বৃহস্পতিবার বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়েরা
‘বাংলার বাঘিনী’ খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের এই মুহূর্তে কোনো খেলা নেই। তারপরও তারা (দলের কয়েকজন সিনিয়র ফুটবলার) ব্যাপকভাবে আলোচনায় আছে। সেটা নেতিবাচক কারণে। হেড কোচের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তার অধীনে খেলতে না চাওয়া, বেতনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চুক্তি নবায়ন না হওয়া, সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাফুফে থেকে দেড় কোটি টাকা বোনাস না পাওয়া, আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ম্যাচ ফি না পাওয়া, বিদেশী লিগে খেলার প্রস্তাব পেলেও দুই খেলোয়াড়কে খেলার অনুমতি না দেওয়া... এসব ইস্যুতে বুধবার সাবিনা, কৃষ্ণা, সানজিদা, মাসুরা, মারিয়া, মনিকা, ঋতুপর্ণা, রূপনাসহ মোট ১৮ সিনিয়র ফুটবলার ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেন।
বিদ্রোহ বলতে দলের হেড কোচ ব্রিটেনের পিটার বাটলার দীর্ঘ ৫০ দিন ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর তার অধীনে অনুশীলন করতে অস্বীকৃতি জানানো এবং কোচের আহ্বানে কোন মিটিংয়ে হাজির না হওয়া। বৃহস্পতিবার আগুনে আরও ঘি পড়েছে। বাফুফে ভবনের নিচতলায় এসে গণমাধ্যমের সামনে এক অ-আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসে কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে ‘গালিগালাজ করা’, ‘বডি শেমিং’, ‘মানসিক নির্যাতন’-এর মতো বেশকিছু গুরুতর অভিযোগ পেশ করেছেন সাবিনা-মনিকা-মারিয়ারা।
সংবাদ সম্মেলনে ‘নারী জাতীয় ফুটবল দলের হেড কোচ পিটার বাটলার ইস্যু নিয়ে আমাদের অবস্থান, প্রশ্ন এবং যত অভিযোগ’-এই শিরোনামে তিন পাতার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বাটরারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে মেয়েরা।
বাফুফে ভবনে কান্না জর্জরিত কণ্ঠে জাতীয় নারী দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, ‘এখানে একটা জিনিসই বলার, নিজেদের আর কিছু প্রমাণের নেই। ব্যাপারটা আত্মসম্মানের। দিনশেষে মেয়েরা দেশের জন্য খেলে। কিন্তু দেশের মানুষ মেয়েদের যেভাবে কটূক্তি করছে এটা মেয়েদের জন্য নেওয়াটা অসম্ভব।’
মাসুরা পারভীন বলেন, ‘আমরা তো একবারও বলিনি যে আমরা অনুশীলন করব না। আমরা কোন কর্মকতা বা কিরণ আপাকেও একবারও বলিনি যে অনুশীলন করব না। আমরা বলেছি বাটলারের অধীনে অনুশীলন করব না। আমাদের যে কোচ ছিলেন (লিটু স্যার) ওনার কথাতে আমরা অনুশীলন করছিলাম। আমরা কিরণ আপাকে (বাফুফের সদস্য ও নারী ফুটবল উইংয়ের চেয়ারপারসন মাহফুজা আক্তার কিরণ) বলেছিলাম যে উনি যেহেতু বিদেশ থেকে এসেছেন তো আপাতত একটু বিশ্রামে থাক, আমরা লিটু স্যারের অধীনে অনুশীলন করতে চাই।’
সবশেষ সাবিনারা জানিয়েছেন বাটলার কোচ থাকলে তারা ‘গণপদত্যাগ’ করবেন! গত বছরের শেষদিকে বাটলারের সঙ্গে আরও দুই বছরের চুক্তি করে বাফুফে। তাতে ক্ষুব্ধ হন সিনিয়র ফুটবলাররা। কেননা সাফ চলাকালীন তাদের সঙ্গে ইংলিশ এই কোচের দ্বন্দ্বের কথা প্রকাশ পেয়েছিল। ফলে বাটলারকেই যদি কোচ হিসেবে রাখা হয় তাহলে অবসরের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এদিকে সাবিনাদের বিরুদ্ধে বাফুফে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। জানিয়েছে, খেললে বাটলারের অধীনেই খেলতে হবে।
মেয়েদের এই কার্যকলাপকে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি দেখছে শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে। কিন্তু সাবিনারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। তারা জানিয়েছেন, বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল দেশে ফিরলে (ইংল্যান্ড থেকে) তার সঙ্গে বসবেন। যদি এই কোচকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তই বহাল থাকে, তবে জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাবেন তারা। চুক্তি, বেতন, বোনাসসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে বাফুফে মেয়েদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলেও কোচের বিষয়ে কোনো কথা শুনতে নারাজ তারা।
এর আগেও সাবিনারা বিদ্রোহ করেছিলেন (২০২৩ সালের জুলাইয়ে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে অনুশীলন বয়কট)। অথচ আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে দুটি ম্যাচ খেলতে যাওয়ার কথা রয়েছে সুমাইয়া-তহুরা-শামসুন্নাহারদের। এই দুটি ম্যাচ ও জুনের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে জাতীয় নারী দলের ক্যাম্প শুরু হয়েছে। এতদিন সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটুর অধীনেই ঠিকঠাক অনুশীলন হচ্ছিল। কিন্তু ঝামেলা বাধে বাটলার ছুটি থেকে ফিরে আসার পর।
এদিকে পরিস্থিতি দেখে হতভম্ব ও বিরক্ত হয়ে পড়েছেন বাটলার। ভাবতেই পারেননি এমন পরিস্থিতেতে পড়তে হবে তাকে। এদিকে আপাতত মাঠ-সংকটের কারণে মাঠের অনুশীলন নেই মেয়েদের। কমলাপুর স্টেডিয়ামে নতুন টার্ফ বসানোর কাজ চলেছে। বাটলার আসার আগে বুয়েট মাঠে দু-একদিন অনুশীলন হয়েছে। কিন্তু বুয়েট মাঠ শক্ত। বিকল্প হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে চান বাটলার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুশীলনের চেষ্টা করছে বাফুফে।