্ষের জন্য ভালো অনুশীলন মাঠের ব্যবস্থা করাটা নিয়ম। কিন্তু সেই নিয়মের ধার ধারেনি তারা।
এ নিয়ে দারুণ ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার আমের খান, আমাদের ভালো মাঠ দেওয়া হচ্ছে না। প্রথমদিন অনুশীলনের সময় ছিল বিকেল সাড়ে পাঁচটা। কিন্তু তারা তখনো মাঠ দেয়নি। এখন সাড়ে সাতটায় যুদ্ধ করে নিতে হয়েছে মাঠ। তা-ও টাকা দিতে হবে।
নিয়ম অনুসারে ম্যাচের একদিন আগে, তথা কাল থেকে সুযোগ-সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এ কারণে আয়োজকরা বাংলাদেশ দলকে বলেছে, মাঠ আর নেই তাদের। সেই ভার্সিটি মাঠে বাংলাদেশের অনুশীলন দেওয়া হয়। আমের খান বলেন, কিন্তু ওই মাঠ ভালো নয়। ভার্সিটির মাঠে আমরা যাব না। ওখানে ফ্লাডলাইট নেই।
এসব দেখে চরম বিরক্ত বাংলাদেশ ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিনও, এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার। অনুশীলন ছিল সাড়ে পাঁচটায়। সেটি হচ্ছে সাড়ে সাতটায়। আমাদের জন্য এতে সমস্যা হচ্ছে। ঘাসের মাঠে অনুশীলন করতে পারলে ভালো হতো।
হামজা দলের সঙ্গে খুব বেশি অনুশীলন করতে পারেননি। ফলে তার সঙ্গে জামালদের মানিয়ে নেওয়ার ঘাটতিটা থাকছেই। তবে দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে অল্প সময়েই হামজা সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, এটাই দলের জন্য যা একটু স্বস্তির সমাচার।